এটি একটি সরকারি দপ্তর!

জরাজীর্ণ ভবনটি বন বিভাগের সৈয়দপুর উপজেলা দপ্তর
বন বিভাগের সৈয়দপুর উপজেলা দপ্তর
ছবি:আসাদুজ্জামান টিপু/ স্টার

প্রথম দেখায় যে কারোরই গা ছমছম করে উঠবে ভগ্ন দশার জঙ্গলাকীর্ণ বাড়িটি দেখলে। দীর্ঘকায় বুনো ঘাস আর লতাগুল্ম গজিয়েছে দেয়ালে, ছাদে, মেঝেতে। চারপাশ ঝোপঝাড়ে ভর্তি। সেখানে নির্ভয়ে বেড়াচ্ছে সাপ, বেজিসহ নানা সরীসৃপ আর কীটপতঙ্গ।

ধারণা করা হয় একসময় বাড়িটি সাদা চুনকাম করা ছিল কিন্তু এখন সেটি এতটাই অতীত যে প্রায় কালো রং ধরেছে। পলেস্তারা খসে দেয়ালের লোনাধরা ইট আর ছাদের মরচে পড়া লোহার রড বেরিয়ে এসেছে। ভেতরে স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। তাই, স্থানীয়রা এই বাড়িটিকে ডাকে ভূতের বাড়ি বলে।

আশ্চর্য হলেও সত্যি, জরাজীর্ণ এ বাড়িটি সরকারি বন বিভাগের সৈয়দপুর উপজেলা দপ্তর। দিনাজপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কের পাশে স্থানীয় (সৈয়দপুর) পৌরসভার কুন্দল এলাকায় এর অবস্থান।

গণপূর্ত বিভাগ এ ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে এক দশক আগেই। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি তাই এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বন মন্ত্রণালয়ের সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি বিভাগের উপজেলা অফিসের সরকারি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দপ্তর ভবনটি ১৯৮২ সালে একটি অফিস ও পাঁচটি আবাসিক কোয়ার্টারের সমন্বয়ে নির্মিত হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সংস্কার করা হয়নি বলেই কালক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পরিণত হয়েছে।

বন বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাতেও ক্যাম্পাসের আবাসিক ভবনে থাকতে হয়। কারণ সেখানে আছে সামাজিক বনায়নের জন্য করা নার্সারি। সেখানকার শত শত প্রজাতির ফুল, ফল ও গাছের চারার দেখাশোনা তাদের করতে হয়।

ফলে পরিবার ছেড়ে সব ভয় উপেক্ষা করে এখানকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এখানে দিনের পর দিন কাটান।

এখানকার দপ্তরপ্রধানকেও অফিসের পেছনের দিকের কোনায় বিছানা পেতে থাকতে দেখা যায়। কারণ তার জন্য বরাদ্দকৃত জঙ্গলাকীর্ণ কোয়ার্টারটি বিষাক্ত পোকামাকড়ের দখলে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখানকার ঝাড়-জঙ্গলে ভরা আবাসিক কোয়ার্টারে বাধ্যতামূলকভাবে বাস করা কর্মচারীরা পোকামাকড়ের সাথেই মেঝেতে চাটাই বিছিয়ে বসবাস করছেন। সবার মাথার উপরে টাঙ্গানো আছে প্লাস্টিকের পলিথিনের শিট। ঝুরঝুর করে অনবরত প্লাস্টারগুড়া আর ছাদের ভাঙ্গা দিয়ে আসা রোদ বৃষ্টি থেকে বাঁচতে এই বিশেষ ব্যবস্থা, জানালেন কর্মচারীরা।

বনপ্রহরী আর বনমালীদের কোয়ার্টারের সামনে গিয়ে দেখা যায় সেগুলোর সামনে দড়ি বা বাঁশ টানিয়ে ব্যবহার্য্য কাপড় রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির জীর্ণদশায় সেখানে যে কেউ বাস করে তা এই কাপড়চোপড় দেখে বোঝা গেল।

ছবি: আসাদুজ্জামান টিপু/ স্টার

দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার শহীদুল ইসলাম জানান, 'গণপূর্ত বিভাগ এক দশক আগে এখানকার সব অবকাঠামো পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। আমরা এটি ভেঙ্গে নতুন ভবন করে দেয়ার তাগিদ দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠির পর চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে দুজন কর্মকর্তা ও পাঁচ জন কর্মচারী বিপদের মাঝেও এখানে দাপ্তরিক কাজ চালাতে বাধ্য হচ্ছি।'

কয়েক মাস আগে আসলাম হোসেন নামে এক বনপ্রহরীকে বিষাক্ত পোকা কামড়ালে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর সে সুস্থ হলেও এখনো ভীতসন্ত্রস্ত থাকে, বলে জানান তিনি।

রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মতলুবুর রহমানের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমাদের সৈয়দপুর অফিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বিমানবন্দর থাকায় বন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঝে মাঝে এখানে বিশ্রামের জন্য যাত্রাবিরতি করেন। তাই এখানে নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তাব চলছে।

Comments

The Daily Star  | English

Grim discovery: Five bodies found on vessel in Meghna

The incident had occurred on the Meghna river under Chandpur Sadar upazila in an area adjacent to Shariatpur

44m ago