আ. রউফ চৌধুরী: একজন ক্যারিশমাটিক শিল্প উদ্যোক্তার প্রয়াণ

আ. রউফ চৌধুরী, র‍্যাংগস গ্রুপ, ব্যাংক এশিয়া,
আ. রউফ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

চলে গেলেন র‌্যাংগস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আ. রউফ চৌধুরী। শিল্প উদ্যোগে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এই মানুষটি বহু মানুষের হৃদয়ে ভাস্বর হয়ে থাকবেন যারা তাকে একজন অভিভাবকের মর্যাদায় দেখেন।

আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকায় নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

রউফ চৌধুরীর হাত ধরে দেশে গড়ে উঠেছে ৫০টির মতো প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আছে অটোমোবাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, আবাসন, তথ্যপ্রযুক্তি, গভীর সাগরে মৎস্য আহরণ, টেলিকমিউনিকেশন, ইলেকট্রনিকস, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ব্যাংক ও বিমা খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি র‍্যাংগস গ্রুপ ও সি রিসোর্সেস গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন যার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি থেকে। ১৯৭৯ সালে নিজের ব্যবসা শুরু করেন তিনি।

রউফ চৌধুরীর সুদূরপ্রসারী চিন্তাধারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্প ও বাণিজ্যে নতুন মাত্রার সূচনা করে।

রউফ চৌধুরী মর্যাদাপূর্ণ ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্টে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তিনি দেশের শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মিডিয়াওয়ার্ল্ড লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন।

তার নেতৃত্বে ১৯৯৯ সালে কানাডার ব্যাংক অব নোভা স্কশিয়ার বাংলাদেশ কার্যক্রম অধিগ্রহণ করে ব্যাংক এশিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যাংক এশিয়া পরে পাকিস্তানের মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের স্থানীয় কার্যক্রমও অধিগ্রহণ করে।

রউফ চৌধুরীর সুদীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা এবং গতিশীল নেতৃত্ব ব্যাংক এশিয়াকে উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধির ধারায় নিয়ে গেছে। ব্যাংকটি এখন ৮০ লাখের বেশি অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে আর্থিক সেবা দিচ্ছে যার মধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হোল্ডার সংখ্যা ৫৫ লাখ।

রউফ চৌধুরীর হাত ধরে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ব্যাংক এশিয়া দেশে প্রথমবারের মতো এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে। ব্যাংকটির সাড়ে ৫ হাজার এজেন্টের মাধ্যমে ৩৫ লাখের বেশি গ্রাহক আর্থিক সেবা পাচ্ছেন। দেশের জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে অসামান্য ভূমিকা রাখা রউফ চৌধুরী 'নিওব্যাংক' এর ধারণা নিয়ে আসেন, যেখানে ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন হওয়ায় ব্যাংকের কোনো শাখা স্থাপনের প্রয়োজন হয় না। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা অ্যাপের মাধ্যমে সব ধরনের লেনদেন করতে পারেন।

এসবের পাশাপাশি অটোমোবাইল, টেলিকম, ফার্মাসিউটিক্যালস ও পেট্রোলিয়াম খাতেও রউফ চৌধুরী বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিজ্ঞতার অধিকারী ছিলেন। বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির আবাসিক ব্যবস্থাপক ছিলেন তিনি।

যমুনা অয়েল কোম্পানিতে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ে থাকায় তিনি ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম পণ্যের বাজার উন্নয়নে অবদান রাখেন। তার হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় র‍্যাংগস ও সি রিসোর্সেস গ্রুপের ৩৫টি প্রতিষ্ঠান।

স্বল্প সময়ের মধ্যে দুটি গ্রুপের কোম্পানির বিশাল সাফল্য রউফ চৌধুরীর ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব এবং প্রগতিশীল মানসিকতার প্রমাণ দেয়।

 

Comments