শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ: চট্টগ্রামের হাসপাতালে সক্ষমতার ৩-৪ গুণ রোগী

চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড। ছবি: স্টার

ঋতু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ঠান্ডাজনিত রোগে নবজাতক ও শিশুরা আক্রান্ত হওয়ায় বন্দর নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এখন রোগীদের উপচে পড়া ভিড়।

ভিড় সামলাতে এসব ওয়ার্ডগুলোতে সামর্থ্যের ৩ থেকে ৪ গুণ রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, হেমন্তের শেষ থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে নবজাতক ও শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তাই এসব রোগ প্রতিরোধে তাদের বাড়িতে বিশেষ যত্ন প্রয়োজন।

খাদিজা আক্তারকে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য ওয়ার্ডের একটি বিছানায় তার ৪ মাস বয়সী মেয়ে রোজিকে নেবুলাইজ (ফুসফুসে বাষ্প আকারে ওষুধ দেওয়া) করতে দেখা যায়। শিশুটির শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল।

খাদিজা জানান, গত ১৫ নভেম্বর থেকে তার মেয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। তাই তাকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা থেকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যান।

তিনি বলেন, 'জানি না মেয়ের কী হয়েছে? সে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছে না।'

গত মঙ্গলবার রাত থেকে ২৬ দিন বয়সী রাজীব একই সমস্যায় ভুগছে। তার মা বাপ্পী ঘোষ প্রথমে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাজীবকে চমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়।

হাসপাতালের একই ওয়ার্ডের একটি বিছানায় ৮ মাস বয়সী সুজিতকে ছোট সুঁইয়ের মাধ্যমে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছিল। তার মা ঝর্ণা দত্ত জানান, ৪ দিন ধরে সে শ্বাসকষ্টে ভুগছে।

রোজি, রাজীব ও সুজিতের মতো চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেক রোগী নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিউলাইটিস, জ্বর ও ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরের শুরু থেকে হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ৬ দিনে প্রায় ৬ হাজার রোগী  চমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন, যার মধ্যে ৪৫ শতাংশ নবজাতক ও শিশু।

প্রতিদিন অন্তত ৮০টি শিশু চমেক হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। গত শুক্রবার চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য ওয়ার্ডে নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০৬।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ডাক্তার ও নার্সরা অতিরিক্ত রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

যোগাযোগ করা হলে চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য ওয়ার্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, 'নবজাতক ও শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। হেমন্তের শেষের দিকে এবং শীতের শুরুতে নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কিউলাইটিস বেশি হয়।'

ডা. রেজাউল বলেন, 'রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১২০ শয্যার এই ওয়ার্ডটিতে ধারণক্ষমতার ৩ গুণ রোগী ভর্তি আছে। আজ এই ওয়ার্ডে ৪৫০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।'

ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এই সময়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।'

শিশুরা দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে, শ্বাস নিতে অস্বস্তি হলে অভিভাবকদের অবিলম্বে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'নবজাতক ও শিশুদের ধূমপানমুক্ত স্থানে রাখতে হবে।'

শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বুকের দুধ খাওয়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এর পাশাপাশি ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'

তিনি আরও বলেন, 'রোগ প্রতিরোধের জন্য শিশুদের টিকাদানের আওতায় নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।'

যোগাযোগ করা হলে চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'ব্রঙ্কিউলাইটিস একটি ভাইরাস সংক্রমিত শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং এর প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া। এটা বাড়িতে সম্ভব নয়। তাই অভিভাবকদের উচিত শিশুদের শ্বাসকষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।'

তিনি বলেন, 'যদি বাচ্চারা দ্রুত শ্বাস নেয় এবং যদি তারা শ্বাস নিতে অস্বস্তি অনুভব করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।'

চট্টগ্রাম মা, শিশু ও জেনারেল হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালের শিশু রোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাহমুদ এ চৌধুরী আরজু বলেন, 'এই ওয়ার্ডে সাধারণত ৮০ থেকে ১০০ রোগী ভর্তি থাকলেও এখন এই সংখ্যা বেড়ে ৩০০ হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।'

আরজু বলেন, 'অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের খুব দেরিতে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। দেরি হলে সমস্যা তীব্র ও জটিল হয়। সন্তানদের শ্বাসকষ্টের কোনো উপসর্গ হালকাভাবে নেওয়া উচিত না।'

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur, MRT-1, Matarbari to get special focus

Three mega projects will get special focus in the upcoming development budget with the view to providing cheaper electricity, easing Dhaka dwellers’ transportation problem and enhancing international trade for Bangladesh.

13h ago