এসইউভি বনাম মিনিভ্যান: কোন প্রয়োজনে কোনটি কিনবেন

এসইউভি বনাম মিনিভ্যান: কোন প্রয়োজনে কোনটি কিনবেন
ছবি: সংগৃহীত

স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি) এবং মিনিভ্যানে ২ ধরনের সুবিধা থাকলেও প্রয়োজন অনুযায়ী এদের মধ্যে আপনাকে কোনটি বাছাই করা উচিত? 

পারিবারিক পিকনিক, ব্যবসায়িক কাজ কিংবা ফুটবলারদের অনুশীলনে ব্যবহারের জন্য মিনিভ্যানের আলাদা এক খ্যাতি রয়েছে। আবার, যাদের গাড়ি কেনার পেছনে ফ্যাশন, আভিজাত্য এবং ব্যক্তিত্ব প্রকাশের উদ্দেশ্য বিদ্যমান তাদের ক্ষেত্রে এসইউভি প্রথম পছন্দ। 

এসইউভি এবং মিনিভ্যান অন্যান্য ব্যক্তিগত গাড়ির থেকে আকারে বড়, ফলে এই ২ গাড়ির ব্যবহার ও ক্রয়ের উদ্দেশ্যও ভিন্ন। যেসব পরিবারের সাধারণত দুটির বেশি বাচ্চা থাকে বা একটি ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তাদের জন্য সম্ভবত অধিক কার্গো রাখার স্থানসহ ৩ সারির আসনবিশিষ্ট একটি গাড়ির চাহিদা বেশি থাকে। 

মিনিভ্যান এসইউভি থেকে কম ট্রেন্ডি হলেও জ্বালানী সাশ্রয়ী এবং যাত্রীদের জন্য কম আরামদায়ক। আজকের আলোচনা থেকে জেনে নিতে পারেন আপনার জন্য কোনটি হতে পারে উত্তম পছন্দ।

কার্গো রাখার স্থান

মিনিভ্যানগুলোর ফ্লোর নিচু হবার কারণে কার্গো রাখার স্থানে মালামাল বহনের পরেও যাত্রীদের হ্যান্ডব্যাগসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পায়ের কাছে রাখার জন্য জায়গা থাকে। সম্প্রতিকালে জনপ্রিয়তা পাওয়া ক্রিসলার প্যাসিফিকা, ডজ গ্র্যান্ড ক্যারাভান, হোন্ডা ওডিসি, কিয়া সেডোনা এবং টয়োটা সিয়েনার মতো মিনিভ্যানগুলোর তৃতীয় সারির পেছনে অন্তত ৩১ ঘনফুট কার্গো-স্থান থাকে। টয়োটা সিয়েনার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সারিসহ মোট ৮২ ঘনফুট স্থান রয়েছে এবং ক্রিসলার প্যাসিফিকাতে আছে ৮৮ ঘনফুট। 

এসইউভিতে এমন স্থান পাওয়া অসম্ভব, প্রচলিত এসইউভির গড় কার্গো রাখার স্থান ২০ ঘনফুটের কম। কেবল শেভ্রলেট সাবার্বানের মিনিভ্যানের কাছাকাছি জায়গা আছে। যেটির পেছনের কার্গো স্পেস ৪০ ঘনফুটের এবং চালকের পেছনের সারি থেকে শেষ পর্যন্ত ৭৭ ঘনফুট স্থান। 

যাত্রী জন্য স্থান

গাড়ির অভ্যন্তরে আরামের কথা আসলে মিনিভ্যানকে হারানো বেশ কঠিন, কারণ মিনিভ্যান নির্মাণের উদ্দেশ্যের একটা হলো যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য পরিবহন। জনপ্রিয় মিনিভ্যানগুলোর সম্পূর্ণ ৩ সারির বসার জায়গা মিলিয়ে গড়ে ১৫০ ঘনফুটের মতো স্থান থাকে। অন্যদিকে, সবচেয়ে বড় বিলাসবহুল এসইউভি হিসেবে পরিচিত ক্যাডিলাক এসকালেড ইএসভি এসইউভিতে ভেতরের স্থান ১২০ ঘনফুটের কিছুটা বেশি। যাত্রীদের আরামদায়ক পরিবহনে মিনিভ্যান স্পষ্টতই এসইউভিকে হারিয়ে দেবে।

তবে, বসার আসনের ক্ষেত্রে মিনিভ্যানের থেকে এসইউভি খানিক এগিয়ে থাকবে; যা বিলাসবহুল সামগ্রী দিয়ে নির্মিত। আসনে ব্যবহৃত উপকরণগুলোতে মিনিভ্যানের চেয়ে হাই-এন্ড উপকরণ ব্যবহার করে এসইউভি। যদিও, বর্তমানে প্রাপ্ত ব্রান্ডেড মিনিভ্যানগুলোও বিলাসবহুল উপকরণের ব্যবহার শুরু হয়েছে। মিনিভ্যান এবং এসইউভি উভয়ের যাত্রী আসনে বেঞ্চের মতো স্থান রাখে। যেখানে দুইয়ের অধিক শিশুদের আসন দেওয়া যায়।

সবচেয়ে বড় এসইউভিগুলোর ভেতরে ৩ জন করে আরামে বসার জন্য ৩টি সারি থাকে, যেখানে মোট ৯ জন যাত্রী বসতে পারে। ৯ জন পূর্ণ বয়স্ক যাত্রীর আরামদায়ক যাত্রায় মিনিভ্যান পিছিয়ে থাকবে। যাদের উদ্দেশ্য বড় পরিবার এবং অধিক মালামাল বহন করা। মিনিভ্যানের পেছনের দিকে লম্বা যাত্রীদের জন্য বসাটা এসইউভির মতো আরামদায়ক হবে না, মাথা অনেকটা ছাদে আটকে যেতে পারে।

টোয়িং এবং অল-হুইল ড্রাইভ

বর্তমানে অল-হুইল ড্রাইভ সুবিধাসহ শুধু একটি মিনিভ্যান পাওয়া যায়, টয়োটা সিয়েনা। অন্যদিকে অধিকাংশ এসইউভি অল-হুইল ড্রাইভ দিয়ে সজ্জিত। এসইউভির প্রিমিয়াম মডেলগুলোর বেশিরভাগেই এই সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। টোয়িং হচ্ছে, গাড়ির পেছনে ভারী কোনো মালামাল (যেমন ক্যাম্পিং এর জন্যে জিনিসপত্র, নৌকা বা বাক্স) টেনে নিয়ে যাওয়া। মিনিভ্যানের মধ্যে কেবল ক্রিসলার প্যাসিফিকা ৩ হাজার ৬০০ পাউন্ড টো বহনের সুবিধা প্রদান করে।

অন্যদিকে বেশিরভাগ বড় এসইউভিতেই এই সুবিধা পাওয়া যায়। বিভিন্ন পাহাড়ি, উঁচুনিচু রাস্তা, কিংবা অসমান রাস্তার জন্য একটি টোয়িং গাড়ির দরকার, সেখানেও এসইউভির জুড়ি মেলা ভার। বিশেষ করে যারা অভিযাত্রী, ট্রেকার, কিংবা যাযাবর ধরনের তাদের জন্য এসইউভি উত্তম পছন্দ হতে পারে। 

জ্বালানী সাশ্রয় 

যারা ৭ বা ততোধিক আসনের গাড়ির সন্ধান করছেন তাদের জন্য জ্বালানি সাশ্রয় মূল উদ্বেগের বিষয় হতে পারে না। তবুও গাড়ির জন্য জ্বালানি ব্যয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, যা গাড়ি মালিকদের ভাবিয়ে থাকে। অধিকাংশ মিনিভ্যান, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া প্রতিটি মিনিভ্যান ভি-৬ ইঞ্জিন চালিত। যা সাধারণত গ্যালন প্রতি ২৪ থেকে ৩০ মাইল চলে।

অন্যদিকে বেশিরভাগ মাঝারি আকারের বা বড় এসইউভিগুলো থার্স্টি ভি-৮ ইঞ্জিন চালিত। উদাহরণ হিসেবে থার্স্টি ভি-৮ ইঞ্জিনচালিত জনপ্রিয় এসইউভির মধ্যে আছে, বিএমডব্লিউয়ের এক্স৫, লেক্সাস জিএস ফোর্ডের এক্সপ্লোরা, রেঞ্জ রোভার, হ্যামার, কিংবা ল্যান্ড রোভারের বেশ কিছু মডেল। এসব গাড়ির অল-হুইল ড্রাইভের মাধ্যমে গ্যালনপ্রতি ২০ মাইলেরও কম যেতে পারে। যারা এমন প্রিমিয়াম দামের এসইউভি কিনতে আগ্রহী তাদের জ্বালানী সাশ্রয়ের চিন্তা প্রশমন করাই উত্তম, কারণ এ ক্ষেত্রে মিনিভ্যান অধিক সাশ্রয়ী।

মডেলের তারতম্য

গত শতকের ৯০-এর দশক ছিল মিনিভ্যানের জন্য সোনালি সময়। গাড়ি উৎপাদনকারীরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিনিভ্যানের নকশার এবং ট্রেন্ডের পেছনে গবেষণা ও অর্থব্যয়ে উদাসীন ছিল। বর্তমান বাজারে পাওয়া অধিকাংশ ব্র্যান্ডের মিনিভ্যানগুলোর নকশা প্রায় একই রকম। মিনিভ্যানের এমন পতনে এসইউভির উত্থান ঘটেছে বৈপ্লবিকভাবে। 

বর্তমানে বাজারে ২ ও ৩ সারির অসংখ্য এসইউভি পাওয়া যায়, যাতে নিশ্চিত করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, উত্তম উপকরণ, শক্তিশালী ইঞ্জিন এবং ফ্যাশন ও ট্রেন্ডকে মাথায় রেখে নান্দনিক সব নকশা। বিলাসবহুল এসব এসইউভির দীর্ঘ ইতিহাসকে সচল রেখেই উন্নতি ঘটানো হয়েছে। ফলে এর প্রতি মানুষের ঝোঁক ও বেড়েছে বহুগুণে। দেশের বাজারেও এসইউভি রমরমা বিক্রি ও ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের বরাতে চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে প্রথম আলো জানায়, গত এক দশকের হিসেবে এসইউভি গাড়ি বিক্রি বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৫ গুণ। ২০২২ সালে মোট ১০ হাজার ২৪০টি এসইউভি গাড়ি বিক্রি করে রেকর্ড করে। দেশের সরকারি কর্মকর্তাসহ আমলা ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্যও সরকার আস্থা রাখছে এসইউভিতে।

 

তথ্যসূত্র: বিআরটিএ, বিআইডিএ, স্ট্যাটিস্টা, কার অ্যান্ড ড্রাইভার, হট কারস

 

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

13h ago