আপেল বীজ কি শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে
আপেল খাবার সময় অনেকেই এর বীজ ফেলে দেন। ছেলেবেলায় শুনেছেন, বীজ খেলে পেটে গাছ হবে! তবে বড় হওয়ার পর তো জানেন ওসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু অনেকেরই এমন বিশ্বাস রয়েছে যে, আপেলের বীজ বিষাক্ত, খেলে ক্ষতি হতে পারে!
তবে এটি পুরোপুরি সত্য নয়। আপেলের বীজ পেটে গেলেও তেমন কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ঘটে না। তাহলে আপেলের বীজের প্রতি এই নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হলো কীভাবে? চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
জ্ঞানবৃক্ষের বীজ
আপেলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আদম বা অ্যাডামের স্বর্গচ্যুতির ঘটনা। জ্ঞানবৃক্ষের সেই ফল, সেই বীজ খেয়ে অ্যাডাম আর ঈভের ঘটেছিল স্বর্গচ্যুতি। তারপর মানুষ এসে পড়লো এই দুঃখময় পৃথিবীতে। তবে না, আপেলের বীজকে বিষাক্ত মনে করার ক্ষেত্রে এই ঘটনার কোনো প্রভাব আছে কি না তা সুস্পষ্ট নয়।
আপেলের বীজে থাকে অ্যামিগড্যালিন, যেটি একটি সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড যা সায়ানাইড ও শর্করা দ্বারা গঠিত। যখন আমাদের দেহে অ্যামিগড্যালিনের বিপাক ঘটে, এটি বিশ্লেষিত হয়ে হাইড্রোজেন সায়ানাইডে (এইচসিএন) পরিণত হয়। এইচসিএন উচ্চমাত্রায় বিষাক্ত ও কয়েক মিনিটের ভেতর ডেকে আনতে পারে মৃত্যু! অবশ্য যদি যথেষ্ট পরিমাণে শরীরে ঢোকে--তবেই।
কিন্তু আপেল খেতে যারা ভালোবাসেন, তাদের ভাগ্য ভালোই বলতে হবে। আপেলের বীজে থাকা অ্যামিগড্যালিন কেবল তখনই সক্রিয় হয়, যখন বীজকে চূর্ণ করা হয়। তা ছাড়া, মানবশরীর এইচসিএন হজমও করতে পারে স্বল্পমাত্রায়। অর্থাৎ, শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাতে হলে ১০০ থেকে ৫০০ টির মতো বীজের প্রয়োজন হবে, নয়তো কোনো ঝুঁকি নেই।
তাহলে যদি একটি আপেলের কথা ধরা হয়, এখানে আমরা বীজ পাবো ৫-৮ টি। যেটি সেই ১০০ বা ৫০০ বীজ-এর ধারেকাছেও নেই। কয়েকটি আপেলের বীজ না চিবিয়ে পরপর গিলে ফেললে তাতে কোনো ক্ষতিই হবে না। খুব সাধারণভাবে তা হজমপ্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে দেহ থেকে বেরিয়ে যাবে।
তবে সাধারণভাবে আপেলের বিচি না খাওয়াটাই ভালো৷ যদি পারেন, এড়িয়ে যাবেন। কারণ, এতে আলাদা কোনো স্বাস্থ্যগত উপকার নেই। তবে আপেল প্রতিদিনই কয়েকটি করে খেতে পারেন। কারণ, চমৎকার স্বাদ তো পাবেনই, সঙ্গে পাবেন প্রচুর পানি, খনিজ, পুষ্টি ও উপকার। তাই প্রতিদিন চেষ্টা করবেন অন্তত একটি আপেল খেতে। আর কথায়ই তো আছে- 'প্রতিদিন একটি করে আপেল খান, ডাক্তার থেকে দূরে থাকুন।'
তথ্যসূত্র: রিপলিস বিলিভ ইট অর নট
গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়
Comments