‘শোবিজ থেকে সরে যেতে চেয়েছিলাম, তারকা জীবন চাইনি’

মাহফুজ আহমেদ
মাহফুজ আহমেদ। ছবি: শেখ মেহেদী মোরশেদ/স্টার

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ অনেক বছর পর প্রহেলিকা সিনেমা দিয়ে ফিরছেন প্রেক্ষাগৃহে। 

নব্বই দশকের অন্যতম জনপ্রিয় এই অভিনেতা এখনো দর্শকদের হৃদয়ে দাগ কেটে আছেন অসংখ্য নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে।

নাটকের তুলনায় সিনেমায় কম এলেও, প্রশংসিত হয়েছেন সর্বত্র। অভিনয় থেকে দূরে সরে থাকার কারণ, নতুন সিনেমাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মাহফুজ আহমেদ কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

বিরতি দিয়ে ফেরার পর কেমন লাগছে?

প্রথমেই নিজের কাছে প্রশ্ন ছিল কী দিয়ে ফিরছি। এতদিন দর্শক আমাকে দেখেনি, তা যেন ভুলে যায়। একটি ভালো গল্প, ভালো চরিত্রের অপেক্ষা করছিলাম। মানুষ দেখে যেন বুঝতে পারে কেন এতদিন অপেক্ষা করেছি।

মনে মনে চেয়েছি, এমন প্রস্তাব আসুক যা দর্শকদের কাছে চমক হিসেবে থাকবে। প্রহেলিকা আমার জন্য তেমন একটি সিনেমা।

এই সিনেমা নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?

এটুকু বলতে পারি দর্শকরা হতাশ হবে না। দর্শকরা ভালো একটি সিনেমা পাবে। এজন্য তাদের কাছে আমার প্রত্যাশাও অনেক বেশি। এ দেশের দর্শকদের আমি চিনি, তারা রুচিশীল সিনেমার ভক্ত, সেজন্য তারা এটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে আসবেন। 

প্রহেলিকা সিনেমার একট দৃশ্যে মাহফুজ ও বুবলি। ছবি: সংগৃহীত

যারা গল্প পছন্দ করেন, যারা মৌলিক গল্পের সিনেমা দেখতে চান, চরিত্রের উত্থান-পতন দেখতে চান, সেই দর্শকরা আসবেন প্রহেলিকা দেখতে। এই সিনেমায় মনা চরিত্রে অভিনয় করছি।

আপনার ভেতরে মনা চরিত্রটি কতটা বাস করেছে?

প্রহেলিকা সিনেমায় অভিনয় করার পর মনা চরিত্রটি অনেকদিন আমার ভেতরে বসবাস করেছে। চরিত্রটি থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। ডাবিং করার পর আবারও নতুন করে মনা আমার মধ্যে বাস করতে শুরু করে।

মনা চরিত্র থেকে বের হওয়ার জন্য দেশের বাইরেও গিয়েছিলাম। আমি চাই মনা চরিত্রটি দর্শকদের মনেও বাস করুক।

পরিচালক চয়নিকা চৌধুরীর মাধ্যমে ফেরার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

বহুদিন পর আমাকে পর্দায় ফেরানো, আড়াই বছর আমার জন্য অপেক্ষা করা, আমাকে ছাড়া এই সিনেমা করবেন না, দীর্ঘদিন অপেক্ষা করা, লেগে থাকা এগুলো পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী করেছেন। 

আমি বলব, চয়নিকার কাছ থেকে প্রহেলিকা আমার জীবনের অন্যতম বড় গিফট। এছাড়া মহামূল্যবান গিফট আমার চরিত্রটি। আমার পেছনে শ্রম, মেধা এবং লেগে থাকাটা, কেউ এতদিন লেগে থাকত কি না জানি না।

চয়নিকা কেমন পরিচালক তার বিচার দর্শকরা করবেন। কিন্তু তার অ্যারেঞ্জমেন্ট অসাধারণ। গল্পের প্রয়োজনে যেখানে যা প্রয়োজন করেছেন, কোথাও কৃপণতা করেননি।

নায়িকা বুবলির সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা জানতে চাই?

সিনেমার নায়িকাদের সঙ্গে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। তারা কেমন আমি জানি। বুবলির মতো পাংচুয়াল কাউকে দেখিনি। চরিত্রের প্রয়োজনে 'না' শব্দটি শুনিনি। রিহার্সেল করা, সময়মতো সেটে আসা, এত সময় নিয়ে চরিত্রটি করা সব অসাধারণ। ওর এসব পজেটিভ বিষয় আমাকে মুগ্ধ করেছে।

অভিনয়ের প্রতি তার সিরিয়াসনেস আমাকে সত্যি প্রভাবিত করেছে। বুবলি একজন ডেডিকেটেড অভিনেত্রী। তার রুচিও দারুণ।

দীর্ঘ সময় অভিনয়ের বাইরে থাকার কারণ কী?

শোবিজ থেকে সরে যেতে চেয়েছিলাম। তারকা জীবন চাইনি। সাধারণ জীবনযাপন করতে চাই বলেই অভিনয় থেকে দূরে ছিলাম। তারকা জীবনে প্রচুর চাপ নিতে হয়। আমি যা না, তা করতে হয় পর্দায়। 

এখনো বলছি, আমি  তারকা জীবন নিয়ে চলতে চাই না। একটি সিনেমা করলাম বিরতি দিয়ে। কিন্ত আমি সাধারণ মানুষ হয়ে থাকতে চাই। ক্যামেরার সামনে আমি যা নই, তা হয়ে উঠতে হয়। এই জীবন আমি চাই না, খুব সাধারণভাবে চলতে চাই।

ফেলে আসা জীবনকে কীভাবে দেখেন?

আমার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার জগতপুর গ্রামে। আমি গ্রামের মানুষ। এখনো গ্রামের সেই পথ ধরে লুঙ্গি পরে হাঁটতে পছন্দ করি। গ্রামের ফেলে আসা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে, গল্প করতে ভালোবাসি। 

আমার স্কুল জীবনের একজন বন্ধু আছে, গ্রামে থাকে, রিকশা চালায়, সে আমাকে আপনি করে বলে, দেখা করতে চায় না। আমি বাড়ি গেলে রাতের বেলা ওর বাড়ি যাই, দেখা করি, গল্প করি। 

ফেলে আসা জীবনটাকে আমি ভুলতে চাই না, হারাতেও চাই না, ওটাই আমি। গ্রামের যে দোকানে বাকিতে জিলাপি খেতাম, সেই দোকানে এখনো যাই। এটাই আমার আনন্দ। গ্রামের প্রতিটি রাস্তা, মানুষ আমার চেনা। যে জীবনে আনন্দ নেই, সেটা জীবন নয়।

Comments

The Daily Star  | English
health reform

Priorities for Bangladesh’s health sector

Crucial steps are needed in the health sector for lasting change.

17h ago