ডান্ডাবেড়ি-হাতকড়ার অপব্যবহার বন্ধে সরকারকে আইনি নোটিশ

অপারেশন ডেভিল হান্ট
প্রতীকী ছবি। স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

আসামিদের অবৈধভাবে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরানো বন্ধ এবং ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন প্রণয়নের অনুরোধ জানিয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী।

আইনজীবীদের পক্ষে মো. আসাদ উদ্দিন স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিব, পুলিশ ও কারা মহাপরিদর্শকদের কাছে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো গাইডলাইন বা নিয়ম না থাকায় হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ির অপব্যবহার বাড়ছে।

লিগ্যাল নোটিশে আইনজীবীরা হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরানো আসামিদের জানাজায় অংশ নেওয়া এবং আদালতে হাজির করার কিছু ঘটনা উল্লেখ করেন।

লিগ্যাল নোটিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করেন আইনজীবীরা।

আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় গত ২০ ডিসেম্বরে ছবিসহ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। যেখানে দেখা যায়, গাজীপুরে একজন আসামি ডান্ডাবেড়ি পরিহিত অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়াচ্ছেন। তার পরপরই গত ১৭ জানুয়ারি ছবিসহ আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানেও দেখা যায়, শরীয়তপুরে আরেকজন আসামি একইভাবে ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়াচ্ছেন। এ সময়ের মধ্যেই একজন আইনজীবীসহ কয়েকজনকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে ঢাকা কোর্টে আনা হয়। এর কিছুদিন পূর্বে আরেকজন আইনজীবীকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে কোর্টে আনা হয়। এসব ঘটনা পত্র-পত্রিকা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। কাছাকাছি সময়ে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, তানভীর হাসান তানু, প্রবীর শিকদার, শিল্পী জে কে মজলিস এবং কয়েকজন শিশুসহ অনেক আসামিকে হাতকড়া পরানোর ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

আসাদ উদ্দিন বলেন, বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশনের প্রবিধান ৩৩০-এ হাতকড়া সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। সেখানে শুধুমাত্র পালিয়ে যাওয়া রোধ করতে যতটুকু প্রয়োজন তার বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কোনো শক্তিশালী বন্দী সহিংস অপরাধে অভিযুক্ত হয় বা কুখ্যাত হিসাবে পূর্ব পরিচিত হয় বা অসুবিধা সৃষ্টিতে উন্মুখ থাকে বা রাস্তা দীর্ঘ হয় বা বন্দী সংখ্যা অনেক বেশি হয় সেক্ষেত্রে হাতকড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। হাতকড়া না থাকলে দড়ি বা কাপড় ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ প্রবিধানের কোথাও ডান্ডাবেড়ি ব্যবহারের কথা নেই।

তিনি জানান, জেলকোড এবং কারা আইনে 'কারা অপরাধে'র বর্ণনার পাশাপাশি শাস্তি হিসাবে অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে হাতকড়া এবং ডান্ডাবেড়ি ব্যবহারের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ কারাভ্যন্তরে কয়েদীরা সংশ্লিষ্ট 'কারা অপরাধ' করলে তার শাস্তি হিসাবে এর ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া যেসব কয়েদী পলায়ন করে বা পলায়নে উদ্যত হয় বা ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে হাতকড়া বা ডান্ডাবেড়ি পরানো যাবে। এর বাইরে এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে বন্দী স্থানান্তরের সময় ক্ষেত্র বিশেষে এর ব্যবহার করা যেতে পারে। মূলত ডান্ডাবেড়ির ব্যবহার কেবলমাত্র জেল কোড এবং কারা আইনের আওতাধীন। আর বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশন অনুযায়ী প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কেবলমাত্র হাতকড়া ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কোনোভাবেই ডান্ডাবেড়ি নয়।

আসাদ উদ্দিন ভাষ্য, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেবলমাত্র আইনানুযায়ী ব্যতীত ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির ক্ষতি করা নিষিদ্ধ। অনুচ্ছেদ ৩৫(৫) অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না বা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না বা তার সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু আইনের এসব বিধানের বাইরে গিয়ে ডান্ডাবেড়ি এবং হাতকড়ার অপব্যবহার করা হচ্ছে। যা নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।

ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ইতোমধ্যে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি ব্যবহার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। সিটিজেন ফর ডেমোক্রেসি বনাম স্টেট অব আসাম মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, পুলিশ বা কারা কর্তৃপক্ষ কোনো আসামিকে হাতকড়া বা ডান্ডাবেড়ি পরাতে পারবে না। কোনো মারাত্মক এবং পলায়নোর আশঙ্কা আছে এমন আসামিকে এগুলো পরানো অত্যন্ত প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেটের বিশেষ অনুমতি ছাড়া কোনো আসামিকে হাতকড়া বা ডান্ডাবেড়ি পরানো যাবে না। ওয়ারেন্ট ব্যতীত কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলে এবং হাতকড়া পরানো আবশ্যক মনে হলে পুলিশ তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে আসা পর্যন্ত হাতকড়া পরাতে পারবে। পরবর্তী সময়ের জন্য অবশ্যই ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিতে হবে।

আমাদের দেশে এমন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা বা নীতিমালা না থাকায় ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়ার অপব্যবহার হচ্ছে। এতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তথা বিচার ব্যবস্থার ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, তিনি যোগ করেন।

নোটিশ প্রেরণকারী অন্য আইনজীবীরা হলেন মীর এ কে এম নুরুন্নবী, মো: জোবায়দুর রহমান, মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন, আল রেজা মোঃ আমির, মো. রেজাউল ইসলাম, কে এম মামুনুর রশিদ, মো. আশরাফুল ইসলাম এবং শাহীনুর রহমান।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

4h ago