১০ ‘গায়েবি’ মামলায় বিএনপির ৮ শতাধিক আসামি, কারাগারে ৬৮

টাঙ্গাইল
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের অভিযানের মুখে গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘরে থাকতে পারছেন না টাঙ্গাইলের বিএনপি নেতাকর্মীরা।

স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, গত ২ সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পুলিশের দায়েরকৃত ১০টি মামলায় প্রায় ২ শতাধিক বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে ৬৮ নেতাকর্মীকে।

বিএনপি নেতাদের দাবি, দায়েরকৃত মামলাগুলো 'গায়েবি' এবং নেতাকর্মীদের ঢাকার সমাবেশে যেতে বাধা সৃষ্টি করতেই সরকারের নির্দেশে এসব 'মিথ্যা' মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

তবে বিএনপি নেতাদের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে জেলা পুলিশ। তাদের দাবি, নাশকতা সৃষ্টির প্রস্তুতিসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে এসব মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তার হয়েছে।

সর্বশেষ বুধবার রাতে সখীপুর উপজেলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ৮৮ বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী। সেদিন রাতেই উপজেলা বিএনপি, কৃষক দল এবং যুবদলের ৪ সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ বিষয়ে সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুধবার রাতে সখীপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে ৫টি অবিস্ফোরিত ককটেল এবং এক বস্তা পাথর জব্দ করে। ঘটনার পর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ওই ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।'

সখীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সাজু অবশ্য দাবি করেছেন, সেখানে আসলে কোনো ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাই ঘটেনি। গ্রেপ্তার হওয়ার সময় নেতাকর্মীরা স্থানীয় একটি ক্লাবে বসে টিভিতে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখছিলেন।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাসেত ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি একটি গায়েবি মামলা। মামলার এজাহারে রাত ১০টা ২ মিনিটে ককটেল বিস্ফোরণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ এর এক ঘণ্টা আগে রাত ৯টায় ওই ৪ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।'

এ ছাড়া, নাশকতা ও ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় ঘাটাইল উপজেলার ৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। সে মামলায় এ পর্যন্ত ১০ বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঘাটাইলের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লুৎফর রহমান খান আজাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, '১০ ডিসেম্বর ঢাকায় জনসভাকে সফল করতে ২২ নভেম্বর দিগড় ইউনিয়নের কাশতলা বিটিপাড়া এলাকায় কর্মী সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ গুলি ছুঁড়েছে। নেতাকর্মীদের আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। অন্য বাড়ি থেকে বালতি এনে পুলিশ ককটেল রেখে গতানুগতিকভাবে নাটক সাজিয়েছে।'

ঘাটাইল থানার ওসি আজহারুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে নাশকতার উদ্দেশ্যে জমায়েত হয়েছিলেন। সেখান থেকে কয়েকটি ককটেলও উদ্ধার করা হয়েছে।'

বিএনপি নেতার অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি আরও বলেন, 'ঘটনাটি প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত মানুষের সামনে ঘটেছে।'

অন্যান্য উপজেলায় দায়েরকৃত মামলার অভিযোগগুলোও প্রায় একইরকম বলে জানা গেছে।

টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি দুর্জয় হোড় শুভ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইতোমধ্যে ওয়ারেন্ট ছাড়াই ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে আটক করে পরে গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। নেতাদের খুঁজতে রাতে বাসায় বাসায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।'

জেলা যুবদলের সভাপতি খন্দকার রাশেদুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘরে থাকতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। তবে এসব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে মহাসমাবেশে যোগ দিতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।'

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার অভিযানের পরও ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে জেলার দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। পরিবহন সংকটসহ নানা সমস্যা মাথায় রেখে আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকেই ঢাকায় যাত্রা শুরু করবেন নেতাকর্মীরা।'

'টাঙ্গাইল জেলা থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দেবেন বলে আশা করছি', যোগ করেন তিনি।

এদিকে, বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার অভিযান সম্পর্কে জানতে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার মোহাম্মদ কায়সারের ফোন নম্বরে কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পরে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শরিফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। তদন্তাধীন অবস্থায় মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। এ বিষয়ে পরে জানানো হবে।'  

Comments

The Daily Star  | English

Consensus key to take Bangladesh forward: Yunus

"We are now working to bring our beloved Bangladesh back onto the path of equality, human dignity, and justice," he said

1h ago