বিয়ে করবেন, নাকি করবেন না

প্রতীকী ছবি

বলিউডের অনেক সিনেমাতেই হিন্দিতে একটি প্রবাদবাক্য শোনা যায়- 'শাদি কা লাড্ডু, যো খায়ে ও ভি পাস্তায়ে, যো না খায়ে– ও ভি'। মানে বিয়ের লাড্ডু খেলেও আফসোস করতে হবে, না খেলেও। আসলে মানুষের ব্যক্তিত্ব ও চাহিদা-ভেদে জীবনের অন্য সব সিদ্ধান্তের মতো বিয়ে করা, না করাটাও নির্ভর করে। তাই এই লাড্ডু, মানে বিয়েকে একটি মুদ্রা ধরে নিয়ে এর দুই পিঠের যুক্তিগুলোই দেখে নেওয়া যাক এ লেখায়। 

বিয়ে করার কারণ 

বিয়ে নামক সামাজিক এই বন্ধনটির ভিত্তিতেই আছে পরিবার গঠনের মন্ত্র। যে ব্যক্তি পারিবারিক পরিবেশে থাকতে পছন্দ করেন, সন্তান-সন্ততি নিয়ে একটি তথাকথিত গোছানো পারিবারিক আবহে থাকার ইচ্ছে আছে– তাদের জন্য জীবনযাপনের জন্য বেশ কার্যকর একটি পদক্ষেপ হচ্ছে বিয়ে। সঠিক সঙ্গী নির্বাচনের পর যদি তার সঙ্গে এক ছাদের নিচে থাকতে উৎসাহ বোধ হয় এবং সেইসঙ্গে সমাজের রীতিনীতি অনুযায়ী স্বীকৃত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে, তাহলেই লোকে বিয়ে করে। সন্তান-সন্ততি বিয়ে ছাড়া লালন-পালন করা গেলেও একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে থাকার জন্য বিয়েকে সবচেয়ে সাধারণ বিকল্প ধরে নেওয়া হয়। 

মানুষে মানুষে প্রেম-ভালোবাসার চর্চা যেকোনোভাবেই করা সম্ভব। তবে বিয়ে করার ফলে এর মাধ্যমে একটা স্বীকৃতি তৈরি হয়, আশপাশের মানুষের কাছে অপেক্ষাকৃত বেশি গ্রহণযোগ্যতা আসে। যেহেতু আমাদের সমাজে এখনো বিয়ে ও পরিবারের ধারণাকে বেশ সমাদর করা হয়, সেজন্য অনেকেই ভাবেন প্রণয়ের চূড়ান্ত গন্তব্য হচ্ছে 'পরিণয়', তথা বিয়ে। আবার অনেক সময় ভালোবাসা-বাসির চাহিদাকেও অতিক্রম করে যায় বিয়ে করার চর্চা, কেননা আমাদের মধ্যে প্রচলিত ধারণায় 'একটা বয়স'-এর পর বিয়ে করে নিজেদের প্রাপ্তবয়স্কতার পরিচয় দিতে হয়। 

এ ছাড়াও, নিরাপত্তাবোধের জন্যও মানুষ বিয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়। যদিও বিবাহ বিচ্ছেদের হার কম নয়, তবু বিয়ে করলে সম্পর্কগত অনিশ্চয়তা থেকে অনেকটা মুক্তি মিলবে– এ ভাবনাও বিয়ে করার একটি কারণ হতে পারে। এসব কারণ অনুযায়ী কারও ব্যাটে-বলে মিলে গেলে বিয়ে করাই যায়। 

বিয়ে না করার কারণ 

মজার বিষয় হচ্ছে, বিয়ে করার জন্য যতগুলো কারণ পাওয়া যাবে, ঠিক ততগুলো কারণই খুঁজে বের করা সম্ভব বিয়ে না করার পেছনে। বিষয়টা নির্ভর করছে, ব্যক্তি আসলে কী চান– তার ওপর। 

এমন নয় যে- বিবাহিত লোকেরা স্বাধীন নন, কিন্তু ব্যক্তি স্বাধীনতার চূড়ান্ত চর্চা বোধহয় বিয়ের পর করাটা হয়ে ওঠে না। অনেকটা ডানা থাকলেও ওড়ার অভ্যাস চলে যাওয়ার মতো। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে- বিয়ের পর যেকোনো সিদ্ধান্তেই সঙ্গীর পছন্দ-অপছন্দ, সুবিধা-সমস্যা ইত্যাদিকে প্রাধান্য দিতে হয়, যার ফলে বিয়ের আগের অথবা একা থাকার সময়ের মতো স্বাধীনতা পাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। অবশ্যই পছন্দ মিলে গেলে একসঙ্গে ভালো সময় কাটানোর একটা সুযোগ থাকে কিংবা কিছুটা সমঝোতা করে নিতে হয়। কিন্তু ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব হওয়াকে সবসময়ই বিয়ে না করার একটি অন্যতম কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। 

বিবাহপূর্ব কোনো সম্পর্ক চলাকালেই বোঝা যায়, দুজন সঙ্গীর মধ্যে কতটা সঙ্গতি রয়েছে– কতটা তারা একে অন্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারেন। যদি অসঙ্গতির পরিমাণ বেশি থাকে এবং শান্তির চেয়ে অশান্তিই বেশি মনে হয়, তবে সম্পর্ককে আরও এক ধাপ এগিয়ে বিয়েতে না নিয়ে যাওয়াই ভালো। অনেকে ভাবেন 'বিয়ে করলে সব ঠিক হয়ে যাবে', যদিও বাস্তবে সবসময় এমনটা নাও হতে পারে। ঝুঁকি থেকেই যায়। 

এ ছাড়া, নিজেদের চাহিদার বাইরে গিয়ে সমাজ বা পরিবারের চাপে পড়ে বিয়ে করার ধারণাটা খুব একটা সুস্থ চর্চা নয়, যদিও এ চর্চাই আমাদের আশপাশে হরহামেশা দেখা যাচ্ছে। মানুষের জীবন তার নিজের, জীবনে গড়ে তোলা সম্পর্কগুলোও কেবল তার নিজের ইচ্ছে ও চাহিদার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। 'লোকে কী বলবে' গোছের অহেতুক পিছুটান বোধ করে অন্তত বিয়ে করা উচিত না। 

বিয়ে করা হোক বা না হোক, সিদ্ধান্তটা যাতে অন্য কারও চাপে পড়ে, কোনো আরোপিত মাপকাঠিতে পড়ে না নেওয়া হয়। কারও সঙ্গে থাকার অঙ্গীকারটা নিজের মন থেকে আসুক। বিয়ে নামে জীবনের অন্যতম এই সিদ্ধান্তটি মেনে নিয়ে নয়, মন থেকে নেওয়া হোক। একা কিংবা দোকলা জীবন, বিয়ের ফুল ফুটুক অথবা না ফুটুক– অন্তত নিজের ইচ্ছামতো বাঁচা হোক। 

তথ্যসূত্র: ফোকাস অন দ্য ফ্যামিলি ডট কম ও সাইকোলজি টুডে ডট কম।

 

Comments

The Daily Star  | English

Will protect investments of new entrepreneurs: Yunus

Yunus held a meeting with young entrepreneurs at the state guest house Jamuna where15 male and female entrepreneurs participated

4h ago