শুরুর ২ দিন আগেই পূর্ণ ইজতেমা ময়দান

শীত উপেক্ষা করে বুধবার দুপুরের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষকে ইজতেমা ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় এসে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। ছবি: সংগৃহীত

শুক্রবার থেকে বিশ্ব ইজতেমার মূল পর্ব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বুধবার থেকেই হাজার হাজার মানুষ গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। করোনার কারণে গত ২ বছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার সবাই মাঠে এসে উপস্থিত হচ্ছেন আগেভাগেই।

শীত উপেক্ষা করে বুধবার দুপুরের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মানুষকে ইজতেমা ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় এসে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এসেছেন বিদেশিরাও। বুধবার সন্ধ্যার আগেই ইজতেমা ময়দান মানুষে প্রায় পূর্ণ হয়ে যায়।

ঢাকা থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে তুরাগ নদীর তীরে প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হচ্ছে আ'ম বয়ান। আগামী ১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি প্রথম পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৪ দিন বিরতি দিয়ে ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।

প্রথম পর্বের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আলেমওলেমা গ্রুপের যোবায়ের পন্থীরা। দ্বিতীয় পর্বের নেতৃত্বে থাকছেন সাদপন্থীরা।  

বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর জানান, ইজতেমায় অংশ নিতে দেশি-বিদেশিরা আসতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে পুরো ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। শুক্রবার থেকে মূল পর্ব শুরু হলেও বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হবে আ'ম বয়ান। প্রায় ২ মাস স্বেচ্ছাশ্রমে তাবলীগ অনুসারীরা ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতি শেষ করেন। প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল মাঠটিতে বাঁশের খুঁটির ওপর চটের ছাউনির প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে। বয়ান শোনানোর জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ মাইক।

তিনি আরও জানান, বয়ান ও দোয়া মঞ্চ ছাড়া নামাজের মিম্বর তৈরি করা হয়েছে আলাদাভাবে। দেশীয়দের জন্য জেলাভিত্তিক আলাদা আলাদা স্থান (খিত্তা) ভাগ করা হয়েছে। বিদেশিদের জন্য মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে আলাদা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো ময়দান এলাকায় থাকছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, পুলিশ-র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম। আরব, ইউরোপেরসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ ইতোমধ্যে ইজতেমা মাঠের বিদেশি অতিথিদের প্যান্ডেলে অবস্থান নিয়েছেন।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান জানান, ইজতেমা  উপলক্ষে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টিম থাকবে পুরো টঙ্গী জুড়ে।

বুধবার সকালে ইজতেমা মাঠে ২টি গভীর নলকূপ উদ্বোধন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। বয়ান মঞ্চ করা হয়েছে ইজতেমা মাঠের পশ্চিম-উত্তরে মাঝ বরাবর।

ছবি: সংগৃহীত

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মিয়া জানান, ইজতেমার জন্য ৩১টি টয়লেট বিল্ডিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সময়ে ৯ হাজার মানুষ এগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। বিআরটিসি এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে ইজতেমার মুসল্লীদের আনা-নেওয়ায় বিশেষ বাস ট্রেন সার্ভিসের ব্যবস্থা নিয়েছে। ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদীর ওপর ৫টি ভাসমান সেতু নির্মাণ করা হয়েছে পারাপারের জন্য।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশসহ দায়িত্বে থাকবে ১০ হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এ ছাড়া, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগ ১৪টি কন্ট্রোল রুম তৈরি করেছে। র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম থাকবে, ডিএমপি কন্ট্রোল রুম খুলেছে, ওয়াচ টাওয়ার, রুফটফ ডিউটিসহ সিআইডি, নৌপুলিশ, অবজারভারভেশন টিম থাকবে। র‌্যাবের  হেলিকপ্টার টহলও থাকবে। ডগ স্কোয়াড টিম, মোবাইল পেট্রোল টিম, বোমা ডিস্পোজাল টিম থাকবে।

শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'স্বাস্থ্য বিভাগের সেবা কার্যক্রম প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৫টি ক্যাম্প স্থাপন কাজ চলছে। এখান থেকে ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে।'

তিনি জানান, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ছাড়াও টঙ্গী হাসপাতালে ডায়রিয়া, অ্যাজমা, বক্ষব্যাধি, ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, নাক-কান-গলা,চক্ষু ও বার্ন ইউনিটের কার্যক্রম চলবে। এজন্য পর্যাপ্ত বেডও থাকবে।

ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীর এ হাসপাতালে ৭টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনও ক্যাম্পে বিন্যামূল্যে চিকিৎসা দেবে।

Comments

The Daily Star  | English

Several injured as police disperse JnU protesters in Kakrail

At least 25 students were taken to DMCH after suffering injuries from baton charges or falling ill due to tear gas inhalation

Now