ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক হলে করণীয়

ফেসবুকের লোগো। প্রতিকী ছবি: রয়টার্স
ফেসবুকের লোগো। প্রতিকী ছবি: রয়টার্স

নিজের ব্যক্তি জীবনের অনেক তথ্যই আমরা ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে পরিচিতজনদের জানাই। মেসেঞ্জারে কথোপকথনও আমাদের নিত্যদিনের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত বেশি তথ্য আমরা ফেসবুকে প্রকাশ করছি, তত বেশি যেন ঝুঁকিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের গোপনীয়তা। আর এ ঝুঁকির অন্যতম নাম– ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক হওয়া।

কারো ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক হলে কীভাবে বোঝা যাবে এবং এর সম্ভাব্য সমাধান নিয়েই আজকের এ লেখা।

তথ্যের পরিবর্তন

ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতে প্রোফাইল নাম, ছবি, জন্মদিন বা পাসওয়ার্ড ইত্যাদি সব মৌলিক তথ্যের পরিবর্তন হলে ফেসবুক হ্যাক হবার আশঙ্কা করা যায়। এছাড়াও সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড যেমন বন্ধুতালিকার কাউকে সাহায্য চেয়ে ম্যাসেজ বা বিভিন্ন স্প্যাম লিংক পাঠানো, পোস্ট দেওয়া– ইত্যাদি ঘটলে আইডির মূল মালিক যদি কিছুই না জানেন এবং পরিচিত কারো কাছেও তথ্য না থাকে, তবে এমন অবস্থায় ফেসবুক হ্যাক হয়েছে বলে ধরে নিয়ে সেই অনুযায়ী সতর্ক থাকা ভালো।

প্রোফাইল লগ ইন

সেটিংসে গিয়ে 'সিকিউরিটি অ্যান্ড লগইন' অপশনে ক্লিক করলে দেখা যাবে, নির্দিষ্ট প্রোফাইলটি কোন কোন ডিভাইসে লগ ইন করা রয়েছে। এসব ডিভাইসের মধ্যে সন্দেহজনক, অচেনা কোনো ডিভাইস বা মডেলের নাম থেকে থাকলে শিগগির পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা দরকার। শুধু তাই নয়, ফেসবুকের সঙ্গে সংযুক্ত ইমেইল অ্যাড্রেসটিরও পাসওয়ার্ড বদলে নিতে হবে। কেননা এমনটাও হতে পারে, হ্যাকার হয়তো ইমেইল আইডির পাসওয়ার্ড জেনে গেছে।

ফেসবুক পেমেন্ট

ফেসবুক নিজেও এখন একটি কেনাবেচার প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেসবুকে পণ্য ক্রয়ের জন্য বাংলাদেশ থেকে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড, মাস্টারকার্ড, পেপ্যাল ইত্যাদি মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করা যায়। এমন কারো প্রোফাইল যদি হ্যাক হয়, যিনি ফেসবুকে সরাসরি কেনাকাটা করে থাকেন– তবে তার পেমেন্ট তালিকা যাচাই করা একটি ভালো উপায়। এমনও হতে পারে, হ্যাকার সেই প্রোফাইল থেকে কিছু কেনার উদ্দেশ্যে হ্যাক করেছে। সেক্ষেত্রে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেটিং ও প্রাইভেসিতে গিয়ে 'অর্ডার অ্যান্ড পেমেন্টস' অংশে নিজের ক্রয়তালিকা দেখে নিতে পারেন। এমনকি এই প্রোফাইল থেকে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন কেনা হয়েছে কি না, সেটিও দেখা সম্ভব। সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড ধরা পড়লে ফেসবুক সাপোর্ট দলের কাছে সাহায্য চেয়ে প্রতারণার অভিযোগ করা উচিত। ফেসবুকে সরাসরি ম্যাসেজ প্রদানের পাশাপাশি তাদের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টেও যোগাযোগ করা যাবে।

বাড়তি সতর্কতা

প্রোফাইল হ্যাক হবার পর হ্যাকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই তা বোঝা যায়। কিন্তু সব হ্যাকারের উদ্দেশ্য এক নাও হতে পারে। কেউ হয়তো শুধু নজর রাখার জন্যই হ্যাক করে। সেক্ষেত্রে কিন্তু তিনি তার উপস্থিতির জানান দিতে সাধারণ হ্যাকারদের মতো ম্যাসেজ আদান-প্রদান, পোস্ট দেওয়ার মতো বোকামি করবে না; বরং প্রোফাইলে ঘাপটি মেরে বসে থাকবে– মূল ব্যবহারকারীর গতিবিধি, কথাবার্তায় নজরদারি করার জন্য। তাই আইডি হ্যাক হোক না হোক, এ বিষয়ে সবসময় সতর্ক থাকা উচিত এবং এজন্য সবসময় 'টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন' চালু করে নেওয়া ভালো। এতে করে ব্যবহারকারী যে ফোন নম্বর প্রোফাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করে রেখেছেন, প্রতিবার লগ ইন করার সময় সেটিতে ওটিপি বা ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড আসবে। এই পাসওয়ার্ড প্রবেশ না করিয়ে লগ ইন করা যাবে না।

এছাড়াও ফেসবুক ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করলে এমন দুরবস্থার শিকার না হবার সম্ভাবনাই বেশি। যেকোনো লিংকে ক্লিক করার আগে এর যথার্থতা সম্পর্কে সচেতন থাকা, ক্লিকবেইট শিরোনাম দেখলেই প্রবেশ না করা, চটকদার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের 'টেস্ট'-এ অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি চর্চার মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার অনেকটাই নিরাপদ হতে পারে।

পাসওয়ার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রেও যথাযথ সতর্ক থাকতে জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, এমন কিছু নয় যা কেউ চাইলেই অনুমান করে নিতে পারে। জন্মদিন, প্রিয় কারো নাম ইত্যাদি বিষয় পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার না করাই ভালো। কেননা এগুলো খুব সহজেই অনুমান করা যায়।

এসব সতর্কতার বাইরেও খেয়াল রাখতে হবে, ফেসবুক একটি ভার্চুয়াল বাস্তবতা। এখানে এমন অতি সংবেদনশীল কোনো তথ্য না ব্যবহার করাই ভালো। সর্বোপরি সাবধানে থাকুন– সাইবার স্পেস হোক নিরাপদ, তথ্য থাকুক সুরক্ষিত।

  

Comments