‘টেস্টে আপনি যত ডিফেন্সিভ থাকবেন, তত মরবেন’
বাংলাদেশের হয়ে কেবল একটাই সংস্করণ খেলেন মুমিনুল হক। এজন্য তার নামের আগে জুড়ে আছে 'টেস্ট ক্রিকেটারের' তকমাও। গত বছর টানা রান খরায় সেই সংস্করণ থেকেও বিলিন হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে সিরিজ তাকে উদ্ধার করে খাদের কিনার থেকে। বাঁহাতি এই ব্যাটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জমিনে পা শক্ত করতে ভাবনায় এনেছেন কিছুটা বদল। এখন তার মনে হচ্ছে টেস্টের নতুন সুর হচ্ছে আগ্রাসী ক্রিকেট। সেই সুর ধরেই মেলাতে হবে তাল।
২০২২ সালের শুরুতে মাউন্ট মাঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জেতার পর থেকে টানা রান খরায় ছিলেন মুমিনুল। গত বছর শেষ দিকে ভারতের বিপক্ষে ফিফটির আগে ১২ ইনিংসে পাননি ফিফটির দেখা, ১০ বারই আউট হয়েছেন সিঙ্গেল ডিজিটে। জায়গা হারান একাদশ থেকেও।
ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে দলের সমন্বয়ের কারণে একাদশে ফিরে খেলেন ৮৪ রানের দারুণ ইনিংস। যা তাকে ডুবন্ত অবস্থা থেকে ফের টেনে তুলে। রান খরার সময়টায় কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও পরিবারের মানুষের সমর্থন পেয়েছেন। ভারতীয় কোচ ওয়াসিম জাফরের সঙ্গেও কাজ করেছেন। সব মিলিয়ে এখন আগের চেয়ে নিজেকে দেখছেন সতেজ।
দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে জানালেন টেস্টের বদলে যাওয়া ছবি তাকে নতুনভাবে ইতিবাচক খেলার উৎসাহ দিচ্ছে, 'কন্ডিশন যদি ভালো থাকে, আপনি ১০০ ওভারে ৪০০–ও করতে পারেন। এখন যদি খেলা ভারত বা অন্য কোন বড় দলের সঙ্গে হয়, তাহলে ভিন্ন অ্যাপ্রোচে খেলতে হবে। কন্ডিশন যদি ভালো থাকে, যেখানে আপনি এক দিনেই ৪০০ করতে পারবেন, তাহলে আপনি কেন করবেন না? উইকেট পড়ুক না, ৫টা উইকেট পড়ুক।'
'যদি সুযোগ থাকে তাহলে একদিনে কেন ৪০০ রান করবেন না? পরের দিন এক সেশনে ব্যাট করে আপনি সাড়ে পাঁচশো করতে পারেন। টেস্ট ক্রিকেট প্রতিদিনই নতুন জায়গায় যাচ্ছে। নতুন প্রত্যাশা তৈরি হচ্ছে।'
মুমিনুলের মতে সামনের দিনে টেস্টে স্কোরিং শটের সংখ্যা আরও বাড়বে। আগে যা দেখা যেত না সেসবের দেখাও মিলবে, 'টেস্টের ড্রিংকস ওভার, লাঞ্চ ওভারে সব ফিল্ডার ওপরে আনা হয়। কারণ ব্যাটসম্যানের মানসিকতাই থাকে উইকেট না হারিয়ে বিরতিতে যাওয়ার। সামনে দেখবেন, ফিল্ডার ওপরে এলে মাথার ওপর দিয়ে ছয় মেরে দিচ্ছে ব্যাটসম্যানরা। মিড অফ, মিড অন ওপরে, স্পিনার বল করছে, একটা সুযোগ নিই। দিন শেষে এটা রানের খেলা। হ্যাঁ, এভাবে খেলতে গেলে শুরুর দিকে হয়তো সফল হবেন না। কিন্তু আলটিমেটলি সফল হবেন।'
টেস্টে সাফল্যের পেছনে আড়ষ্ট বা কুঁকড়ে না থেকে চনমনে থাকার পক্ষে সাবেক অধিনায়ক, 'আপনি যত ডিফেন্সিভ থাকবেন, তত মরবেন। শুধু টিকে থাকার চিন্তা করলেই মরবেন। যুদ্ধ বলেন আর জীবন বলেন, কোনোমতে সারভাইভ করার কোনো জায়গা নেই পৃথিবীতে। আপনি যদি ডমিনেট করতে চান, প্রথমে বিপদে পড়লেও পরে সফল হবেন।'
৫৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৩ হাজার ৬৫৫ রান করেছেন মুমিনুল ৩৭.৬৮ গড়ে। তার স্ট্রাইকরেট ৫৩.৩৯। তার কথায় আভাস স্ট্রাইকরেটের জায়গায় হয়ত দ্রুতই আসবে বদল, 'বেশি ডিফেন্সিভ খেললে আমার জন্য কঠিন। আপনি যদি ৩০০ বল খেলে ১০০ করেন, তাহলে বুঝতে হবে উইকেট ভালো। কারণ আপনি ৩০০ বল খেলেছেন। ৩০০ বল খেললে আপনাকে কমপক্ষে ২০০ মারতে হবে। সুযোগ থাকলে আপনি এক দিনে ৪০০ করেন। পাঁচ দিনের খেলা চার দিনে শেষ করে দেন।'
Comments