কুড়িগ্রামের ৩ উপজেলায় স্কুল বন্ধ রেখে প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বৌভাতে শিক্ষকরা

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ছেলে সাফায়েত বিন জাকির সৌরভের বৌভাত অনুষ্ঠানের দিন বন্ধ ছিল কুড়িগ্রামের ৩ উপজেলার ২৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

রোববার দুপুরে ওই বৌভাত অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত ছিলেন কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার ২৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ হাজার ২৮০ জন শিক্ষক। তাই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্কুল বন্ধ রাখা হয়।

এর মধ্যে চিলমারী উপজেলায় ৯৩টি, রৌমারীতে ১১৪টি এবং রাজীবপুর উপজেলায় ৫৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ছিল।

কয়েকজন শিক্ষক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষকদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। শিক্ষকরাও আনন্দের সঙ্গে অনুষ্ঠানে গেছেন। নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন ধরনের উপহারও নিয়ে যান তারা। 

শিক্ষকরা দুপুর ১২টার মধ্যে প্রতিমন্ত্রীর রৌমারী উপজেলা শহরের বাড়িতে যান। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারাও বৌভাত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
 
তবে শিক্ষকদের দাবি, প্রধান শিক্ষকদের হাতে বছরে ৩ দিন সংরক্ষিত ছুটি থাকে। তারা সেখান থেকে রোববার স্কুল ছুটি দিয়েছেন। 
চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের মাধাইডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বৃহস্পতিবারই শিক্ষার্থীদের স্কুল বন্ধের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। আমরা সব শিক্ষক মিলে প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম।'
 
চিলমারী উপজেলার মজিদের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গাফফার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংরক্ষিত ছুটি থেকে রোববার স্কুল বন্ধ রাখা হয়। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছিল। শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষা কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা বৃহস্পতিবার স্কুলে আসেনি তারা হয়তো রোববার স্কুলে এসে ঘুরে যেতে পারে।' 
 
এ ব্যাপারে মজিদের পাড়া এলাকার অভিভাবক নুর ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ছেলে রোববার দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে গেছে। আমার ছেলে বৃহস্পতিবারও স্কুলে গিয়েছিল কিন্তু স্কুল বন্ধের কোনো ঘোষণা সে পায়নি।'
'কারো বৌভাত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে শিক্ষকরা এভাবে স্কুল বন্ধ রাখবে এটা পুরোপুরি নৈতিকতার পরিপন্থী,' বলেন তিনি।   
 
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) শহীদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, '৩ উপজেলার সব সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা রোববার সংরক্ষিত ছুটি কাটিয়েছেন। এ বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা প্রতি বছর ৩ দিন সংরক্ষিত ছুটি দিতে পারেন।'

সব প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে সংরক্ষিত ছুটি দেওয়ার প্রশ্নে ডিপিইও বলেন, 'এটা একান্ত প্রধান শিক্ষকদের ব্যাপার। প্রধান শিক্ষকরা আমাকে জানিয়েছেন প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও খুবই কম।'

প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের যোগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'দাওয়াতে যে কেউ যেতেই পারেন এটা দোষের কিছু নয়। তবে সংরক্ষিত ছুটির বিষয়টি আগেই শিক্ষার্থীদের জানানো হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।' 

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।  

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনে কুড়িগ্রাম-৪ (চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলা) আসনের এমপি। তার বাড়ি রৌমারী উপজেলা শহরে।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

8h ago