অর্থাভাবে ২ ছেলের উচ্চশিক্ষা নিয়ে শঙ্কিত বিমল-ফুলমতি

গল্পের গণি মিয়ার নিজের কোনো জমি ছিল না। তিনি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করতেন। কিন্তু ধার করা টাকায় খুব ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। পরে সেই টাকা তিনি আর শোধ করতে পারেননি। এ নিয়ে তার দুর্ভোগের শেষ ছিল না।
মাঠে কাজ করছেন চলতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ২ যমজ ভাই দিবস-তাপস। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

গল্পের গণি মিয়ার নিজের কোনো জমি ছিল না। তিনি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করতেন। কিন্তু ধার করা টাকায় খুব ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। পরে সেই টাকা তিনি আর শোধ করতে পারেননি। এ নিয়ে তার দুর্ভোগের শেষ ছিল না।

কয়েক যুগ আগে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভূক্ত এই গল্পটির সঙ্গে লালমনিহাটের আদিতমারী উপজেলার ফলিমারী গ্রামের কৃষক বিমল চন্দ্র রায়েরও অনেকটা মিল আছে। তিনিও একজন বর্গাচাষি এবং দরিদ্র। তারও নিজের কোনো জমি নেই। তাকেও তার ছেলেদের জন্য ধার করতে হয়েছে।

তবে গল্পের গণি মিয়ার সঙ্গে বিমল চন্দ্র রায়ের (৪৫) অমিল হলো- বিমল টাকা ধার করতে বাধ্য হয়েছেন যমজ ২ ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য। কিন্তু একসঙ্গে ২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ ছেলের পড়াশোনা খরচ চালিয়ে যাওয়ার সঙ্গতি নেই তার। তাই দুশ্চিন্তা তার পিছু ছাড়ছে না।

বিমলের ২ ছেলের নাম তাপস কুমার রায় (১৯) ও দিবস কুমার রায় (১৯)। চরম দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা চালিয়ে আসা তাপস চলতি বছর ভর্তি হয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে। আর তাপস ভর্তি হয়েছেন বঙ্গবন্ধু কৃষি বিদ্যালয়ের ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) বিভাগে।

দিবস ও তাপস। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

যমজ ২ ভাই একইসঙ্গে একই স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেছেন। বাবাকে সাহায্য করতে একসঙ্গে নিয়মিত মাঠেও কাজ করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তারা ২ জনেই হয়ে উঠেছেন এলাকার অনেকের অনুপ্রেরণা। কিন্তু বাবার ধার করা টাকায় আপাতত ভর্তির কাজ শেষ হলেও আগামী জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া উচ্চশিক্ষার পরের ধাপগুলো তারা কীভাবে পেরুবেন তা কিছুতেই ভাবতে পারছেন না তারা। কারণ তাদের দরিদ্র বাবা-মার পক্ষে একসঙ্গে ২ ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না।

তাপস-দিবসের বাবা বিমল চন্দ্র রায়ের কাছ থেকে জানা যায়, এই মুহূর্তে ৪ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষ করছেন তিনি। মাঝেমধ্যে অন্যের জমিতে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। সংসারের অভাব মেটাতে স্ত্রী ফুলমতি রানীও যোগ দেন এই কাজে। তাপস-দিবস বাদে সবার ছোট ছেলেটি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

বিমল বলেন, 'আমাদের ৩ ছেলেই জমিতে কাজ করে। পরিশ্রম করতে তাদের কোনো অনীহা নেই। এভাবে দিনরাত পরিশ্রম করে, কখনো কখনো অর্ধাহারে থেকেও তারা পড়াশোনায় মনোযোগী। তাই ধার করে কোনোভাবে ২ ছেলের ভর্তির টাকা জোগাড় করেছিলাম। কিন্তু এখন কী হবে তা ভাবতে পারছি না।'

কথা হয় ২ যমজ ভাইয়ের একজন দিবস কুমারের সঙ্গে। দিবস বলেন, 'মা-বাবার পক্ষে আমাদের ২ ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। এটা আমরা জানি এবং বুঝি। কিন্তু যেভাবেই হোক পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে আমাদের।'

তাপস কুমার বলেন, 'গ্রামে থাকলে অন্যের জমিতে কাজ করেও কিছু পয়সা আসে। কিন্তু শহরে গিয়ে কী হবে বুঝতে পারছি না।'

এদিকে মা ফুলমতির কণ্ঠেও উদ্বেগ ঝরে পড়ে ২ ছেলের উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে। তিনি বলেন, 'মা হিসেবে আমার খুব কষ্ট হয়। আমি সন্তানদের পড়াশোনার জন্য নিয়মিত অন্যের জমিতে কাজ করছি। তাতেও তো প্রয়োজন মেটে না।'

এ অবস্থায় দিবস-তাপসের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নিতে সহযোগিতার হাত বাড়াতে সমাজের অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন বিমল-ফুলমতি।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago