দক্ষিণাঞ্চলে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় বিঘ্ন হচ্ছে নৌ চলাচল

বরিশাল সদরে আড়িয়াল খাঁ নদীতে প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে তারপর নৌকার কাছে যেতে হচ্ছে। ছবি: টিটু দাস/স্টার

দক্ষিণাঞ্চলে নদীর তলদেশে পলি জমে ভরাট হওয়ায় নাব্যতা ও পানির গভীরতা কমে ঝুঁকিতে পড়েছে ওই রুটে চলাচলকারী নৌযান। কখনো কখনো গন্তব্যে পৌঁছাতে ১ থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরি হচ্ছে, কখনো আবার মাঝপথেই যাত্রী ও পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

নৌযান চালকরা বলছেন, ড্রেজিং করা হলেও সেটি তেমন কোনো কাজে আসছে না। কোনো কোনো চ্যানেলে ড্রেজিং করলেও দ্রুত সে জায়গায় ভরাট হয়ে নৌ চলাচলের উপযোগিতা হারাচ্ছে। পর্যাপ্ত বাজেটের অভাবে বারবার ড্রেজিংয়ের কাজও সম্ভব হচ্ছে না।

বরিশাল বিভাগীয় লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবুল হাশেম জানান, বরিশাল থেকে ঢাকা, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলাসহ অন্তত ১৫টি রুটে বর্তমানে নদীর নাব্যতা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এসব রুটে ভাটার সময় কোনো কোনো স্থানে ১০ ফুটের কম পানি থাকছে। ফলে ভাটার সময়ে বড় লঞ্চ, আবার কোনো কোনো জায়গা থেকে ছোট লঞ্চও চলতে পারছে না।

তিনি বলেন, 'বড় লঞ্চ চলাচল করতে অন্তত ১০ ফুট পানি থাকা প্রয়োজন। ছোট লঞ্চের জন্য প্রয়োজন ৬-৭ ফুট পানি। কিন্তু এসব রুটের অন্তত ২৫-৩০টি পয়েন্টে পানির নাব্যতা কমে গিয়ে নৌযান চলাচল বিঘ্ন হচ্ছে।'

সম্প্রতি সরেজমিনে চরমোনাই ফেরিঘাটে গিয়ে দুপুর ৩টায় চরমোনাই ফেরিঘাটে চলাচলকারী ফেরিটি চরে আটকে থাকতে দেখা যায়। জোয়ারের জন্য সেটি অপেক্ষা করছিল।

নাব্যতা সংকটে আড়িয়াল খাঁ নদীর বিভিন্ন জায়গায় চর জেগে উঠেছে। ছবি: টিটু দাস/স্টার

বরিশাল সদর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদীর বুখাইনগর পয়েন্টে দেখা গেছে, লঞ্চ দাঁড়িয়ে আছে নদীর মাঝখানে, পানি কম থাকায় ঘাটে ভিড়তে পারছে না। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সব ধরনের বয়সের মানুষ নদীতে হাঁটু পানিতে নেমে লঞ্চে উঠছে।

স্থানীয়রা জানায়, এবার নভেম্বর থেকে পানি কমতে থাকায় বরিশাল মেহেন্দীগঞ্জ রুটের, আড়িয়াল খাঁ নদীর বুখাইনগরের ঘাটে আর লঞ্চ নামতে পারছে না।

যাত্রীবাহী লঞ্চ প্রিন্স অব মনপুরার মাস্টার আবু হানিফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডুবোচরের কারণে ইলিশা থেকে মজু চৌধুরীর ২৩ কিলোমিটার পথ ৩১ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে। এর ফলে অতিরিক্ত সময় লাগছে, খরচও বেড়ে গেছে।'

সুন্দরবন-১০ লঞ্চের মাস্টার মজিবর রহমান বলেন, 'ড্রেজিং করা হলেও ঢাকা-বরিশাল রুটের বামনার চর, মিয়ার চর দ্রুত ভরাট হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। ফলে এই সমস্ত অংশে চলাচলের জন্য জোয়ারের অপেক্ষা করতে হয়।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, 'ঢাকা বরিশাল রুটের বামনার চর, হিজলার মিয়ার, উলানিয়ার কালীগঞ্জ এলাকায় নাব্যতা হ্রাসের ফলে লঞ্চ আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া বরিশাল-ভোলা রুটের সাহেবের হাট খাল, বরিশাল- মেহেন্দীগঞ্জ রুটের পাতারহাট লঞ্চঘাট, নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে।'

'বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটের ৭-৮ টি পয়েন্টে ডুবোচরের কারণে নৌ চলাচল বিঘ্ন হচ্ছে, এর মধ্যে ভোলার ইলিশা থেকে মজু চৌধুরীর ঘাটে যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ছেন,' বলেন তিনি।

এ ছাড়া পটুয়াখালী ও ঢাকা রুটের শিয়ালঘুনী, কবাই, মুরাদিয়া লাউকাঠী ও পটুয়াখালী লঞ্চঘাটে নাব্যতা ব্যাপকভাবে কমে গেছে বলে জানা গেছে।

নাব্যতা সংকটের কারণে কীর্তনখোলা নদীতে ফেরি চলাচল ব্যাহত হয়। ছবি: টিটু দাস/স্টার

এদিকে সঠিক পরিকল্পনার অভাব ও নীতি নির্ধারকদের অনাগ্রহের কারণেই এই সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন আবুল হাশেম।

তিনি বলেন, 'ড্রেজিংয়ের মাটি কাটার হিসেব হবে ভাটার সময় ধরে, কিন্তু সেরকম না হওয়ার ফলে মাটি কাটলেও নাব্যতা না থাকায় লঞ্চ চলাচলে সমস্যা রয়ে যায়। এই ড্রেজিং অনেকটাই লোক দেখানো, কাজের কাজ কিছু হয় না।'

'আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সার্ভে করেই ড্রেজিং করতে হবে। তা না হলে এ সমস্যার সমাধান হবে না,' বলেন তিনি।'

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বরিশাল ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, 'বর্তমানে ৪টা ড্রেজার খনন করছে। আরও ৬টি ড্রেজার আমাদের হাতে রয়েছে। যে জায়গাগুলোতে সমস্যা হচ্ছে সেগুলো চিহ্নিত করে ২৫টি পয়েন্টে ৩০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত অর্ধেক ডেজিং হয়েছে। এবার ড্রেজিং করে নদীতে মাটি ফেলা হচ্ছে না। এ ছাড়া, আগে একটি জরিপ করা হয়েছে যে কোথায় কোথায় সমস্যা। তখন আমরা চালকদের মতামতও নিয়েছি।'

'যেসব জায়গায় সমস্যা আছে সেখানে সিগন্যাল স্থাপন করা হয়েছে। সিগন্যাল দেখে লাইনে চললে সমস্যা হওয়ার কথা না,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

13 former BDR members walk out of jail after 16 years

Family members expressed overwhelming joy at the release, reuniting with their loved ones

29m ago