‘পর্যবেক্ষক নিয়োগের চেয়ে বড় প্রশ্ন কেন পর্যবেক্ষক সরানো হয়েছিল’

এস আলম গ্রুপ

ইসলামী ব্যাংক থেকে পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত 'ভুল' ছিল এবং এস আলম গ্রুপকে 'রক্ষা করার প্রচেষ্টা' হিসেবেই ব্যাংকটিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ দিয়েছে ও পর্যবেক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ব্যাংকিং নিয়ম লঙ্ঘন করে বিপুল পরিমাণ ঋণ বিতরণ করায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে সোমবার পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

এর আগে, ২০১০ সালের নভেম্বরে ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই পর্যবেক্ষক থাকাকালীন ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের কর্তৃত্ব নিয়ে নেয় এস আলম গ্রুপ। এরপর ২০২০ সালের মার্চে ব্যাংকটি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় ওই পর্যবেক্ষককে।

ইসলামী ব্যাংক থেকে পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়া এবং হাজারো কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের পর পুনরায় পর্যবেক্ষক দেওয়ার বিষয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইসলামী ব্যাংক থেকে পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। এখন আবার পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়ায় অবস্থার কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন হয় কি না, সেটা আমরা দেখার অপেক্ষায় থাকব।'

অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, 'এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকে লুটপাট করছে। কিছু পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা ব্যাংকটি থেকে নামে-বেনামে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে। তারা ইসলামী ব্যাংককে ব্যবহার করেছে সোনার খনি হিসেবে। আর জামায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রণ থেকে ইসলামী ব্যাংককে নেওয়ার জন্য এস আলম গ্রুপকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে সরকার।'

বর্তমানে এস আলম গ্রুপ দেশের ৭টি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এস আলম গ্রুপ ব্যাংককে ব্যবহার করছে পুঁজি লুণ্ঠনের জন্য। বলা হচ্ছে, সব ব্যাংক মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা নামে-বেনামে ঋণ হিসেবে নিয়েছে তারা এবং ধারণা করা হয়, এই টাকার প্রায় পুরোটাই বিদেশে পাচার করেছে। এটা বাংলাদেশের ব্যাকিং খাতের জন্য সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় হুমকি।'

'একজন ব্যক্তিকে এতগুলো ব্যাংকের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে দেওয়ার নজির পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই' উল্লেখ করে অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, 'এ ব্যাপারে সরকারের আচরণ খুবই রহস্যজনক। একজন ব্যক্তিকে কেন এতগুলো ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়েছে, এই প্রশ্নের উত্তর যতক্ষণ পরিষ্কার না হয়, ততক্ষণ এ সম্পর্কে সরকারের ভূমিকা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা যাবে না।'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'ইসলামী ব্যাংকের যে পরিস্থিতি হয়েছে তা করা হয়েছে বেশ গোছানোভাবে। এই পরিস্থিতি কেন ও কীভাবে হয়েছে, তা কারোই অজানা নয় এবং ইসলামী ব্যাংকে এগুলো অনিচ্ছাকৃতভাবে হচ্ছে তাও না। এর সবই পরিকল্পিতভাবেই হচ্ছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখের সামনেই হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'ইসলামী ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক যিনি ছিলেন, তাকে সরিয়ে নেওয়া হলো। এরপরই নামে-বেনামে হাজারো কোটি টাকা ঋণ নেওয়া শুরু হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের তো এখানে দায়িত্ব আছে। এখন পর্যবেক্ষক নিয়োগের চেয়ে বড় প্রশ্ন, কেন পর্যবেক্ষক সরানো হয়েছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'একটি ব্যাংক থেকে একজনের এত টাকা ঋণ নেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিশ্চয়ই অজানা ছিল না। কাজেই তখনই তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল। অথচ, তারা পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশের পর তদন্ত করছে, পর্যবেক্ষক দিচ্ছে।'

সম্প্রতি 'ইসলামিক ব্যাংক লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি'র অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে নগদ সংকটে পড়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।

এই ৫ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডই চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে উল্টো তাদেরকে জনগণের টাকা, রিজার্ভের টাকা থেকে টাকা দিচ্ছে। এর কোনোটাই সমাধানের ইঙ্গিত না। এতগুলো ব্যাংকের টাকা একটি গোষ্ঠী নিয়ে যাচ্ছে, সেটা সমাধানে কোনো প্রচেষ্টা এগুলো না। এটি খুব গোছানোভাবে তাদেরকে রক্ষা করারই একটা প্রচেষ্টা।'

ইসলামী ব্যাংক থেকে পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল কেন, সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, 'এই ব্যাখ্যা বাংলাদেশ ব্যাংককে দিতে হবে। পত্রিকায় খবর প্রকাশের আগে কেন বাংলাদেশ ব্যাংক এসব অনিয়ম দেখেনি, সেই জবাবও বাংলাদেশ ব্যাংককে দিতে হবে। এটা তাদের দায়িত্ব। ইসলামী ব্যাংকে সম্প্রতি যা ঘটলো, তার পুরো দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

4h ago