মুক্তচিন্তার পথিক: রেহমান সোবহান

রেহমান সোবহান। স্কেচ: সজীব

প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছরে পদার্পণে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার প্রচার ও প্রসারে নিরলস কাজ করা ১২ কীর্তিমানকে 'সেনটিনেল অব ফ্রিডম অব থট' সম্মাননা দিচ্ছে দ্য ডেইলি স্টার।

আজ শনিবার ঢাকার র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার পাটাতন তৈরিতে অগ্রগামী এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবন্ধ এই ১২ সূর্যসন্তানকে সম্মাননা দেওয়া হবে।

তাদেরই একজন রেহমান সোবহান

অধ্যাপক রেহমান সোবহান একজন কিংবদন্তি অর্থনীতিবিদ, প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী এবং চিন্তার স্বাধীনতার নিরলস সমর্থক। তার অসাধারণ কর্মজীবনজুড়ে তিনি সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন এবং সত্য ও ন্যায়বিচারের নির্ভীক অনুসন্ধানের মাধ্যমে কয়েক প্রজন্মের চিন্তাবিদদের অনুপ্রাণিত করেছেন।

১৯৩৫ সালে কলকাতায় জন্ম নেওয়া রেহমান সোবহান বাংলাদেশের স্বাধীনতার অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। গত শতকের ষাটের দশকের গোড়ার দিকে তিনি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে গবেষণা ও এ বিষয়ে সংবাদপত্রে লেখালেখির জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। তার এসব উদ্যোগেই 'দুই অর্থনীতি' তত্ত্ব জনপ্রিয়তা পায়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি তৈরি হয়।

ড. কামাল হোসেন ও হামিদা হোসেনের সহযোগিতায় রেহমান সোবহান ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন 'ফোরাম'র গোড়াপত্তন করেন। এই প্রকাশনা বাঙালির জাতিগত আকাঙ্ক্ষা, সামরিক ও ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের ধারণার বিরুদ্ধাচরণ এবং সর্বোপরি, পল্লী অঞ্চল ও শ্রমিক সম্প্রদায়ের সদস্যদের নানা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রেহমান সোবহান প্রবাসী সরকারের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন এবং বৈশ্বিক সমর্থন ও সহায়তা আদায়ের জন্য নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যান।

স্বাধীনতার পর তিনি পরিকল্পনা কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এবং যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় অমূল্য অবদান রাখেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে দীর্ঘ ২০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বাংলাদেশের অগণিত ভবিষ্যৎ অর্থনীতিবিদকে অনুপ্রাণিত করেছেন। অসংখ্য বই, গবেষণাপত্র ও প্রবন্ধের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার নাম। তিনি একাধারে একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক ও অসামান্য বক্তা। তার কিছু মৌলিক কাজের মধ্যে আছে 'দ্য ক্রাইসিস অব এক্সটারনাল ডিপেনডেন্স'', 'রিথিংকিং দ্য রোল অব দ্য স্টেট ইন ডেভেলপমেন্ট: এশিয়ান পারসপেক্টিভস' ও 'চ্যালেঞ্জিং দ্যা ইনজাস্টিস অব পভার্টি: এজেন্ডাস ফর ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন সাউথ এশিয়া'। তার ২ খণ্ডের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'আনট্রানকুইল রিকালেকশানস' এ শৈশব থেকে শুরু করে তার জীবনের বুদ্ধিবৃত্তিক যাত্রা, তৎকালীন পাকিস্তানের ২ অংশের মাঝে বাড়তে থাকা বৈষম্য, বাংলাদেশের গঠন ও স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের উন্নয়নের এক অসামান্য বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

রেহমান সোবহানের অপর পরিচয় হচ্ছে তিনি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান এমন একজন মহান ব্যক্তিত্ব, যার জীবন ও কর্ম তাকে বুদ্ধিবৃত্তিক কৌতূহল, স্বাধীন চিন্তাভাবনা এবং স্বাধীনতার অনুসন্ধানকে মূল্য দেয় এমন জনগোষ্ঠীর জন্য অনুপ্রেরণার উৎসে পরিণত করেছে। একজন প্রথম সারির বুদ্ধিজীবী ও জাতির পথপ্রদর্শনকারী বিবেক হিসেবে রেহমান সোবহানের অতিমানবীয় অবদানের জন্য দ্য ডেইলি স্টার গর্বের সঙ্গে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।

Comments

The Daily Star  | English

Climate finance: $250b a year needed

COP29 draft deal says rich nations should pay the amount to fight climate change

10m ago