যেভাবে তৈরি হলো বিখ্যাত ‘মিম’টি

ডিজাস্টার গার্ল মিম
বাবার ক্যামেরায় জোয়ি রথ। ছবি: সংগৃহীত

ছবির মেয়েটির নাম জোয়ি রথ। যখন ছবিটি তোলা হয়েছিল, তখন তার বয়স ছিল ৫ বছর। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের কাছে ছবিটি খুব পরিচিত। এটি 'ডিজাস্টার গার্ল মিম' নামেও পরিচিত। ছবিটি সাধারণভাবে তোলা হলেও ইন্টারনেটে মিম হিসেবে আকস্মিকভাবেই ছড়িয়ে পড়ে।

শুরুটা ২০০৫ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা রাজ্যের একটি ভবনে একদিন হঠাৎ আগুন লাগে। জোয়ির বয়স তখন ৫ এবং বাসায় ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বসে টিভি দেখছিল। আগুনের সাইরেন শুনে এবং আশেপাশের মানুষের হুড়োহুড়ি দেখে জোয়িও বাসা থেকে বের হয়ে দেখে ভবনটি থেকে ধোঁয়ার বড় কুণ্ডলী আকাশের দিকে উঠছে।

তাৎক্ষণিকভাবে জোয়ির মনে হলো অগ্নিদগ্ধ ভবনে কেউ আটকে পড়েছে কিনা তার খোঁজ নেওয়া। জোয়ির পেছন পেছন বাসা থেকে বের হন তার বাবা ডেভ, যিনি ক'দিন আগেই নতুন ক্যামেরা কিনেছিলেন। ডেভ বাসা থেকে বের হয়ে অগ্নিদগ্ধ ভবনটির দিকে যাচ্ছিলেন আর একের পর এক ছবি তুলছিলেন। তখনো অনেকে ভেবেছিল এটা সত্যি সত্যি আগুন। কিন্তু, কিছুক্ষণ পরই সবাই দেখতে পেল আগুন নেভানোর জন্য দমকলকর্মীদের কোনো তাড়া নেই। বরং তারা আগুনকে সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না! এরপর তারা জানতে পারলেন বাড়িটির আসল মালিক ফায়ার ডিপার্টমেন্টকে বাড়িটি দান করেছিলেন। যেন অগ্নি নির্বাপক কর্মীরা প্রশিক্ষণ নিতে পারেন এবং তার উদ্দেশ্য ছিল জায়গাটি খালি করা। উদ্বিগ্ন দর্শনার্থীরা ততক্ষণে সে দৃশ্য উপভোগ করা শুরু করলেন।

এটি ‘ডিজাস্টার গার্ল মিম’ নামও পরিচিত। ছবি: সংগৃহীত

একপর্যায়ে জোয়ি নিজেও সেই দলে শামিল হলো। জোয়ির বাবা তার নতুন ক্যামেরা দিয়ে সবার ছবিই তুলছিলেন। জোয়ি ভবনের পাশ থেকে সরে রাস্তার উল্টোপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভাই ও বাবার কাছে এলো। তখন তার বাবা বললেন, 'সবার ছবি তোলা হয়েছে, এবার তোমার পালা। হাসো।'

সেই মুহূর্তে এই বিখ্যাত ছবিটির জন্ম হয়।

এরপর সবাই ছবির কথা ভুলে গেছেন। ২০০৮ সালে জোয়িদের বাসার মেইল বক্সে একটি ম্যাগাজিন আসে, যেখানে জোয়ির সেই ছবিটি ছাপা হয়েছিল। তার বাবা তাকে ম্যাগাজিন খুলে ছবিটি দেখায় এবং তখনই সে প্রথমবারের মতো ছবিটি দেখে। যখন তোলা হয়েছিল, তখন সে ছবিটি দেখেনি, কারণ তার বাবা প্রায়ই ছবি তুলত।

'JPG' নামের একটি ম্যাগাজিন তখন 'Emotion Capture' নামের একটি ছবি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এবং জোয়ির বাবা সেই প্রতিযোগিতায় ছবিটি পাঠায়। পরের দিন জোয়ি তার স্কুলের বন্ধু ও শিক্ষকদের ম্যাগাজিনটি দেখায় এবং তার কথা মতে 'জীবনে সেই প্রথমবারের মতো বিখ্যাত হওয়ার অনুভূতি পেলাম।'

ইতোমধ্যে ইন্টারনেট যুগ শুরু হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ বাড়ির সামনে জোয়ির আসল ছবিটি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ডিজাস্টার সিনেও অনেকে তার ছবি ফটোশপ করে ব্যবহার করতে শুরু করে। একপর্যায়ে জোয়ি পরিচিত পায় 'ডিজাস্টার গার্ল' নামে।

চলতি বছর জোয়ি রথ তার সেই ৫ বছর বয়সী আসল ছবিটি ৫ লাখ মার্কিন ডলারে বিক্রি করেন!

Comments

The Daily Star  | English