মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীর মৃত্যু, ঋণের জালে আবদ্ধ পরিবার

মো. হৃদয় মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত

মাত্র ১ মাস আগে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ঋণ করে অভিবাসী কর্মী হয়ে মালয়েশিয়ায় আসে ২১ বছরের টগবগে প্রাণোচ্ছল যুবক মো. হৃদয় মণ্ডল। সেই ঋণ পরিশোধ তো দূরে থাক, পরিবারের মাসের খরচ পাঠানোর আগেই দুর্ঘটনায় নিভে গেল তার প্রাণ।

গত ২৮ জানুয়ারি কারখানায় কাজ করার সময় উপর থেকে ভারী মেশিন পড়ে গুরুতর আহত হন হৃদয়। ১৩ দিন চিকিৎসাধীন থেকে গত শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায় মালয়েশিয়ার ক্লাং হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

হৃদয় মণ্ডল সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল উত্তরপাড়া গ্রামের মরহুম আব্দুস সালামের ছেলে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ জানুয়ারি মেগাটেক্স কোম্পানিতে বৈধ কর্মী ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়ায় যান হৃদয় মণ্ডল। সেলাংগরের বানতিং এলাকায় একটি প্লাস্টিক কারখানায় চাকরি পান তিনি।

হৃদয়ের বোন সালমা খাতুন বলেন, 'আমরা ২ ভাই ১ বোন। আমাদের বড় ভাই বছর দশেক আগেই মারা গেছেন। পরিবারের একমাত্র ভরসা ছিল ছোট ভাই হৃদয়। অনেক আশায় ঋণ করে হৃদয়কে মালয়েশিয়ায় পাঠাই। এই ভাইটাকেও আমরা হারালাম।'

নিহতের মামা আনোয়ার হোসেন বলেন, '৪ লাখ টাকা ঋণ করে মাত্র ১ মাস আগে তাকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। এখন তার পরিবার চলবে কীভাবে আর ঋণ শোধ করবে কীভাবে? এমনিতেই এই পরিবারের কোনো আয় রোজগার নেই, জমিও নেই।'

জামতৈল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন শেখ বলেন, 'ঘটনাটি মর্মান্তিক। এই পরিবারটি একেবারেই অসহায়। একজন নিঃস্ব হয়ে গেল। হৃদয়ের বিধবা মা হুসনা খাতুন ধানের চাতালে কাজ করে কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের ভরণ পোষণ করতেন। কিন্তু একে একে ২ ছেলেই তাকে ছেড়ে চলে গেল।'

জামতৈল ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, 'আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই পরিবারের জন্য যথাসাধ্য সহায়তা করব। ঋণ করে বিদেশে না যেতে উপদেশ আমরা দেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিদেশে যাওয়ার খরচ যোগাতে শেষ পর্যন্ত ঋণ করতেই হয়।'

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের জেলা সমন্বয়কারী ফাহমিদা আহসান বলেন, 'হৃদয়ের পরিবারের পাশে আমরা আছি। তার বিদেশ যাত্রার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান করব, যেন ক্ষতিপূরণ পায়।'

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম শাখার প্রথম সচিব এসএম জাহিদুর রহমান বলেন, 'হাইকমিশন থেকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ার শ্রম আইন অনুযায়ী হৃদয় হোসেন ক্ষতিপূরণসহ সব সুবিধা পাবেন।'

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে গমনের অতিরিক্ত খরচের বিষয়টি নজরে এসেছে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. আনোয়ার ইব্রাহিমেরও। গত বুধবার দেশটির মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে আসতে নেপালের শ্রমিকদের খরচ মাত্র ৩ হাজার ৭০০ রিঙ্গিত। কিন্তু বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার শ্রমিকদের জন্য তা ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার রিঙ্গিত।'

বিদেশি কর্মী নিয়োগে তৃতীয় পক্ষের (এজেন্সি) হস্তক্ষেপ বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়ে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, এজেন্টদের এই উচ্চ ফি 'আধুনিক দাসত্বের' সমতুল্য।

লেখক: মালয়েশিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক

 

Comments

The Daily Star  | English

ICT orders investigation of 7 cops, army man by Dec 19

"I was not related to Aynaghar," Ziaul told the International Crimes Tribunal (ICT) where he was produced today

2h ago