নাশকতা মামলায় মুন্সিগঞ্জে ৩৭, নারায়ণগঞ্জে ২৪ বিএনপি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে নাশকতা মামলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৬১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার রাত ১২ টা পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬ থানায় পৃথক মামলা হওয়ার পর ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
৫ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ১ থানার ডিউটি অফিসার ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বুধবার রাতে ৪ উপজেলায় ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় গজারিয়া, লৌহজং, টংগিবাড়ী ও সিরাজদিখান থানায় বিএনপির ১৫৬ নেতকর্মীর নামে মামলা হয়। মামলায় আরও ১৮৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
এর আগে রোববার সকালে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। এ পর্যন্ত এই মামলায় ৫ জনকে গ্রেপ্তারের কথা নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তারিকুজ্জামান।
টংগিবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজিব খান জানান, টংগিবাড়ী উপজেলার দেউলভোগ এলাকায় বুধবার রাতে বিএনপির ঝটিকা মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে কাঠাদিয়া শিমুলিয়া ইউনিয়নের শাহ আলম নামে একজন পথচারী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত আরও ৪০ জন আসামি রয়েছে। এ মামলায় টংগিবাড়ীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, লৌহজংয়ের বেজগাঁও কবরস্থান মাঠে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদলের একটি দল মিছিলে সরকার বিরোধী স্লোগান দিয়ে বেশ কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বুধবার রাতে ফিরোজ আহমেদ নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী বাদী হয়ে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৫০ জনের নামে লৌহজং থানার মামলা দায়ের করে। এ মামলায় গত ৩ দিনে বিভিন্ন এলাকার অভিযান চালিয়ে মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুল হক জানান, নাশকতার ঘটনায় সিরাজদিখান থানার এস আই বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে ৪০ জনকে অজ্ঞাত করে মামলা করেন। তারপর থেকে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মোট ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গজারিয়া থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক সুমন সরকার জানান, এ পর্যন্ত মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শ্রীনগর থানাতে নাশকতার মামলা হয় গত শুক্রবার। এই মামলায় রোববার ২ জনসহ মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম।
এদিকে নারায়ণগঞ্জে নাশকতার অভিযোগে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় আরও ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার রাত থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
নারায়ণগঞ্জে গত কয়েকদিনে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ নেতার করা ১০টি মামলায় শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী বলে দাবি করেছেন সংগঠনের নেতারা।
পুলিশ জানায়, শনিবার রাত থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সদরে ৩ জন, ফতুল্লায় ৪ জন, সিদ্ধিরগঞ্জে ৩ জন, বন্দরে ৩ জন, সোনারগাঁয়ে ৪ জন, রূপগঞ্জে ৪ জন ও আড়াইহাজারে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শ্রমিক দলের সাবেক সহসভাপতি রাজিব ভূঁইয়া, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য কাজী গোলাম কাদির, ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সোহেল মিয়া, বন্দর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন, ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল প্রধান, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি হামিদুর রহমান সুমন, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুমন, বিএনপি কর্মী সুলতান, সোহেল, মাসুদ, রূপগঞ্জের আফতাব উদ্দিন খোকা, তাইজুদ্দিন, হুমায়ুন কবির, আবু হানিফ, যুবদল নেতা মনোয়ার হোসেনের নাম পাওয়া গেছে।
গত ১৭ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে ৭ থানায় নাশকতার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মোট ১০টি মামলা করা হয়েছে। মামলাগুলোতে বিএনপি, জামায়াত, নাগরিক ঐক্য ও গণঅধিকার পরিষদের ৭ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
বিএনপি নেতারা বলেছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বরে ঢাকায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে 'গায়েবি' মামলায় তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব গোলাম ফারুক খোকন বলেন, 'বিরোধীমত দমনের জন্য আওয়ামী লীগ প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে যাতে নেতাকর্মীরা যেতে না পারে সেজন্য গায়েবি মামলা করে নির্বিচারে গ্রেপ্তার চলছে। বিরোধীমত দমনের পুরনো কৌশল বেছে নিয়েছে সরকার।'
মুন্সিগঞ্জে বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র ইরাদত হোসেন মানু বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ২ জন সিনিয়র নেতা রয়েছেন। মিরকাদিম পৌর বিএনপির সদস্য সচিব ওবায়দুর রহমান বকুল ও পঞ্চসার ইউনিয়ন বিএনপির রকিব হাজী। পুলিশ বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। প্রতিরাতে মহল্লায় যাচ্ছে। নেতাকর্মীরা নিজেদের বাড়িতে থাকতে পারছেন না।'
Comments