মরুর প্রাণী দুম্বার খামার দেশেই

রবিউলের দুম্বার খামার। ছবি: স্টার

পড়াশোনা শেষে গতানুগতিকভাবে চাকরির পেছনে না ছুটে ভিন্ন কিছু করার কথা ভাবছিলেন নীলফামারীর যুবক রবিউল ইসলাম (৩০)। কথায় কথায় একদিন সেই ভাবনা জানান সিঙ্গাপুরপ্রবাসী বড় ভাই রেজাউল করিম জুয়েলকে।

রেজাউল তখন ছোট ভাইকে সিঙ্গাপুরে তার দেখা এক সফল দুম্বার খামারের কথা বলেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে ভাবতে থাকেন রবিউল।

একসময় রবিউল মনস্থির করলেন, তিনিও দেশে দুম্বার খামার দেবেন। বড় ভাইকে বিষয়টি জানালে ২০২২ সালের শুরুর দিকে তিনি সৌদি আরব থেকে প্রজনন উপযোগী দুটি দুম্বা কিনে রবিউলকে পাঠান।

সেই থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের কাটারী পাড়া গ্রামে নিজ বাড়ি সংলগ্ন স্থানে রবিউলের দুম্বার খামারের পথচলার শুরু।

দ্য ডেইলি স্টারকে রবিউল বলেন, 'কোথাও এ ধরনের খামার না থাকায় ও অনভিজ্ঞতার কারণে প্রথম দিকে খুবই দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। কিন্তু বড় ভাই প্রবাস থেকে দিক-নির্দেশনা ও উৎসাহ দিয়ে গেছেন।'

'মরু দেশের প্রাণীগুলো কয়েক সপ্তাহ খুব বিরক্ত করলেও তারপর সেগুলো ধীরে ধীরে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিয়ে গৃহপালিত হয়ে যায়। সেগুলোর লালন-পালন করাও অত্যন্ত সহজ বলে মাস খানেকের মধ্যেই বুঝে নেই। খাদ্য হিসেবে অত্যন্ত সাধারণ খাবার, যেমন: ঘাস, ছোট করে কাটা খড়, গমের ভুষি, ভুট্টার দানা ইত্যাদি তারা পছন্দ করায় আমার উৎসাহ বেড়ে যায়।'

রবিউলের আগ্রহে রেজাউল অনলাইনে অর্ডার দিয়ে সৌদি আরব থেকে আরও ছয়টি দুম্বা পাঠায়।

তিন বছর ধরে লালন-পালনের পর সেখানে এখন মোট দুম্বার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭টিতে। বেশিরভাগই সাদা রঙের, কয়েকটি চকলেট রঙের ও দু-একটির রঙ সাদার মধ্যে চকলেট। প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি দুম্বার ওজন ৫০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত।

রবিউল জানান, গত সপ্তাহে বরিশালের এক ধনাঢ্য ব্যক্তি তার সফল খামারের কথা পত্রিকায় দেখে উৎসাহিত হয়ে নিজের এলাকায় একটি খামার গড়ে তুলতে উৎসাহী হন। তাই তিনি নিজে এসে একটি প্রজননক্ষম পুরুষ ও একটি স্ত্রী জাতের এবং একটি ৬-৭ মাস বয়সী শিশু দুম্বা চার লাখ টাকায় কিনে নিয়ে গেছেন।

সম্প্রতি খামারে গিয়ে দেখা হয় খামারে দুম্বার দেখভালে নিয়োজিত রমজান আলীর (১৮) সঙ্গে। তিনি বলেন, দুম্বাগুলো দলবদ্ধ থাকে ও মানুষের সঙ্গ তাদের প্রিয়। দূর থেকে আমাকে দেখলেই সবাই একসঙ্গে আওয়াজ করতে থাকে। রাতে তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও উঁচু করে তৈরি করা ঘরে থাকতে পছন্দ করে।

এই অঞ্চলে প্রথমবারের মতো দুম্বার খামারের খবর পেয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ সেখানে যাচ্ছেন কিংবা অনলাইনে যোগাযোগ করছেন রবিউলের সঙ্গে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে সৈয়দপুর উপজেলার ধলাগঞ্জ থেকে আসা নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি জানান, রবিউলের দুম্বা খামারের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে তিনি নিজে একটি খামার গড়ে তুলতে চান। তাই তিনি সরেজমিনে দেখতে এসেছেন, কীভাবে মরুর এই প্রাণীগুলোকে এদেশে লালন-পালন করা হচ্ছে।

খামার মালিক রবিউল বলেন, শিক্ষিত বেকার যুবকেরা আমার মতো চাকরির পেছনে না ঘুরে অতি লাভজনক দুম্বার খামার গড়তে আগ্রহী হলে আমি তাদের প্রজনন উপযোগী পশু নগদে কিংবা কিস্তিতে সরবরাহ করব। একাধিক খামার গড়ে উঠলে এটি দুম্বা বেচাকেনার অঞ্চলে পরিণত হবে। এতে সবারই লাভ।

নীলফামারী জেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি জেলার একমাত্র দুম্বা খামারটি পরিদর্শন করেছি। এ ধরনের খামার অত্যন্ত লাভজনক বলে প্রতীয়মান হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে।

Comments

The Daily Star  | English
remittance earning of Bangladesh

Remittance rises 30% in July

Migrants sent home $2.47 billion in the first month of the current fiscal year

5h ago