ফুলপরীর ওপর ছাত্রলীগ নেত্রীর নির্যাতনের সত্যতা পেয়েছে ২ তদন্ত কমিটি
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফুলপরীকে নির্যাতন ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৬ শিক্ষার্থীর জড়িত থাকার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পৃথক ২টি তদন্ত কমিটি।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত অপর ৫ শিক্ষার্থী হলেন তাবাসসুম, লিমা, উর্মি, মুয়াবিয়া ও মীম।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেয়েছে যে ফুলপরীর ওপর হওয়া নির্যাতন ও লাঞ্ছনার ঘটনা রোধে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষের গুরুতর অবহেলা ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীর অভিযোগ পাওয়ার পরও প্রভোস্ট ও হাউস টিউটর কোনো ব্যবস্থা নেননি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও কোনো ব্যবস্থা নেননি।
আজ মঙ্গলবার এক রিট আবেদনের শুনানিকালে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চের সামনে তদন্ত প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
রিট আবেদনটির ওপর আদেশের জন্য আগামীকাল দিন ধার্য করেছেন বেঞ্চ।
হাইকোর্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে আগামীকাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-বিধান উপস্থাপন করতে বলেছেন।
রিট আবেদনকারী অ্যাডভোকেট গাজী মো. মহসিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি ফুলপুরীর ওপর নির্যাতনের ঘটনা সত্য পেলেও এ ঘটনায় প্রক্টর, প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরের অবহেলার বিষয়ে কিছু বলেনি।
তিনি জানান, জেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের উদাসীনতা এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট হলের হাউস টিউটর ও প্রভোস্টের অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরীকে নির্যাতন ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় পৃথক ২টি তদন্ত প্রতিবেদন গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়।
রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসককে ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
আদেশে বলা হয়, জেলা প্রশাসক ৩ দিনের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট), জেলা জজ কর্তৃক মনোনীত একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা (জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপকের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করবে। কমিটি গঠনের ৭ দিনের মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মাধ্যমে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন এই আদালতে দাখিল করবে।
হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাদের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে এই আদালতে জমা দিতে বলেছেন।
বেঞ্চ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ভুক্তভোগী ইচ্ছা করলে এই ঘটনায় ফৌজদারি মামলা করতে পারেন।
তদন্তকালে ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও নির্যাতনের ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী ছাত্রলীগ কর্মী তাবাসসুম ইসলামকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না দিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলা হয়।
তদন্ত কমিটি তদন্তের প্রয়োজন মনে করলে তাদের (সানজিদা ও তাবাসসুম) জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) বলা হয়েছে, কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেন এই ঘটনার কোনো ভিডিও আপলোড করা না হয়, সে বিষয়টি দেখতে।
এ ছাড়া, এই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে তাদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী মো. মহসিনের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেঞ্চ এ নির্দেশনা ও রুল দেন।
Comments