শান্তি চাই, আমরা যুদ্ধ চাই না: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শান্তি চাই, আমরা যুদ্ধ চাই না। আজ রোববার সকালে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) আয়োজিত ৮৩তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদি কোর্সের রাষ্ট্রপতি প্যারেড অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পরিবারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিশেষ যোগসূত্র রয়েছে। শেখ কামাল 'বাংলাদেশ প্রথম যুদ্ধ প্রশিক্ষণ কোর্স' কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করে যুদ্ধের ময়দানে যায়। তখনকার প্রধান সেনাপতির এডিসির দায়িত্ব পালন করে। শেখ জামাল সম্মুখযোদ্ধা। ১৯৭৫ সালে জামাল ব্রিটিশ রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি, স্যান্ডহার্স্ট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করে। সেও মুক্তিযুদ্ধ করে। ১০ বছরের রাসেলের ইচ্ছা ছিল সে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় পঁচাত্তরের ঘাতকের বুলেটে তার সে ইচ্ছা আর পূরণ হয়নি।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন করে আমাদের স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যখন দায়িত্ব নেন, তার একটাই লক্ষ্য ছিল—আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, এই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনী। এ বাহিনীকে তিনি পেশাদার, প্রশিক্ষিত ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির শুভ উদ্বোধন করেন। তিনি কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল, সেনাবাহিনীর প্রতিটি কোরের জন্য স্বতন্ত্র ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। তার শাসনামলে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। তিনি ভারত ও যুগোশ্লাভিয়া এবং বন্ধু প্রতীম দেশ থেকে নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রহ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৩ সালে সে সময়ের অত্যাধুনিক সুপারসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, পরিবহন বিমান, এয়ার ডিফেন্স রাডার ইত্যাদি বিমান বাহিনীতে যুক্ত করেন। তিনি ১৯৭৪ সালেই একটি প্রতিরক্ষানীতি প্রণয়ন করে দিয়ে যান। ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নবীন সামরিক অফিসারদের পেশাগত দক্ষ, নৈতিক গুণাবলী সম্পন্ন এবং দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের গড়ে তুলতে আহ্বান জানিয়েছিলেন।
দীর্ঘ ২১ বছর পরে পঁচাত্তর সালের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমরা সরকার গঠন করার পর, পঁচাত্তরের পরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হারিয়ে যেতে বসেছিল বা বিকৃত করা হয়েছিল তা পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও আদর্শে যাতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী গড়ে ওঠে সেই পদক্ষেপ নেই এবং সামরিক বাহিনীকে আধুনিকায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেই। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ জাতির পিতা যখন গড়ে তুলছেন রিজার্ভ মানি ছিল না ১ টাকাও। কারেন্সি নোট ছিল না। তখনো সেনাবাহিনীর জন্য তিনি ট্যাঙ্ক কিনে আনেন এবং অন্যান্য সমরাস্ত্র ক্রয় করে আরও শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেন। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা সেনাবাহিনীকে আরও যুগপোযোগী করার জন্য ১৯৯৮ সালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং ও আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে দিই, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, সেনাবাহিনীতে ২০০০ সালে প্রথম দীর্ঘ মেয়াদি কোর্সে আমাদের নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেই। ২০১৩ সালে মহিলা সৈনিক ভর্তির হওয়ার সুযোগ পান। ২০০৯ সালে তৃতীয়বার যখন সরকার গঠন করি, তখনই আমরা ৯৪ সালে জাতির পিতা যে প্রতিরক্ষানীতিমালা করে দিয়ে যান তারই ভিত্তিতে 'ফোর্সেস গোল-২০৩০' বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করছি। ২০১৮ সালে জাতীয় প্রতিরক্ষনীতি প্রণয়ন করি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করি। জাতির পিতা আদর্শ বাস্তবায়ন করে আমরা এগিয়ে যাই। সিএমএইচগুলো আমরা আধুনিক করি।
এ সময় আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকের দিনটি আপনাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ প্রশিক্ষণের পর কাঙ্ক্ষিত কমিশনপ্রাপ্তির মাধ্যমে আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত অফিসার হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।
আজকের এই শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব অর্পিত হলো তা যথাযথভাবে পালন করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেটদের উদ্দেশে বলেছিলেন—'আমি তোমাদের জাতির পিতা হিসাবে আদেশ দিচ্ছি, তোমরা সৎ পথে থেকো, মাতৃভূমিকে ভালোবেসো। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবা, গুরুজনকে মেনো, শৃঙ্খলা রেখো, তা হলে জীবনে মানুষ হতে পারবা।' আমি আশা করি, নতুন ক্যাডেটরা এ কথা মনে রেখে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দায়িত্ব পালন করবে, বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, শান্তি চাই, আমরা যুদ্ধ চাই না। জাতির পিতা বলেছেন, সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরীতা নয়। আমরা সেটা যথাযথভাবে মেনে চলছি এবং সেভাবে আমরা আমাদের দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে জাতির পিতা বাংলাদেশেকে স্বল্পোন্নত দেশে রূপান্তর করে যান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার ফোর্সেস গোল বাস্তবায়ন করেছি। সেই সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য স্থির করে আমাদের সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ সাল উদযাপন করেছি এবং ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী পালন করেছি। আমাদের সৌভাগ্য ২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
আমাদের আজকের নবীন অফিসাররা হবে ২০৪১-এর সৈনিক। তারা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যাব সেটাই চাই। দুর্যোগ, দুর্বিপাক সব ক্ষেত্রেই আমাদের সেনাবাহিনী যথাযথ ভূমিকা পালন করে, যোগ করেন তিনি।
Comments