অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্টের বিশ্বব্যাপী অবস্থান অষ্টম, বাংলাদেশের ১০১

২০২৩ সালের পাসপোর্ট সূচক
ছবি: সংগৃহীত

মাঝে-মধ্যেই বাংলাদেশের মন্ত্রীরা বলে থাকেন, দেশ সিঙ্গাপুর হয়ে গেছে বা দেশ জার্মানি-মালয়েশিয়ার মতো। অতি উৎসাহের সঙ্গে অনেক মন্ত্রী এ কথাও বলেন যে, সেদিন খুব দূরে নয় যেদিন আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে মানুষ কাজ করতে বাংলাদেশে আসবে।

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই এক মন্ত্রী বলেছেন, রাতে ঢাকা শহর ওপর থেকে দেখলে মনে হয় এটি ইউরোপের কোন এক দেশের রাজধানী।

বিশ্বের পরিসংখ্যান সংস্থাগুলোর তথ্য-গবেষণা প্রমাণ করে যে, মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য 'রাজনৈতিক ভাঁওতাবাজি' ছাড়া আর কিছু নয়।

কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি রাজ্যে '১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না'। অনুসন্ধানে জানা যায়, মন্ত্রীর তথ্যটি সত্য নয়। দ্য ডেইলি স্টারে এ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

লন্ডনভিত্তিক অভিবাসন, নাগরিকত্ব ও পরিকল্পনাবিষয়ক সংস্থা 'হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স' গত ১০ জানুয়ারি এক গবেষণামূলক তথ্য প্রকাশ করে। ওই তথ্য নতুন করে প্রমাণ করেছে, এখনো জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে কতটা পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। কতটা পিছিয়ে আছে দেশটির অর্থনীতি, শাসনপদ্ধতি ও মানুষের জীবনযাপন।

হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সর তথ্য ৩ মাস পরপর হালনাগাদ করে। একটি দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনযাপনের গতিশীলতা বিবেচনায় নিয়ে সে দেশের পাসপোর্টের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়।

গত ১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে অত্যাধুনিক বিশেষজ্ঞের ভাষ্য ও ঐতিহাসিক তথ্য নিয়ে হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স পাসপোর্টের সূচক নির্ধারণ করে আসছে।

২২৭ দেশের মধ্যে ১৯৯ দেশের পাসপোর্টের ভিসামুক্ত প্রবেশ তুলনা করতে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অথরিটির তথ্য ব্যবহার করা হয়।

একটি দেশের পাসপোর্টের শক্তির সঙ্গে সেই দেশের সার্বিক শক্তির সম্পর্ক আছে। পাসপোর্টের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে নাগরিকত্বের মূল্যায়ন হয়। এই সূচকের মাধ্যমে একটি দেশ সম্পর্কে জানা যায়। পাসপোর্টের এ সূচক দেশের অর্থনীতি, শাসন ব্যবস্থা ও দেশের মানুষের অবস্থাসহ অনেক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা হয়।

মনে করা হয়, যে দেশগুলোর পাসপোর্ট যত বেশি শক্তিশালী ওই দেশগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, অর্থনীতি ও শাসনপদ্ধতি তত বেশি শক্তিশালী। বিশ্বে ওই দেশগুলোর ইতিবাচক ভাবমূর্তি আছে।

যে সব দেশের পাসপোর্টের অবস্থান তলানিতে তাদেরকে উন্নত দেশগুলো নানাভাবে অবমূল্যায়ন করে থাকে। কোন প্রচারণাতেই সেই বাস্তবতা ঢেকে দেওয়া যায় না।

২০২৩ সালের হেনলি পাসপোর্ট সূচকে শীর্ষে আছে জাপান। জাপানিরা এখন বিশ্বের ২২৭ দেশের মধ্যে ১৯৩ দেশে ভিসা ছাড়া যেতে পারেন।

সূচকে সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ার পাসপোর্ট বিশ্বে দ্বিতীয় শক্তিশালী। জার্মানি ও স্পেন তৃতীয় অবস্থানে আছে। তারা ১৯০ দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার পান।

যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান যথাক্রমে ৬ ও ৭-এ। তাদের দেশের নাগরিকরা ভিসা ছাড়া যথাক্রমে ১৮৭ ও ১৮৬ দেশে প্রবেশ করতে পারেন।

অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্টের অবস্থান অষ্টম। এ দেশের নাগরিকরা ১৮৫ দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন।

বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্টধারী প্রায় ৭০ হাজার বাংলাদেশিও এই সুযোগ পেয়ে থাকেন।

পর্তুগাল থেকে পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন পর্যন্ত ৩৯ ইউরোপীয় দেশ অস্ট্রেলিয়ানদের ভিসা ছাড়াই প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।

নিউজিল্যান্ড, ফিজি ও ফরাসি পলিনেশিয়াসহ বার্বাডোস, কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ, জ্যামাইকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশগুলোয় যেতে অস্ট্রেলিয়ানদের ভিসার প্রয়োজন হয় না।

উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে ১৯ দেশে ও আফ্রিকার ১২ দেশে অস্ট্রেলিয়ানদের ভিসা ছাড়া যেতে পারেন।

এ ছাড়াও, অস্ট্রেলিয়ানরা ভিসা ছাড়া এশিয়ার ১০ দেশে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশ ভ্রমণ করতে পারেন।

কম্বোডিয়া, মিশর, লেবানন, প্যারাগুয়ে, সামোয়াসহ ৪০টিরও বেশি দেশে অস্ট্রেলিয়ানরা ভিসা বা ভিজিটর পারমিট পেতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে প্রবেশের সময় তাদেরকে ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরিটি নিতে হয়।

পাসপোর্ট সূচকে মোট ১০৯ দেশ আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০১তম। কসোভো ও লিবিয়াও একই অবস্থানে আছে।

হেনলি পাসপোর্ট সূচকে বাংলাদেশের গত বছরের তুলনায় ৩ ধাপ উন্নতি হয়েছে।

বাংলাদেশিরা ৪১ দেশ ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার পান। এশিয়ায় ভুটান, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলংকা ও পূর্ব তিমুর ছাড়াও আফ্রিকার ১৬, ওশেনিয়া অঞ্চলের ৭ ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের ১২ দেশে বাংলাদেশিদের ভিসামুক্ত প্রবেশের সুবিধা মেলে।

সূচক অনুসারে ভারত ৮৫তম অবস্থানে আছে। এই দেশের পাসপোর্টধারীরা ৬০ দেশে ভিসা ছাড়া যেতে পারেন।

গত ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত সূচকে বেশ কয়েকটি দেশ সম্পর্কে আকর্ষণীয় মন্তব্য ও তাদের ভবিষ্যৎ বাস্তবতা তুলে ধরেছে।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia on her way back home

The special air ambulance carrying BNP Chairperson Khaleda Zia left London last night and is scheduled to reach Dhaka this morning.

9h ago