ভালো দলে খেলার সুযোগ পেতেই আরাভের পরিবর্তে জেলে যায় ইউসুফ

ভালো দলে খেলার সুযোগের আশ্বাসে আরাভের পরিবর্তে জেলে যায় ইউসুফ
ইউসুফ লিমন ও আরাভ খান। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় এক পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলায় ৪ বছর আগে আসামি হয়েছিলেন গোপালগঞ্জের রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। সেই মামলায় তার পরিবর্তে জেলে যান চাঁদপুরের আবু ইউসুফ লিমন। তবে তিনি এখন জামিনে আছেন। অপরদিকে, হত্যার অভিযোগ থাকলেও দেশ থেকে পালিয়ে দুবাইয়ে স্বর্ণের ব্যবসা করছেন আরাভ খান।

এ ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এতদিন চুপ থাকলেও আরাভ খানের বিষয়ে অবশেষে মুখ খুলেছে আবু ইউসুফের পরিবার। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপচারিতায় তারা জানিয়েছেন অনেক কিছু।

চাঁদপুরের কচুয়া থানার সিংগাড্ডা পোস্ট অফিসের অধীন আইনপুর গ্রামের মো. নুরুজ্জামান ও হালিমা বেগম দম্পতির এক ছেলে ও দুই মেয়ে। আবু ইউসুফ লিমন (২২) বড়। নুরুজ্জামান কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করেন।

ইউসুফের মা হালিমা বেগম বলেন, '২০১৬ সালে এসএসসি পাশের পর আবু ইউসুফকে কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ার ম্যাটস-এ মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্সে ভর্তি করানো হয়। ৩ বছর পড়ার পর সে ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা না দিয়ে ক্রিকেট খেলতে ঢাকায় চলে যায়। এ নিয়ে বাবা ও আমাদের সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়। একসময় বাবা তার খরচ চালানো বন্ধ করে দেয়।'

'ঢাকায় গিয়ে আবু ইউসুফ ক্রিকেট খেলার জন্য ভালো সুযোগ খুঁজতে থাকে। সেখানে আরাভের সঙ্গে ওর যোগাযোগ হয়। আরাভ বিকেএসপিতে খেলার সুযোগ করে দেবে বলে ইউসুফের আইডিকার্ড-সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন কাগজপত্র নেয়। পরে কাগজপত্র হাতে পেয়ে আরাভ ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে তার মামলায় ইউসুফকে জেলে যেতে বাধ্য করে', বলেন তিনি।

আবু ইউসুফের মা বলেন, 'আরাভের প্রলোভনে পড়ে ইউসুফ জেলে গেলেও পরিবারের কাছে বিষয়টি গোপন রাখে। এরমধ্যে আরাভ একদিন ইউসুফের বাবাকে ফোন করে জানায়, সে ইউসুফকে বিকেএসপিতে ট্রেনিংয়ে পাঠিয়েছে। ইউসুফের খেলাধুলার সমস্ত দায়িত্ব তার (আরাভের)।'

তিনি আরও বলেন, 'ইউসুফকে দেড় মাসের মধ্যে জেল থেকে বের করার আশ্বাস দিয়েছিল আরাভ। ৩ মাসেও বের করতে না পারায় বাসায় ফোন করে সব ঘটনা খুলে বলে ইউসুফ। কান্নাকাটি করে।'

ইউসুফের বাবা নুরুজ্জামান বলেন, 'ইউসুফ ৩ মাস জেলে থাকার পর জানতে পেরেছি। এরপর তার জামিন পেতে আরও ৬ মাস লেগেছে। মোট ৯ মাস সে জেল খেটেছে।'

এই মামলায় ছেলেকে জামিনে আনতে গিয়ে অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি।

ভুক্তভোগী আবু ইউসুফ লিমন বলেন, 'ফেসবুক সূত্রে আরাভের সঙ্গে পরিচয়। ভালো জায়গায় ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেতে আমার একটু সাপোর্টের প্রয়োজন ছিল। বাড়ি থেকে সাপোর্ট না পাওয়ায় আমি কাজ খুঁজছিলাম। আরাভকে ফেসবুকে আমার ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহের কথা জানাই। পাশাপাশি টাকা-পয়সার সাপোর্ট নেই, এসব বলি।'

'করোনাকালীন সময়ে আরাভের সঙ্গে ফেসবুকে আরও কথা হয়। সে জানায়, দেশে আসলে আমার সব ব্যবস্থা করে দেবে। একটা ভালো দলে খেলার পাশাপাশি সাকিব আল হাসানের সঙ্গে খেলার সুযোগ করে দেবে, কিন্তু মামলার কারণে সে দেশে আসতে পারছে না। আরাভ আমাকে অনুরোধ করে তার হয়ে আদালতে গিয়ে কাস্টডিতে গেলে সে আমাকে দেড় মাসের মধ্যে জামিনে মুক্ত করবে। আমার ক্রিকেট খেলার ব্যবস্থা করে দেবে। একসময় আমি তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই', বলেন তিনি।

ইউসুফ বলেন, '২০২০ সালের ২০ অক্টোবর আরাভের কথা মতো আমি ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতে যাই। কী এক কারণে সে দিনের পরদিন আমি আরাভের পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করি।'

'জেলে যাওয়ার পর একাধিকবার আমার জামিনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এসময় আরাভ আস্বস্থ করে যে, ১৬ ডিসেম্বরের আগেই জামিনের ব্যবস্থা করবে। এরপর ডিসেম্বরেও সে আমার জামিন করাতে ব্যর্থ হয়', যোগ করেন তিনি।

ইউসুফ বলেন, 'আমাকে তখন কাশিমপুর জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে এই মামলার অন্য আসামিদের সঙ্গে কথা হয়। পরে আমি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি।'

'আরাভ অনেক ক্ষমতাশালী' উল্লেখ করে ইউসুফ বলেন, 'আমার মতো অনেক তরুণ ছেলে আরাভের ভক্ত। আমার যেহেতু আর্থিক সামর্থ্য নেই, আমি চাই না আরাভের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে জড়াতে। সে চাইলে আমার আরও অনেক ক্ষতি করতে পারে।'

অর্থের বিনিময়ে আরাভের হয়ে জেলে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন আবু ইউসুফ ও তার পরিবারে সদস্যরা।

টাকার জন্য নয়, শুধু ভালো দলে খেলার সুযোগ পেতেই আরাভের হয়ে হাজতে গিয়েছিলেন বলে জানান আবু ইউসুফ লিমন।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

2h ago