চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রতি লিটার পানিতে ৪০০ মিলিগ্রাম লবণ
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/03/11/whatsapp_image_2023-03-11_at_5.38.03_pm.jpeg?itok=J5zK-O0t×tamp=1678535967)
চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎস হালদা নদীতে জোয়ারের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করায় বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ওয়াসার সরবরাহ করা পানি।
সংকট সমাধানে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ অন্যান্য শোধানাগার থেকে পানি নিয়ে ব্লেন্ডিংয়ের (মেশানোর) পর পানি সরবরাহ করতে শুরু করেছে। তবে শুষ্ক মৌসুম দীর্ঘায়িত হলে এই সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি ছাড়া কমিয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তাই উজানের পানি কমে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের পানি হালদায় প্রবেশ করছে। এতে মোহরা পানি শোধানাগার প্রকল্পে লবণাক্ত পানি পরিশোধন করতে হচ্ছে। পানি পরিশোধনের পরও কিছু লবণাক্ততা থেকে যাচ্ছে ওয়াসার পানিতে। গত ১৫ দিন ধরে এই সংকট দেখা যাচ্ছে। আমরা গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নগরবাসীকে তা জানিয়েছি।'
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/03/11/whatsapp_image_2023-03-11_at_5.38.15_pm.jpeg?itok=YZrhfm4B×tamp=1678536107)
চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে দৈনিক পানির চাহিদা ৪৬ থেকে ৪৮ কোটি লিটার। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার ৪টি পানি শোধানাগার প্রকল্প থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ৪৭ কোটি লিটার পানি। আরও একটি পানি শোধানাগার প্রকল্প নির্মাণের কাজ চলছে।
এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়া পানি শোধানাগার ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ থেকে দৈনিক পাওয়া যায় ২৮ দশমিক ৬ কোটি লিটার পানি। মদুনাঘাট পানি শোধনাগার থেকে পাওয়া যায় ৯ কোটি লিটার এবং মোহরা পানি শোধনাগার থেকে পাওয়া যায় আরও ৯ কোটি লিটার। হালদা নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় মোহরা পানি শোধানাগার প্রকল্পের উৎস থেকে পানি সংগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে মোহরা পানি শোধানাগার থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে সাড়ে ৭ কোটি থেকে ৮ কোটি লিটার পানি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি কম ছাড়ায় হালদা নদীতে মিঠা পানির পরিমাণ কমে গেছে। হালদায় উজানের পানির চাপ কমে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের লবণাক্ত পানি হালদায় প্রবেশ করছে। হালদা নদীর যে পয়েন্ট থেকে আমরা মোহরা প্রকল্পের পানি সংগ্রহ করি সেখানে বর্তমানে লবণের পরিমাণ প্রতি লিটারে ১৭০০ মিলিগ্রাম। স্বাভাবিক সময়ে এই লবণের পরিমাণ থাকে প্রতি লিটারে ১০০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম।'
তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে মোহরা প্রকল্পের পানি পরিশোধন এবং অন্যান্য শোধানাগার থেকে পানি এনে মেশানোর পরও সরবরাহ করা পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ প্রতি লিটারে ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিগ্রাম।'
শুষ্ক মৌসুম দীর্ঘায়িত হলে এই সংকট আরও প্রকট হবে বলে আশঙ্কা জানান তিনি।
নগরীর কাট্টলী, সিটি গেইট, হালিশহর ও পতেঙ্গা এলাকায় গত ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসীরা।
সিটি গেইট এলাকার বাসিন্দা রাজিব রায়হান অভিযোগ করে বলেন, 'ওয়াসার পানি মুখে নেওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে পাশের বাড়ি থেকে টিউবয়েলের পানি সংগ্রহ করে দৈনন্দিন কাজ সারছি।'
হালিশহর এলাকার বাসিন্দা আবদুস সবুর বলেন, '১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে ওয়াসার পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ওয়াসার কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে অভিযোগ করেছি। কিন্তু এখনও সমাধান হয়নি।'
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/03/11/whatsapp_image_2023-03-11_at_5.38.27_pm.jpeg?itok=Z_FezbrX×tamp=1678536107)
লবণাক্ত পানি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর না দাবি করে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, 'ওয়াসার সরবরাহ করা পানি ব্যবহারের সময় লবণাক্ততা অনুভব হলেও তা মানবস্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না। চট্টগ্রাম ওয়াসা থেকে নগরে যে পানি সরবরাহ করা হয় তা ডাব্লিউএইচও'র গাইড লাইন অনুযায়ী শতভাগ জীবাণুমুক্ত।'
তবে ওয়াসার পানি যে পরিমাণ লবণাক্ত তা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক রসায়নবিদ ও কর্ণফুলী নদীর পানি গবেষক ইদ্রিস আলী। জানতে চাইলে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, '৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিগ্রাম/লিটার লবণাক্ততা অবশ্যই মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধ মানুষের জন্য। এছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল তাদের লবণাক্ত পানি ক্ষতি করবে। লবণাক্ত পানি মানুষের খাদ্য হজমেও সমস্য সৃষ্টি করবে।'
তিনি আরও বলেন, 'ওয়াসা নদীর পানি লবণ মুক্ত করে না, মিনিমাইজ করে। তবে তারা পানি জীবানুমুক্ত করে সরবরাহ করে থকে। শুষ্ক মৌসুমের জন্য ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি দরকার ছিল। প্রতি বছর এই মৌসুমে হালদা নদীতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে। তাই এর আগেই ওয়াসা কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।'
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/03/11/whatsapp_image_2023-03-11_at_5.38.51_pm.jpeg?itok=ocW-pxVF×tamp=1678536107)
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি ছাড়ার বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, 'শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর কমে গেছে। এ কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। পুরোপুরি প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে আমাদের। হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে মাত্র একটি ইউনিট চালু রেখেছি আমরা। শুষ্ক মৌসুম দীর্ঘায়িত হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও ব্যাহত হবে।'
Comments