পর্যটকে জমজমাট কুয়াকাটা

আবাসিক হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগ

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ভিড়। ছবি: স্টার

শুক্র ও শনিবার—২ দিন সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে শবে মেরাজ এবং ১ দিনের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ছুটি। সব মিলিয়ে দীর্ঘ ছুটি পেয়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ভিড় জমিয়েছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিমে মীরা বাড়ি পর্যন্ত এবং পূর্ব দিকে জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন এলাকার বিশাল অংশজুড়ে পর্যটকের উপস্থিতি দেখা গেছে। বাড়তি চাপের কারণে পর্যটকবাহী বাসগুলোকে সৈকত থেকে অন্তত ২ কিলোমিটার দূরে পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কের পাশের ধানখেতে পার্কিং করতে দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার সকাল থেকে সেখানে ৩ শতাধিক পর্যটকবাহী বাস সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আনাগোনায় সৈকত ও আশপাশের এলাকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে, পর্যটকের উপস্থিতি বেশি হওয়ার সুযোগে আবাসিক হোটেল ও খাবার রেস্তোরাঁগুলোতে বাড়তি অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা।

পর্যটকদের ব্যাপক উপস্থিতিতে কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট, সীমা বৌদ্ধবিহার, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধবিহার, ইলিশ পার্ক, লেম্বুর চর, শুঁটকিপল্লি, গঙ্গামতী সৈকত, জাতীয় উদ্যানসহ আকর্ষণীয় সব পর্যটন স্টলগুলো মুখরিত। পর্যটকদের অনেকেই সাগরের নোনাজলে নেমে গোসল করছেন। অনেকে আবার সৈকতের ছাতাযুক্ত চেয়ারে বসে সময় কাটাচ্ছেন। আবার অনেকেই ট্রলারে করে গঙ্গামতী সৈকত, ফাতরার বন ও আশার চর ভ্রমণে যাচ্ছেন।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ভিড়। ছবি: স্টার

সৈকতে পর্যটকদের আকর্ষণীয় খাবার ফিশ ফ্রাই বা ভাজা মাছ। আবু বকর নামে এক ফিশ ফ্রাই বিক্রেতা বলেন, 'পর্যটক বৃদ্ধির কারণে বেচা-কেনাও বেড়েছে। টুনা ফিশ, কোরাল, চিংড়ি, রুপচাঁদা প্রভৃতি সামুদ্রিক মাছের ফ্রাই বেশি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের অনেকেই দিনে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মাছভাজা বিক্রি করেছেন।'

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ দ্য ডেইলি স্টাকে বলেন, 'পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই কুয়াকাটায় পর্যটকের আগমন কয়েক গুণ বেড়েছে। এ কারণে আবাসিক হোটেলগুলোসহ পর্যটনকেন্দ্রিক সবকিছুর ওপর চাপ পড়েছে। প্রতি সপ্তাহের ছুটিতে এমনিতেই বেশি পর্যটক আসেন এখানে। তার ওপর এবার পবিত্র শবে মেরাজ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ছুটি থাকায় পর্যটকের ভিড় আরও বেড়েছে।'

কুয়াকাটায় একটি মাত্র সড়ক থাকায় যানবাহনের ভিড় সামলাতে সৈকত থেকে প্রায় ২ কিলোমটিার দূরে পর্যটকবাহী বাসগুলোতে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখানে বাসস্ট্যান্ড না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের বাস থেকে নেমে ভ্যান বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে হোটেল বিংবা সৈকতে যেতে হচ্ছে। এতে শিশু ও নারী পর্যটকের বেশি ভোগান্তি হচ্ছে।

পর্যটক বৃদ্ধির সুযোগে এখানকার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সেবায় বেশি মূল্য নিচ্ছেন বলেও পর্যটকদের অভিযোগ রয়েছে। ফরিদপুর থেকে আগত পর্যটক আব্দুস সাকুর ডেইলি স্টারকে জানান, ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনি কুয়াকাটায় বেড়াতে এসেছেন। এর আগেও কয়েকবার তিনি এখানে এসেছেন। তবে এবার আবাসিক খাবার হোটেলগুলোতে সেবার মূল্য কিছুটা বেশি।

কুয়াকাটায় পর্যটকদের ভিড়। ছবি: স্টার

'আগে কুয়াকাটার হোটেলের যে কক্ষের ভাড়া ছিল ৩ হাজার টাকা, এখন সেই কক্ষের ভাড়া রাখা হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। ভাড়া অতিরিক্ত বাড়ানো হয়েছে। রেস্তোরাঁগুলোতেও খাবার বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে। মাঝারি আকারের রূপচাঁদা মাছ আগে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন সেই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায়।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুম্মান ইমতিয়াজ তুষার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পর্যটকের কুয়াকাটা সৈকতে আগমন ঝামেলামুক্ত করতে লতাচাপলী ইউনিয়নের আমখোলা পাড়া অথবা মিশ্রিপাড়া থেকে বিকল্প সড়ক তৈরি উচিত হবে। এতে পর্যটকেরা সহজেই কুয়াকাটা সৈকতে যেতে পারবেন। এ ছাড়া নির্মাণাধীন কুয়াকাটা বাস টার্মিনালের কাজও দ্রুত শেষ করা দরকার। এতে পর্যটকদের কুয়াকাটা ভ্রমণ অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্য ও সুখকর হবে।'

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৈদ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভব সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যটকবাহী যানবাহন, আবাসিক হোটেলগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া, রেস্তোরাঁয় পরিবেশিত খাবারসহ সবকিছুতে তদারকি করা হচ্ছে। পর্যটকের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে কেউ কেউ অতিরিক্ত সেবা মূল্য আদায়ের চেষ্টা করছেন। কারও বিরুদ্ধে এ রকম অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

13h ago