মুক্তচিন্তার পথিক: রফিকুন নবী

রফিকুন নবী। স্কেচ: সজীব

প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছরে পদার্পণে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার প্রচার ও প্রসারে নিরলস কাজ করা ১২ কীর্তিমানকে 'সেনটিনেল অব ফ্রিডম অব থট' সম্মাননা দিচ্ছে দ্য ডেইলি স্টার।

আজ শনিবার ঢাকার র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার পাটাতন তৈরিতে অগ্রগামী এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবন্ধ এই ১২ সূর্যসন্তানকে সম্মাননা দেওয়া হবে।

তাদেরই একজন রফিকুন নবী।

রফিকুন নবী বাংলাদেশের শিল্প জগতের এক মহিরুহ ও মুক্তচিন্তা প্রকাশের প্রতীক। 'রনবী' নামেই অধিক পরিচিত তিনি। তার আঁকা কার্টুনগুলোতে প্রায়ই 'টোকাই' চরিত্র দেখা যায়। অমর এই চরিত্র সমাজের বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতির তীব্র সমালোচক। কখনো কখনো সে জাতির বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সেসব বিষয় নিয়ে উজ্জীবিত কথোপকথন চালায়, যেগুলোকে সাধারণত ধামাচাপা দেওয়া হয়।

রনবী ১৯৪৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জন্ম নেন। বিভিন্ন রঙ ও মাধ্যমের ব্যবহারে, সহজাত প্রতিভার প্রকাশ ঘটিয়ে তিনি পল্লী অঞ্চলের কঠোর পরিশ্রমী জনগণের দৈনন্দিন সমস্যাগুলোকে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ক্যানভাসের ওপর প্রিন্ট থেকে পেইন্টিং, জলরঙ থেকে তেলরঙ কিংবা অ্যাক্রিলিক রঙের ব্যবহারে তৈরি হয়েছে রনবীর অসংখ্য মুগ্ধতা জাগানিয়া চিত্রকর্ম। এসব ছবিতে তিনি রঙ ও কম্পোজিশনে অসামান্য দক্ষতা ও প্রতিভার প্রকাশ ঘটিয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলোকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার ছবিগুলো শুধু দেখতেই চমৎকার নয়, একইসঙ্গে এগুলোর মাঝে রয়েছে শক্তিশালী সব বার্তা, যেগুলো সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে এগুলোতে পরিবর্তন আনতে উৎসাহ জাগায়।

১৯৭৮ সালে রনবী প্রথমবারের মতো তার বিখ্যাত কার্টুন চরিত্র 'টোকাই' কে সবার সামনে নিয়ে আসেন। টোকাই একটি অবহেলিত শিশু চরিত্র, যার রয়েছে জীবন সম্পর্কে বিস্তৃত অভিজ্ঞতা। এছাড়াও, টোকাইর আছে এক অনন্য ক্ষমতা, যার মাধ্যমে সে খোলাখুলিভাবে সমাজের অবিচার ও অনিয়ম সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারে। এসব মন্তব্যে তার অসামান্য রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায় এবং এগুলোর মাধ্যমে দর্শকরা ভিন্নভাবে চিন্তা করতে ও তাদের চারপাশের জগতের সঙ্গে আরও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ হন।  

অংকনশিক্ষার জগতে রফিকুন নবীর প্রভাব কিংবদন্তির চেয়ে কম কিছু নয়। বহু বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক হিসেবে তিনি অসংখ্য মানুষের প্রিয়ভাজন। তিনি অসংখ্য উচ্চাভিলাষী ও উঠতি শিল্পীকে সৃজনশীলতার প্রথাগত সীমানা ভাঙার দীক্ষা দিয়েছেন।

দ্য ডেইলি স্টার সংস্কৃতি জগতের এই অসামান্য ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে সম্মানিত বোধ করছে।

Comments

The Daily Star  | English

Netanyahu says Israel close to meeting its goals in Iran

JD Vance says US at war with Iran's nuclear programme, not Iran

18h ago