নতুন রূপ পেতে যাচ্ছে বেহাল জাতিসংঘ পার্ক

পার্কের সংস্কারকাজ আগামী বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় অবস্থিত জাতিসংঘ পার্কটি নতুন রূপ পেতে যাচ্ছে। পুরোদমে সংস্কার কাজ চলছে পার্কটিতে। 

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ বছরের জানুয়ারিতে পার্কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে এবং আগামী বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা আছে।

গণপূর্ত বিভাগের (পিডব্লিউডি) ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকার এ প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাবর অ্যাসোসিয়েটস ও করোনেশন করপোরেশন।

এর আগে, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সফরকালে এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। 

পিডব্লিউডি চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পার্কে সবুজায়ন করা হবে, ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে এবং দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থা থাকবে। পার্কের মাঝখানে একটি ফোয়ারা থাকবে এবং পুরো পার্কে আলোর ব্যবস্থা করা হবে। থাকবে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা। 

পার্কে যেন জলাবদ্ধতা হতে না পারে সেজন্য ভূমি পাঁচ ফুট উঁচু করা হবে। শিশুদের জন্য আলাদা কিডস জোন থাকবে, খেলাধুলার সরঞ্জাম থাকবে এবং শারীরিক ব্যায়ামের সরঞ্জাম বসানো হবে। 

সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০ জন শ্রমিক ভেতরে কাজ করছেন, সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হচ্ছে এবং বর্ষাকালে পার্কটি যেন জলাবদ্ধতা থেকে নিরাপদ থাকে সেজন্য মাটি দিয়ে উঁচু করা হচ্ছে।

যোগাযোগ করা হলে পিডব্লিউডি চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ (বিভাগ-১) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় ৫৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারব।'

প্রায় ৬০ বছর বয়স আগে ২ দশমিক ১৭ একর জমিতে গড়ে ওঠে জাতিসংঘ পার্ক।

তবে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও পিডব্লিউডির মধ্যে টানাপোড়েনের কারণে পার্কটি ছয় বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় ১৯৬৪ সালে স্থাপিত হয়েছিল পার্কটি। ১৯৬৯ সালে এটিকে তৎকালীন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব অনুসারে ২০০২ সালে এটির নামকরণ করা হয় জাতিসংঘ পার্ক।

পাঁচলাইশ এলাকার বাসিন্দা অনিন্দিতা দাশ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একসময় শহরের সুন্দর পার্কগুলোর একটি ছিল এটি। আমরা প্রায় প্রতিদিন বিকেলে পার্কে যেতাম।'

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, পার্কের ভেতরে একটি বাগান ছিল। পার্কের ভেতরে একটি জলাশয়ের চারদিকে হাঁটার পথ ছিল এবং এক দশক আগেও এখানে অ্যামিবা আকৃতির একটি কৃত্রিম হ্রদের চারদিকে বসার ব্যবস্থা ছিল।

আরেক বাসিন্দা আমির উদ্দিন জানান, পার্কটিতে এক সময় আম, কাঁঠাল, জাম, নারকেল, বাদাম, মেহগনি, গামারি, আকাশমণি, অর্জুন, রেইন ট্রি, রাজ কড়াই, কৃষ্ণচূড়া ও শিশুগাছ ছিল।

পার্কের সংস্কারকাজ আগামী বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

যেভাবে স্বকীয়তা হারায়

স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১২ সালে চসিক কর্তৃপক্ষ পার্কের জলাশয় এবং ওয়াকওয়ের জায়গায় সুইমিং পুল নির্মাণের একটি প্রকল্প নেয়। এতে পার্কটি তার স্বতন্ত্র চরিত্র হারিয়ে ফেলে।

স্থানীয় বাসিন্দা তাপস বড়ুয়া ডেইলি স্টারকে জানান, সে সময় পার্কে সেখানে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি সুইমিং পুল তৈরি করা হয় এবং পুলগুলোকে পার্ক থেকে আলাদা করার জন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে পার্কটিকে অর্ধেক করে ফেলা হয়।

পরে পার্কের পুলের পানিতে ডুবে এক কিশোরের মৃত্যু হয় এবং তারপর থেকে পুলগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল বলে জানান তিনি।

২০১৬ সালে চসিক কর্তৃপক্ষ পার্কটিকে ২৫ বছরের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থার কাছে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। তখন স্থানীয়রা এবং তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর বিরোধিতা করেন।

চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইঞ্জি. মোশাররফ এই পার্কের বেসরকারিকরণের উদ্যোগের বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে পিডব্লিউডি পার্কটির উন্নয়ন করবে যেন স্থানীয়রা এখানে হাঁটাচলা করতে পারবে এবং সময় কাটাতে পারবে।'

তিনি আরও বলেন, 'চসিক ও পিডব্লিউডির মধ্যে টানাপড়েনে প্রায় ছয় বছর ধরে পার্কটি নাজুক অবস্থায় চলে যায়। সেখানে বসার কোনো জায়গা ছিল না, হাটা চলার জায়গা তো ছিলই না।'

'আমি যখন ২০২০ সালে চসিকের প্রশাসক হলাম, আমি পার্কের দায়িত্ব পিডব্লিউডিকে হস্তান্তর করলাম,' যোগ করেন তিনি।

পার্কের সংস্কারকাজ আগামী বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

নতুন উদ্যোগে খুশি এলাকাবাসী

পার্কে সংস্কার কাজ চলমান থাকায় খুশি এলাকাবাসী। পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, শুলকবহর, মির্জারপুল, প্রবর্তক, সুগন্ধা ও মুরাদপুর এলাকায় আর কোনো পার্ক নেই।

স্থানীয় শিক্ষক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের এলাকার লোকজন সময় কাটানোর জন্য জাতিসংঘ পার্কে আসতেন। প্রায় ছয় বছর ধরে পার্কটি বেহাল অবস্থায় থাকায় আমরা এখানে যেতে পারি না। সংস্কারের কাজ শেষ হলে আমরা আবার পার্কটি ব্যবহার করার সুযোগ পাব।'

আরেক স্থানীয় মুনমুন দত্ত বলেন, 'আমি পার্কটি সংস্কারের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমাদের বাচ্চারা পার্কে খেলাধুলার সুযোগ পাবে।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

13h ago