ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক: যানবাহনে ঢালাও তল্লাশিতে বিরক্ত যাত্রীরা
ঢাকায় বিএনপির শনিবারের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ৷ সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অল্প পরিমান যান চলাচল করছে৷ এর মধ্যে যেসব যান ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছে, মূলত সেগুলোই থামানো হচ্ছে।
একাধিক জায়গায় এভাবে যানবাহন থামিয়ে তল্লাশির কারণে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। তাদের ভাষ্য, নিরাপত্তজনিত কারণে পুলিশ তল্লাশি চালাতেই পারে৷ কিন্তু কোনো সমাবেশকে কেন্দ্র করে এভাবে ঢালাও তল্লাশি চালিয়ে অযথাই সাধারণ যাত্রীদের হয়রানি করা হচ্ছে৷
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় হানিফ পরিবহনের চালক আবুল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চট্টগ্রাম থেকে গতরাতে গাড়ি নিয়ে আসছি৷ ৮ জায়গায় চেকপোস্টে গাড়ি থামাইছে৷ প্রতি জায়গায় ১০ মিনিট করে থামালেও ১ ঘণ্টারও বেশি সময় থেমে থাকতে হয়। আমাগো তো সমস্যা নাই, কিন্তু যাত্রীরা বিরক্ত হয়৷'
এ বাসের যাত্রী মোহাম্মদ হোসাইন নামে এক যুবক বলেন, 'বোঝা যাচ্ছে যে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করেই এতগুলো চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কিন্তু যারা অকারেন্স করবে তারা তো আর বাসে করে কিছু আনবে না। কিংবা যাবেও না৷ তারা অগোচরে করবে৷ পুলিশের উচিত অপরাধীদের মতো চৌকস হওয়া৷ তা না করে চেকপোস্টে বারবার গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের এভাবে দুর্ভোগে ফেলা কেন?'
মৌচাকের পাশাপাশি সাইনবোর্ড ও কাঁচপুর সেতুর ঢালে বসানো পুলিশের চেকপোস্টগুলো ঘুরে দেখা যায়, এসব জায়গায় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। বাসে ব্যাগ রাখার বনেট ও ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের অংশ খুলে দেখা হচ্ছে। যাত্রীদের ব্যাগ ও শরীরও তল্লাশি করা হচ্ছে৷ এছাড়া কী উদ্দেশে তারা বাসা থেকে বেরিয়েছেন, সে ব্যাপারেও জানতে চাইছেন পুলিশ সদস্যরা।
এ বিষয়ে আবু সাঈদ নামের এক যাত্রীর বক্তব্য, 'কুমিল্লার চান্দিনা থেকে উঠেছি৷ ব্যক্তিগত কাজে যাবো ঢাকার রামপুরাতে৷ তল্লাশিতে আমাদের কোন সমস্যা নাই৷ কিন্তু কোথায় যাই, কেন যাই- এসব জিজ্ঞেস করলে অস্বস্তি লাগে৷'
মৌচাক এলাকার তল্লাশিচৌকির দায়িত্বে থাকা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) হাবিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে কোন প্রকার নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড যাতে না হয় সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে৷ মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলোতে কোন প্রকার বিস্ফোরক দ্রব্য বহন করা হচ্ছে কিনা সেসব তল্লাশি করা হচ্ছে৷ তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি৷'
কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভুলতা ক্যাম্পের ইনচার্জ ওমর ফারুক বলেন, 'ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সতর্ক অবস্থানে আছে পুলিশ৷ সন্দেহভাজন যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে৷ গাড়ির কাগজপত্র চেক করা হচ্ছে৷ রুট পারমিট আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে৷ তবে এখন পর্যন্ত কোনোকিছু পাওয়া যায়নি৷'
সার্বিক বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নারায়ণগঞ্জের থানা এলাকাগুলোর ৭টি পয়েন্টে তল্লাশি চৌকিসহ নিরাপত্তা বেষ্টনি বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও৷ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর, মদনপুর, মৌচাক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, এশিয়ান হাইওয়ে (ঢাকা বাইপাস) ও নারায়ণগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশের সতর্ক অবস্থান রয়েছে৷ কেউ যাতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশ তৎপর আছে।'
Comments