মুক্তচিন্তার পথিক: যতীন সরকার
প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছরে পদার্পণে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার প্রচার ও প্রসারে নিরলস কাজ করা ১২ কীর্তিমানকে 'সেনটিনেল অব ফ্রিডম অব থট' সম্মাননা দিচ্ছে দ্য ডেইলি স্টার।
আজ শনিবার ঢাকার র্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার পাটাতন তৈরিতে অগ্রগামী এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবন্ধ এই ১২ সূর্যসন্তানকে সম্মাননা দেওয়া হবে।
তাদেরই একজন যতীন সরকার।
যতীন সরকার একজন মার্কসবাদী বিদ্বান, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী, যিনি চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি অবিচল উৎসর্গের জন্য পরিচিত। তিনি ১৯৩৬ সালে নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন।
যতীন সরকার সব সময়ই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার বলিষ্ঠ সমর্থক এবং তিনি বৈষম্য, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও সব ধরনের সামাজিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি নির্ভীকভাবে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হয়েছেন এবং অগণিত মানুষকে তার পথ অনুসরণ করার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় যতীন সরকার ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদে নেত্রকোনায় বিক্ষোভের আয়োজনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
যতীন সরকার আজীবন প্রগতিশীল রাজনীতির প্রতি নিবেদিত ছিলেন। তিনি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে তিনি ১ বছর কারাগারে কাটাতে বাধ্য হন। বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও যতীন সরকার তার নীতির প্রতি অবিচল থেকেছেন এবং পরিবর্তন ও অগ্রগতির কণ্ঠস্বর হিসেবে তার ভূমিকা অব্যাহত রেখেছেন।
যতীন সরকার তার বিস্তৃত কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রেক্ষাপটে একটি অবিস্মরণীয় ছাপ রেখে গেছেন। তার কালজয়ী গ্রন্থ 'পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন' একটি স্মৃতিকথা, যেখানে তিনি পাকিস্তানের ধারণার বিবর্তন এবং পরবর্তীকালে এর পতনের বিষয়ে একটি মনোমুগ্ধকর ও আলোকিত দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানিয়েছেন। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে 'বাংলাদেশের কবিগান', 'বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য' এবং 'সংস্কৃতির সংগ্রাম'।
দ্য ডেইলি স্টার সুবিধাবঞ্চিতদের অধিকার রক্ষাকারী হিসাবে যতীন সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার নীতির প্রতি তার আজীবনের অবিচল অঙ্গীকারকে উদযাপন করছে।
Comments