খাবার পানিতে লবণাক্ততায় দুর্ভোগ, বৃষ্টির অপেক্ষা চট্টগ্রাম ওয়াসার

হালদা নদী,
হালদা নদীর এই পয়েন্ট থেকে মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্পে পানি সংগ্রহ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততা এক মাস আগের তুলনায় প্রায় ৩০ গুণ বেড়ে যাওয়ায় নগরের অনেক এলাকার বাসিন্দাকে বোতলজাত পানি কিনে পান করতে হচ্ছে।

এতে করে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষ যারা এরই মধ্যে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে দিশেহারা তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে।

বন্দরনগরীর জামাল খান এলাকার বাসিন্দা মানসী তালুকদার বলেন, 'ওয়াসার পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে প্রায় এক মাস ধরে আমরা  দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।'

'কিছু স্থানীয় কোম্পানি ১৫ লিটারের পানির জারের দাম রাখে ১০০ টাকা। একটি পরিবারে প্রতি দুই দিনে একটি করে জার লাগে,' তিনি বলেন।  

'অনেক সময় এসব কোম্পানি নিয়মিত পানি সরবরাহ করতে পারে না, তখন আমাদের বোতলজাত পানি কিনতে হয়, যার দাম প্রতি লিটার ২০ টাকা।'

চকবাজার এলাকার হাসান মুরাদ বলেন, 'আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করি। বাইরে থেকে পানি কেনা আমার জন্য অতিরিক্ত বোঝা।'  

মানসী ও হাসানের মতো জামাল খান, চকবাজার, কাট্টলী, বাকালিয়া, সিটি গেট, হালিশহর ও বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দা পানির লবণাক্ততার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন।

চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তাদের মতে, স্বাভাবিক সময়ে ওয়াসার সরবরাহ করা প্রতি লিটার পানিতে মোট দ্রবীভূত কঠিন পদার্থ (টিডিএস), যেগুলো প্রধানত বিভিন্ন ধরনের লবণ, থাকে ১০ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম , তবে সরবরাহকৃত পানিতে টিডিএস এখন বেড়ে লিটার প্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ মিলিগ্রাম হয়েছে। ওয়াসার পানি সংগ্রহের প্রধান দুই উৎস হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে এটি হয়েছে বলে জানা যায়।

ওয়াসার লবণাক্ততা অপসারণ প্ল্যান্ট না থাকায় কর্তৃপক্ষ এখন বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে যাতে নদীতে লবণাক্ততা কমে যায়।

বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, শুষ্ক মৌসুমে হালদায় লবণাক্ততা বেড়ে যায়। সাধারণত, লবণাক্ততা কমাতে আমরা হালদার পানির সাথে কর্ণফুলীর পানি মিশিয়ে দিই।'

'অন্যদিকে, উজানে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ থেকে পানি ছেড়ে দিয়ে কর্ণফুলী নদীর লবণাক্ততা কমানো হয়,' বলেন আরিফুল।

'গত তিন মাস বৃষ্টি না হওয়ায় কাপ্তাই বাঁধ প্রকল্পে পানির স্তর স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন ১২ ফুট নিচে নেমে গেছে,' যোগ করেন তিনি।  

তাই হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে লবণাক্ততা বেড়েছে, তিনি বলেন, জোয়ারের সময় লবণাক্ততা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। লবণাক্ত পানি ঠেকাতে জোয়ারের সময় দুইটি প্ল্যান্টে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়। সেজন্য সার্বিকভাবে উৎপাদনও কমে গেছে। 

চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্মকর্তাদের মতে, চট্টগ্রামে প্রতিদিন পানি সরবরাহ হয় প্রায় ৪৬ কোটি লিটার। বর্তমানে ওয়াসার চারটি পানি শোধনাগার থেকে প্রায় ৪১ কোটি লিটার সরবরাহ করা হচ্ছে।

আরিফুল অবশ্য বলেন, যদিও সরবরাহকৃত পানি পান করতে মানুষ অস্বস্তি বোধ করে, তবে তা মানবদেহের জন্য 'ক্ষতিকর নয়'।

যোগাযোগ করা হলে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. সুজাত পল বলেন, ৫০০মিলিগ্রাম/লিটার এর কম টিডিএস কন্টেন্টযুক্ত পানি যদি অণুজীব দ্বারা দূষিত না হয়, তবে তা স্বাস্থ্যের জন্য কোনো ঝুঁকি তৈরি করবে না। 

তবে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের বেশি লবণাক্ত পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

'State intelligence agency' is attempting to form political party, Rizvi alleges

Doubts are growing as to whether there are subtle efforts within the government to weaken and break the BNP, he also said

2h ago