শাহীনবাগের ঘটনা সরকারের মদদে-সহযোগিতায় ঘটছে: আমীর খসরু

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ফাইল ফটো

নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের শাহীনবাগের বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের যাওয়ার পর সেখানে 'মায়ের কান্না' সংগঠনের ব্যানারে যারা জড়ো হয়েছিলেন, তারা সরকারের মদদপুষ্ট বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির এই নেতা বলেন, 'এটা গভীর উদ্বেগের বিষয়। একজন কূটনীতিক একটা বিশেষ অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। সেখানে যাওয়ার পরে সরকারি দলের মদদে তাদের সহযোগিতায় কিছু লোক আরেক সংগঠনের নামে সেখানে উপস্থিত হওয়াটাই আইন বিরোধী।'

'সবার নিজস্ব অনুষ্ঠান করার ফ্রিডম আছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আরেকটা অনুষ্ঠানে গিয়ে সেই অনুষ্ঠানকে বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া এবং সেটাকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা অগণতান্ত্রিক।'

'এটা এই প্রথম নয়, আমরা আগেও এ রকম ঘটনা দেখেছি। কিছু হয়নি। আমি মনে করি যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার,' যোগ করেন তিনি।

আমীর খসরু বলেন, 'অতীতে রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের ওপর আক্রমণ হয়েছিল, তাদের তো শাস্তি হয়নি। সেখানেও বোঝা গেছে সরকারের উদ্দেশ্য কী? এর পেছনে কারা আছে? এটা তো সরকার নিজেরা প্রমাণ করছে, তাদের কথাবার্তায় তাদের অ্যাকশনে তারা প্রমাণ করছে যে এখানে তাদের মদদ আছে, তাদের সহযোগিতা আছে।'

তিনি বলেন, 'তারা (সরকার) চাচ্ছে যে এই ধরনের ঘটনা ঘটুক। এর মাধ্যমে একটা ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হোক। দেশের মানুষকে যেভাবে তারা ভয়ভীতির মাধ্যমে চেপে রাখতে চাচ্ছে, এখন কূটনীতিকদেরও তারা ভয়ভীতির একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে এই অবৈধ সরকার ক্ষমতায় থাকার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে এবং এটা তাই প্রমাণ করে।'

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, 'বিএনপির একটি মানবাধিকার অনুষ্ঠান আমরা করেছিলাম একটি হোটেলে। সেখানেও মায়ের কান্না নামে সংগঠনটির একই লোকজন হোটেলের বাইরে অবস্থান নিয়ে অনুষ্ঠানটি বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছিল। এই যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে এগুলোকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা সরকারি মদদে, এটা আওয়ামী লীগের চরিত্রে পরিণত হয়েছে।'

'একদিকে বাংলাদেশের মানুষ যে রকম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, এখন দেখা যাচ্ছে কূটনীতিকদের নিরাপত্তাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে,' বলেন তিনি।

গতকাল বুধবার সকালে তেজগাঁওয়ের শাহীনবাগে 'নিখোঁজ' বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন ও 'গুম' হওয়া ব্যক্তিদের সংগঠন 'মায়ের ডাকের' সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম আঁখির বাসায় যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। সেখানে সরকার সমর্থিত আরেকটি সংগঠন 'মায়ের কান্না' নেতাদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। 

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ আমীর খসরু বলেন, 'এই দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো, তাদের সঙ্গে আমাদের বড় বাণিজ্য আছে, তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক আছে এবং সম্পর্কটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু এই একটি রাষ্ট্র নয়, অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের বহুবিধ সম্পর্ক আছে।'

'দেশের মানুষের নিরাপত্তাহীনতায়, বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তাহীনতায়, বিদেশে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি সেটা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে,' যোগ করেন তিনি। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'বলা হচ্ছে যে তাদের বলা হয়নি। তার মানে এটার অর্থ যে সরকারকে না বলে কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়া যাবে না। এটা কোথায় আছে? তাদের যদি বলা না হয়, তাহলে ২ দিন ধরে সেখানে (শাহীনবাগ) পুলিশ ঘোরাঘুরি করছে। আর অ্যাম্বাসেডরের সঙ্গেও তো পুলিশের বহর আছে। সরকার অবগত আছেন।'

তিনি বলেন, 'আর যদি বলা নাও হয়, এটার অর্থ এই যে, যদি কোথাও গেলে সেই মানুষগুলো তাদের নিরাপত্তা পাবে না, এটা কি হতে পারে নাকি। তাদের বলে গেলে আপনি নিরাপত্তা পাবেন, বলে না গেলে আপনি নিরাপত্তা পাবেন না। এটাও তো এ দেশের নিরাপত্তার চরিত্র কেমন সেটার প্রতিফলন।'

'এই ধারা চলতে থাকলে দেশের মানুষের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, দেশের সত্যিকার চরিত্র এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটছে,' যোগ করেন তিনি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'এটা পরিষ্কার সেখানে সরকারের মদদে-সহযোগিতায় ঘটনাটা ঘটছে। এটা তাদের কথাবার্তায় পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, সরকারের মন্ত্রীদের কথাবার্তায় পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনাকে তারা ইনডাইরেক্টলি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তাদের মদদ ছাড়া এ ধরনের কর্মকাণ্ড সম্ভব নয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Have patience for election

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday said the government would issue a roadmap to the election as soon decisions on electoral reforms are made.

5h ago