বিলুপ্তির ঝুঁকিতে অ্যান্টার্কটিকার পেঙ্গুইন

পেঙ্গুইন
বরফাচ্ছাদিত অ্যান্টার্কটিকায় অস্তিত্বের সংকটে পেঙ্গুইন। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

বৈশ্বিক উষ্ণতা ও মানবসৃষ্ট দূষণ সুদূর অ্যান্টার্কটিকার জীববৈচিত্র্যকে চরম হুমকিতে ফেলেছে। বরফাচ্ছাদিত এই মহাদেশটির ৬৫ শতাংশ তৃণ ও প্রাণী বিলুপ্তির ঝুঁকিতে। এই তালিকায় আছে মহাদেশটির প্রধান আকর্ষণ পেঙ্গুইনও।

গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পিএলওএস বায়োলজি জার্নাল জানিয়েছে—বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে চলতি শতাব্দীর শেষের দিকে অ্যান্টার্কটিকার 'সম্রাট' পেঙ্গুইনসহ মহাদেশটির ৬৫ শতাংশ স্থানীয় প্রজাতি সম্ভবত বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অ্যান্টার্কটিকার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা কাজে আসছে না। গবেষকরা অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।

পেঙ্গুইন
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অ্যান্টার্কটিকায় পেঙ্গুইনের বংশবৃদ্ধি ৮০ শতাংশ কমে যেতে পারে। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক জেসমিন লি সিএনএনকে বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনে অ্যান্টার্কটিকার কোনো অবদান নেই। জনবসতিহীন মহাদেশটির প্রাণিজগতে এই হুমকি মূলত বাইরের মানুষের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে।'

'অ্যান্টার্কটিকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে চাইলে আমাদের উচিত সবাই মিলে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানো। পাশাপাশি, স্থানীয় ও আঞ্চলিকভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে হবে,' যোগ করেন লি।

বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পেঙ্গুইন

অ্যান্টার্কটিকায় 'সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা' প্রজাতির তালিকায় শীর্ষে পেঙ্গুইন। বিশ্বের এই অপরূপ সামুদ্রিক পাখিটি চলতি শতাব্দীর মধ্যেই পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পেঙ্গুইনের বংশবৃদ্ধি ৮০ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পেঙ্গুইন
অ্যান্টার্কটিকার সৌন্দর্য পেঙ্গুইন। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

এতে আরও বলা হয়, এই মহাদেশে মানুষের উপস্থিতি দিনে দিনে বাড়ছে। সেখানে বৈজ্ঞানিক গবেষণা বাড়াতে অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।

১৯৯০ সালের পর অ্যান্টার্কটিকায় পর্যটন বেড়েছে ৮ গুণের বেশি।

অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির কারণে অ্যান্টার্কটিকায় বরফ গলে যাওয়া হার বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা সেখানে কার্বন দূষণের প্রমাণ পেয়েছেন। জীবাশ্ম জ্বালানির কালো ধোয়া দেখা গেছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, অ্যান্টার্কটিকায় সামান্যতম দূষণ সেখানকার বরফ গলাসহ অন্যান্য বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

করণীয়

জেসমিন লির মতে, অ্যান্টার্কটিকায় দূষণের ভয়াবহতার প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও রাজনীতিক ও নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি ঠিক বুঝতে চান না। ফলে, সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যে তহবিল প্রয়োজন তারা তা আটকে দেন।

তিনি মনে করেন, এই খাতে প্রতি বছর ২৩ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, যা বিশ্ব অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে খুবই সামান্য।

পেঙ্গুইন
বৈশ্বিক উষ্ণতা ও মানবসৃষ্ট দূষণে বিপন্ন অ্যান্টার্কটিকা পেঙ্গুইন। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

লি এই মহাদেশটিকে 'বাঁচাতে' সেখানে মানুষের উপস্থিতি ও যান চলাচল সীমিতকরণ এবং নতুন অবকাঠামো না গড়ার ওপর জোর দিয়েছেন। এই মহাদেশে অন্য স্থান থেকে আনা নানান প্রজাতির গাছ ও প্রাণীর পাশাপাশি রোগের যে বিস্তার ঘটছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

এই গবেষণা প্রতিবেদনকে 'সময় উপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ' উল্লেখ করে অ্যান্টার্কটিকা গবেষক ও কলোরাডো বোউল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কাসান্দ্রা ব্রুকস সিএনএনকে বলেন, 'এটা পানির মতো পরিষ্কার যে, এখন যেসব সংরক্ষণনীতি মেনে চলা হচ্ছে তা এখানকার নাজুক ও ক্ষয়িষ্ণু জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যথেষ্ট নয়।'

গবেষক জেসমিন লি বলেন, 'আমরা যদি এখনই পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে না পারি তাহলে এর প্রভাব এত খারাপ হবে যে তা আমরা ভাবতেও পারছি না।'

Comments

The Daily Star  | English

UK-based lawyer files complaint against Hasina, her cabinet with ICC

A UK-based lawyer has filed a complaint against former prime minister Sheikh Hasina, her cabinet and associated state actors with the Hague-based International Criminal Court, accusing them crimes against humanity

13m ago