শিকারিকে ছেড়ে দিলেন বনপ্রহরী, পরিযায়ী পাখি ভাগ করে নিলেন জনপ্রতিনিধিরা
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় হাকালুকি হাওরে বিষটোপ দিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিযায়ী পাখি হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় পাখি শিকারি মো. হুসেন আহমদকে আটক করা হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রহস্যজনক কারণে তাকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বনবিভাগের হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে। এমনকি শিকারিকে বাঁচাতে তিনি পাখি হত্যার প্রকৃত তথ্যও লুকিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, হত্যা করা পাখিগুলো জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা।
পাখি শিকারি মো. হুসেন আহমদ উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের মুর্শীবাদকুরা গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মো. হুসেন আহমদ হাকালুকি হাওরের একটি বিলে বিষটোপ দিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিযায়ী পাখি হত্যা করেন। গতকাল শনিবার সকালে তিনি পাখিগুলো বস্তায় ভরে স্থানীয় কাননগোবাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন পাখিসহ হুসেনকে আটক করেন। পরে তাকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে 'ভবিষ্যতে এ ধরনের গর্হিত কাজ করবেন না' মর্মে হোসেন মুচলেকা দেন। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, শিকারিকে ছেড়ে দেওয়ার পর পাখিগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন।
তবে পাখি শিকারি হুসেনের কাছ থেকে আদায় করা লিখিত মুচলেকায় উল্লেখ করা হয়েছে, শনিবার সকালে মো. হুসেন আহমদ নিজের জমিতে ধান রোপণ করতে গেলে ৩টি মরা পাখি পড়ে থাকতে দেখেন এবং তা বস্তায় ভরে স্থানীয় বাজারে নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন তাকে আটক করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অর্ধশতাধিক পাখি হত্যা করা হলেও শিকারিকে বাঁচাতে প্রকৃত তথ্য গোপন করেছেন বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন। এ ঘটনার পেছনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন প্রায়ই পাখি শিকারে জড়িত কাউকে আটক করলে উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হুসেন নিজের জমিতে ধান রোপণের সময় ৩টি মরা পাখি পান। এগুলো তিনি বাজারে নিয়ে এলে আমি তাকে আটক করি। পরে তাকে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি ভবিষ্যতে এ ধরনের গর্হিত কাজ আর করবেন না বলে মুচলেকা দেওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে ৩টি পাখি পানিতে ফেলে দেওয়া হয়।'
তবে পাখি শিকারিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন তিনি।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী সাঈব আহমদ ইয়াছের ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জমিতে মরে পড়ে থাকলে হুসেন আহমদ পাখিগুলো বাজারে নিয়ে আসবেন কেন? আর ৩টি পাখি বস্তায় ভরে আনতে হবে কেন? পাখিগুলো মরা হলে হুসেনকে মুচলেকা দিতে হবে কেন? এতেই প্রমাণ হয় যে, হুসেন পাখি হত্যা করে বিক্রির জন্য বস্তায় ভরে তা বাজারে নিয়ে এসেছেন।'
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'প্রায়ই হাওরে বিভিন্নভাবে পাখি হত্যা করা হচ্ছে। কখনো পাখি শিকারিরা ধরা পড়লে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই কাজটা জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরাই করছেন। যেখানে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় তারা কাজ করবেন, সেখানে তারা শিকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের ছেড়ে দিচ্ছেন। এতে শিকারিরা সাহস পাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কখনো পাখি নিধন বন্ধ হবে না।'
এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) রেজাউল করিম চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাকালুকি হাওরে পাখি শিকারের বিষয়টি শুনে খোঁজ নিয়েছিলাম। সেখানকার দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী আমাকে বলেছেন যে, মরা ৩টি পাখি নাকি পাওয়া গেছে। যিনি পেয়েছেন তার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।'
অভিযোগ আবার খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান তিনি।
Comments