হাসানের মোড় ঘোরানো ওভার, রনির উড়ন্ত শুরু, শান্তর আগ্রাসী ফিফটি

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে হারানোর স্বাদ নিল বাংলাদেশ। সেটাও আবার হেসেখেলে। কারও একক নৈপুণ্যে নয়, সম্মিলিত অবদানে এলো স্মরণীয় ফল।

বোলিংয়ের শেষদিকে জস বাটলারকে ফিরিয়ে হাসান মাহমুদ লাগাম টানেন ইংলিশদের রান তোলার গতিতে। মাঝারি লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাটিংয়ে উড়ন্ত শুরু এনে বাংলাদেশকে জয়ের সুর বেঁধে দেন রনি তালুকদার। নান্দনিক সব শটে আগ্রাসী হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বাকি পথ পাড়ি দেওয়ার কাজটা অনায়াস করেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৬ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। টস হেরে আগে ব্যাট করে সফরকারীরা ৬ উইকেটে ১৫৬ রান তুলতে পারে। যদিও ইনিংসের প্রথম ভাগে বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত দিচ্ছিল তারা। জবাব দিতে নেমে ৪ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য পেরিয়ে যায় সাকিব আল হাসানের দল। তখনও বাকি ছিল ১২ বল।

হাসানের মোড় ঘোরানো ওভার

১৬ ওভার শেষে ইংলিশদের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ১৩৫ রান। ক্রিজে ছিলেন ফিফটি হাঁকিয়ে আক্রমণাত্মক মেজাজে থাকা অধিনায়ক বাটলার। তাকে সঙ্গ দিতে মাত্রই নেমেছিলেন মঈন আলি। স্যাম কারান, ক্রিস ওকসরা ব্যাটিংয়ে নামার অপেক্ষায় থাকায় ১৮০ রানের আশেপাশের পুঁজি পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা ছিল ইংল্যান্ডের।

১৭তম ওভারের প্রথম বলেই বাটলারকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন হাসান। বড় শট খেলার চেষ্টায় লং অনে ক্যাচ দেন বাটলার। থামে সমান চারটি চার ও ছক্কায় সাজানো তার ৪২ বলে ৬৭ রানের ইনিংস। হাসান সেখানেই থামেননি। এই ডানহাতি পেসার টানা চারটি ডট বল করেন কারানকে। শেষ বলে আসে একটি সিঙ্গেল।

ডেথ ওভারের শুরুতে ১ রান দিয়ে ১ উইকেট। বল হাতে হাসানের এমন দুর্দান্ত প্রদর্শনী পাল্টে দেয় পরিস্থিতি। ইনিংসের প্রথম দশ ওভারে চাপে থাকা বাংলাদেশ সেটা ঠেলে সরিয়ে দেয়। পরের তিন ওভারে ইংল্যান্ড তুলতে পারে কেবল ২০ রান। মোস্তাফিজুর রহমান ১৮তম ওভারে দেন ৭ রান। আক্রমণে ফিরে হাসান আরেকটি নজরকাড়া ওভারে খরচ করেন ৪ রান। তাসকিন আহমেদের শেষ ওভারে আসে ৯ রান।

দেড়শো পেরিয়েই ইংল্যান্ড থামায় বাংলাদেশ পেয়ে যায় মোমেন্টাম। হাসান ৪ ওভারে ২৬ রানে নেন ২ উইকেট। প্রথম দুই ওভারে ২১ রান খরচ করা এই তরুণ পরে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্লোয়ার, ইয়র্কারে ছাপ রাখেন নিজের সামর্থ্যের।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

রনির উড়ন্ত শুরু

রনির ব্যাটে নাগালের মধ্যে থাকা লক্ষ্যের পেছনে শুরুতেই দ্রুতগতিতে ছুটতে থাকে বাংলাদেশ। প্রায় আট বছর পর একাদশে ফেরা এই ব্যাটার ছিলেন তেতে। কাঙ্ক্ষিত সুযোগে নিজেকে মেলে ধরার তাগিদও নিশ্চয়ই ছিল তার।

মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই কারানকে চার মারেন রনি। ক্রিস ওকসের করা পরের ওভারে দুই চার আসে তার ব্যাট থেকে। এরপর জোফরা আর্চারও পার পাননি। ফলে ৩ ওভারেই ৩২ রান জমা হয়ে যায় বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে। এখনও টি-টোয়েন্টির ভাষা চেনার লড়াইয়ে থাকা দলের জন্য যা নিঃসন্দেহে ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। 

ইনিংসের চতুর্থ ওভারে লেগ স্পিনার আদিল রশিদের গুগলি পড়তে ভুল করেন রনি। ব্যাটের ছোঁয়া এড়িয়ে বল ভেঙে দেয় স্টাম্প। লম্বা সময় পর ফেরার ম্যাচে ২১ রান করেন তিনি। ১৪ বল খেলে মারেন চারটি চার। ইনিংস বড় করতে না পারলেও কাজের কাজটা ঠিকই করে দিয়ে যান তিনি। চেপে বসতে দেননি ইংলিশ বোলারদের।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

শান্তর আগ্রাসী হাফসেঞ্চুরি

ওয়ানডে সিরিজের ছন্দ টি-টোয়েন্টিতেও টেনে আনেন শান্ত। এই বাঁহাতি ব্যাটার যে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং উপহার দেন, তা অতীতে খুব কমই পাওয়া গেছে তার কাছ থেকে। তিনি জ্বলে ওঠায় ৪৩ রানে দুই ওপেনার রনি ও লিটন দাসকে হারানোর আঘাত ক্ষত তৈরি করতে পারেনি।

সপ্তম ওভারে শান্তর ব্যাট হয়ে ওঠে খোলা তরবারি। তাতে কচুকাটা হন ইংলিশ পেসার মার্ক উড। প্রথম চার বলকেই সীমানার বাইরে পাঠান এই বাঁহাতি ব্যাটার। সব মিলিয়ে ওই ওভার থেকে আসে ১৭ রান। তার এমন উত্তাল ব্যাটিং অভিষেক টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা তৌহিদ হৃদয়কেও দেয় বাড়তি আত্মবিশ্বাস। তৃতীয় উইকেটে ৬৫ রানের জুটি তারা গড়েন মাত্র ৩৯ বলে।

মাত্র ২৭ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটির স্বাদ নেন শান্ত। এই সংস্করণে সবশেষ চার ম্যাচে এটি তার তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি। এর আগের ১৪ ইনিংসে ছিল না একটিও। সবশেষ বিপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের পুরস্কার জেতা শান্ত শেষ পর্যন্ত থামেন ৫১ রানে। ৩০ বলের ইনিংসে তিনি মারেন আটটি চার।

কেবল আগ্রাসী ঢঙের জন্য নয়, সময়োপযোগী ব্যাটিংয়ের কারণেও নজর কাড়েন শান্ত। স্ট্রাইক বদল করতে বাংলাদেশের ব্যাটার ভোগান্তির ব্যাপারটা অজানা নয়। এই ম্যাচে শান্তর ডট বল খেলার পরিমাণ ছিল তুলনামূলক অনেক কম। সিঙ্গেল-ডাবল নেওয়াতেও পারদর্শিতা দেখান তিনি।

ম্যাচসেরা শান্ত বিদায় নেন ইনিংসের ১৩তম ওভারে। তখন বাংলাদেশের দরকার ছিল ৪৬ বলে ৪৫ রান। সহজ এই সমীকরণ পরে মিলিয়ে ফেলেন অধিনায়ক সাকিব ও আফিফ হোসেন।

Comments

The Daily Star  | English

Exports under strain as India slaps more restrictions

Industry insiders say the new restrictions could deepen Bangladesh's export woes at a time when global demand remains fragile and other sectors—from garments to processed foods—also face trade hurdles

22m ago