পাঠ্যপুস্তকে ভুল সবচেয়ে বড় ইস্যু, জাতির অস্তিত্বের ইস্যু: মির্জা ফখরুল

বৃহস্পতিবার দুপুরে রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

'পাঠ্যপুস্তকের ভুল নিয়ে ইস্যু বানাবেন না' শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'অবশ্যই আমি ইস্যু বানাব। অবশ্যই এটা একটা সবচেয়ে বড় ইস্যু, এটা আমার জাতির অস্তিত্বের ইস্যু।'

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে 'অপরিণামদর্শী কারিকুলাম ও মানহীন পাঠ্যপুস্তক–দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধ্বংসের নীলনকশা' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সভায় সরকার প্রণীত 'মানহীন ও ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক' বাতিলে দেশের শিক্ষক সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, 'আজ আমার স্বকীয়তা, আমার স্বাতন্ত্র্য, আমার ঐতিহ্য, আমার কৃষ্টি, আমার সংস্কৃতিকে রক্ষা করবার জন্য আমি কেন উঠে দাঁড়াচ্ছি না, কথা বলতে হবে। বিএনপির শিক্ষা বিভাগ ও ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) এ নিয়ে কাজ করছে। এই প্রতিবাদগুলোকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে সেমিনার করবেন, প্রতিটা জেলা সদরে এ বিষয়ে সেমিনার করবেন, আপনারা প্রয়োজনে সবাইকে নিয়ে রাস্তায় নামবেন। অবিলম্বে এই পাঠ্যপুস্তকগুলো বাতিল করতে হবে। সত্যিকার অর্থেই আমার জাতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আমার জাতির যা প্রকৃত ইতিহাস, আমার জাতিকে গঠন করার জন্য যা প্রয়োজন সেগুলো সামনে নিয়ে আসতে হবে।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজ মূল কথা একটাই, উঠে দাঁড়ান। উঠে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে আপনাকে কেউ রক্ষা করবে না। বাইরে থেকে কেউ এসে স্যাংশন দিয়ে আপনাকে রক্ষা করবে না। আপনার জন্য কেউ নতুন করে কিছু তৈরি করে দেবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না শিক্ষিত সমাজ, বুদ্ধিজীবীরা রুখে না দাঁড়াচ্ছেন, মুক্তি মিলবে না এটা ইতিহাস, এটাই ইতিহাস।'

আলোচনা সভায় তিনি বলেন, 'আমি অনুরোধ করব আজ এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদের যে বীজ আপনারা বপন করেছেন এটাকে ছড়িয়ে দেন। যেন আমরা সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের জাতির যে সত্ত্বা, তার যে ঐহিত্য তার যে কৃষ্টি, আমার যে স্বকীয়তা, আমার যে স্বতন্ত্র  সেটাকে যেন রক্ষা করতে পারি। আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যেন আমরা সেভাবে তৈরি করতে পারি। এটা খু্বই জরুরি।'

'এটাকে (পাঠ্যপুস্তকে ভুল) ইস্যু বানাবেন না' শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আপনি আমার শেকড় নিয়ে টান দেবেন, আর আমি ইস্যু বানাব না, আমি কথা বলব না। আপনি আমার চরিত্রকে বদলে দিতে চাইবেন, আমার অবয়ব বদলে দিতে চাইবেন, আমার স্বাতন্ত্র্যকে বদলে দিতে চাইবেন আর আমি ইস্যু বানাব না।'

'অবশ্যই আমি ইস্যু বানাব। অবশ্যই এটা একটা সবচেয়ে বড় ইস্যু, এটা আমার জাতির অস্তিত্বের ইস্যু,' যোগ করেন তিনি।

বিএনপি এবং ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম ও অধ্যাপক শাহ শামীম আহমেদ।

শিক্ষকরা দেশের গর্ব উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমি আজ এখানে এসে অনেক সাহস পেয়েছি। আমার তো মাঠের লোক, মাঠে কাজ করি, মাঠে রাজনীতি করি। আপনারা আমাদের সম্মান, আপনারা আমাদের গর্ব।'

'আপনারা যখন সামনে এসে দাঁড়ান, কথা বলেন, পাশে দাঁড়ান আমরা অনেক সাহস পাই। আমাদের জোর সাহস আরও বেড়ে যায়। আমরা তখন আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে আরও দৃঢ়চেতা হই, সামনের দিকে এগিয়ে যাই,' বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এই লড়াইটা শুধু গণতন্ত্রের লড়াই না। এটা বিএনপির লড়াই না, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান যা-ই বলেন, তাদের লড়াই না। এই লড়াইটা জাতির অস্তিত্বের লড়াই।'

তিনি বলেন, 'গণতন্ত্র যদি না থাকে কোনোটাই হবে না। সেই গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা আমার প্রধান কাজ। সেটা হলে এই বিষয়গুলো আরও সহজ করে আমার মতো গঠন করতে পারব। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করি। ইতিমধ্যে মানুষ বেরিয়ে এসেছে। আপনারাও বেরিয়ে আসুন। আমার বিশ্বাস, ১৯৭১ সালে আমরা যেভাবে সবাই একজোট হয়ে আমাদের স্বাধিকারের জন্যে, আমার অস্তিত্বের জন্য, আমরা বেঁচে থাকার অধিকারের জন্য যেভাবে লড়াই করে সফল হয়েছিলাম, আমরা আবার লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সফল হতে পারি এই প্রত্যাশা আমি করছি।'

বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সহ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক তাজমেরী এস ইসলাম, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, ইউট্যাব মহাসচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব জাকির হোসেন প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন।

Comments

The Daily Star  | English
Chinese firms bullish on Bangladesh’s manmade fibre

Chinese firms bullish on Bangladesh’s manmade fibre

Non-cotton garments are particularly lucrative, fetching higher prices than traditional cottonwear for having better flexibility, durability

14h ago