চোরাই মোটরসাইকেলের স্বর্গ চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ

২৪টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৫

সন্দ্বীপ থেকে ২৪টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। ছবি: স্টার

চট্টগ্রাম শহর থেকে দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের অবস্থান প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে। একমাত্র জলপথে এই এখানে যাওয়া যায়। কিন্তু এই দ্বীপ উপজেলাটিই এখন চট্টগ্রাম শহর এবং এর আশপাশের এলাকা থেকে চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল কেনাবেচার স্বর্গে পরিণত হয়েছে।

প্রশাসন এবং পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের 'মানিয়ে' তাদের চোখের সামনে দিনের পর দিন সন্দ্বীপে চলাচল করছে কাগজপত্র বিহীন চোরাই মোটরসাইকেল। সর্বশেষ চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা পুলিশ সন্দ্বীপ থেকে ২৪টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার এবং চোর চক্রের প্রধানসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ বলছে, চুরি হওয়া এই সব মোটরসাইকেল নামমাত্র দামে সন্দ্বীপের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে। এসব মোটরসাইকেল ব্যবহার হচ্ছে যাত্রী বহনের কাজে। যদিও স্থানীয় পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে পুলিশ বলছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করা অসম্ভব।

গ্রেপ্তার হওয়া মোটরসাইকেল চোর চক্রের সদস্যরা হলেন মিঠুন ধর (২৯), বাবর ওরফে বাবুল (৩৫), মো. শাহাদ (২৬), মো. রিপন (৪০) ও মো. খোরশেদ আলম (২৯)। মিঠুন এই চোর চক্রের প্রধান বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার সন্দ্বীপ থেকে ২৪টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি) (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, গত ২৫ মার্চ চুরি যাওয়া একটি মোটরসাইকেলসহ মিঠুন ও বাবরকে প্রথমে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চুরি যাওয়া মোটরবাইক উদ্ধার এবং অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।'

তিনি বলেন, 'এরা আন্তজেলা মোটরসাইকেল চোর চক্রের সদস্য। এরা 'চেইন অব কমান্ড' বজায় রেখে চারটি স্তরে কাজ করে। একটি মোটরসাইকেল চুরি করার পর, প্রথম ধাপে যারা থাকেন তারা খুব দ্রুত দ্বিতীয় স্তরের কাছে সাইকেল হস্তান্তর করে এবং দ্বিতীয় পক্ষ এগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যায়। পরে তৃতীয় পক্ষ মোটরসাইকেলের বিবরণ দিয়ে ক্রেতা সংগ্রহ করে এবং চতুর্থ পক্ষ টাকা নিয়ে মোটরসাইকেল বিক্রি করে।'

'পাঁচ থেকে ছয় সেকেন্ডের মধ্যে চুরি যাওয়া মোটরবাইক নিয়ে তারা উধাও হয়ে যায়। কত মোটরসাইকেল চুরি করছে দলটি আমরা এখনো তা জানি না। আমাদের অভিযান এখনও চলছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের তদন্তে দেখা গেছে সন্দ্বীপে চলাচল করা অধিকাংশ মোটরসাইকেলের লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য কাগজপত্র নেই। চুরির পর মোটরসাইকেলগুলো দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয় এবং মডেলভেদে মাত্র ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।'

'যাত্রী পরিবহনের জন্য সন্দ্বীপে সবচেয়ে জনপ্রিয় বাহন মোটরসাইকেল। এই চক্রটি এর সুযোগ নেয়,' জানান তিনি।

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, 'মোটরসাইকেল চুরি বন্ধ করতে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নেতারা এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে পারেন।'

ডেইলি স্টারের এই রিপোর্টার সন্দ্বীপের কয়েকটি স্থানীয় সূত্রের সঙ্গে কথা জানতে পেরেছেন পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে সেখানে চোরাই মোটরসাইকেল চলাচল করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সন্দ্বীপ পৌর এলাকার এক স্থানীয় ব্যবসায়ী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চোরাই মোটরসাইকেল নৌকায় করে সন্দীপে আনার সময় পুলিশকে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এর জন্য রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও চোরদের আঁতাত করতে হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'পুলিশ ও প্রশাসন বিষয়গুলো জানলেও অজ্ঞাত কারণে তারা নীরব।'

স্থানীয়দের অভিযোগ, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম থেকে চোরাই মোটরসাইকেল নৌকায় করে সন্দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়। কখনো কখনো মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন, চেসিস ও নম্বর প্লেট পরিবর্তন করে চট্টগ্রামে বিক্রি করা হয়।

স্থানীয়রা আরও জানান, সন্দীপের চোরাই মোটরসাইকেলের সঙ্গে সন্দ্বীপের কালাপানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলীমুর রাজি টিটু নাম শোনা যায়। টিটু ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। তাদের অভিযোগ বর্ডার থেকে চোরাই পথে আনা মোটরসাইকেল ও চোরাই মোটরসাইকেল টিটুর 'গ্রিন সিগন্যাল' ছাড়া এখানে প্রবেশ করতে পারে না।

চোরদের সঙ্গে সখ্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে টিটু বলেন, 'শুধু মাত্র রাজনৈতিক কারণে আমার নাম এখানে জড়ানো হচ্ছে। আমার এখানে ৭নং ওয়ার্ডের এক মেম্বার দেলোয়ার সে টানা গাড়ির ব্যবসা করত। আমি নির্বাচিত হবার পর তা বন্ধ করে দিয়েছি।'

সন্দ্বীপে এখন কত চোরাই মোটরসাইকেল চলে জানতে চাইলে তিনি বলেন 'এখানে একটি বিশাল সিন্ডিকেট কাজ করে। তারাই সব নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এটা ঠিক এখানে কত চোরাই বা অবৈধ গাড়ি আছে তা কেউ বলতে পারবে না। ৭০ শতাংশ মোটরসাইকেলেরই কোনো কাগজ নেই।'

টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একটি মামলার তদন্ত ধরে পুলিশ (কোতোয়ালি) আমাদের সহায়তায় মোটরসাইকেলগুলো উদ্ধার করেছে। চুরি যাওয়া মোটরবাইক থেকে পুলিশ টাকা নেয় এটা ঠিক নয়।'

'আমরা অভিযান চালাই এবং প্রায়ই আমাদের অভিযানের সময় চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়,' দাবি করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

‘Salma was killed by tenant, not her son’

Salma was killed by her “drug peddler” tenant, not by her 19-year-old son, said police yesterday contradicting Rab’s claim.

3h ago