ইতালিতে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চাওয়া কে এই বাংলাদেশি

প্রবাসী বাংলাদেশি শিল্পোদ্যোক্তা মো. ডাবলু চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

ইতালির পর্যটন নগরী ভেনিসে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়ে আলোড়ন তুলেছেন এক বাংলাদেশি। বিনিয়োগের অঙ্কটি বড় হওয়ায় এ নিয়ে ইতালির গণমাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে আগ্রহ। ফলাও করে প্রচার হয়েছে খবর।

ভেনিসের পোর্তো মারঘেরা শিল্পাঞ্চলে গাড়ির কারখানা নির্মাণে এ বিনিয়োগ করতে চান এই বাংলাদেশি। এ জন্য মিলানের বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে ভেনিসের মেয়র কার্যালয় অনুমতি চেয়েছেন তিনি।

এই বিনিয়োগ প্রস্তাবকারী প্রবাসী বাংলাদেশি শিল্পোদ্যোক্তা মো. ডাবলু চৌধুরী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শতভাগ বৈদ্যুতিক যানবাহন প্রস্তুতকারক এপসিলন মোটরস ইন করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট। 

এ বছর কয়েকজন ব্যবসায়িক অংশীদারের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড এপসিলন মোটরস স্থাপন করেন ডাবলু চৌধুরী। উদ্যোক্তাদের বড় অংশই বাংলাদেশি। আর বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যদের অনেকেই এক সময় জার্মানি এবং চীনে বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মার্সিডিজ বেঞ্জের কারখানায় কাজ করতেন।

বৈদ্যুতিক যানবাহন উত্পাদন, ব্যাটারি পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে বিকল্প জ্বালানি উত্স গবেষণা অবদানে মূল দক্ষতা তৈরি করা হয়েছে, এমন দাবি প্রতিষ্ঠানটির।

গণমাধ্যমে আসা খবর ও প্রবাসী সাংবাদিকদের সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎচালিত গাড়ি নির্মাণের কারখানা স্থাপনের জন্যই ভেনিসে বিনিয়োগে আগ্রহী তারা। এপসিলন মোটরসের পক্ষে প্রধান হিসেবে আবেদন করেছেন ডাবলু চৌধুরী।

বিনিয়োগের প্রস্তাবটি মার্কিন কোম্পানি হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একজন বাংলাদেশি হিসেবে বাংলাদেশি দূতাবাসের সাহায্য চেয়েছেন ডাবলু চৌধুরী ।

কুষ্টিয়ার সন্তান ডাবলু চৌধুরীর বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ১৯৮৭ সাল থেকে আছেন দেশের বাইরে। পড়াশোনা করেছেন সুইজারল্যান্ডে। বাংলাদেশের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যেরও নাগরিকত্ব আছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রয়েছে গাড়ির ব্যবসা।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে ডাবলু চৌধুরী বলেছেন, 'ব্যতিক্রমী ও টেকসই কিছু করতেই এপসিলন মোটরসের যাত্রা। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, যদি এমন কিছু করা যায় ভবিষ্যতে যার ব্যাপক চাহিদা হবে এবং যেটি পরিবেশবান্ধব হবে তাহলে আমাদের কাজটি টেকসই হবে। সে কারণে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি তৈরি করার সিদ্ধান্ত।'

জানা গেছে, কারখানা স্থাপনের জন্য ভেনিসের আগে পর্তুগালেও চেষ্টা করেছিলেন ডাবলু চৌধুরী। তবে উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় জায়গার অভাবে তা সম্ভব হয়নি। ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশেও পছন্দের তালিকায় আছে তার। তবে সবকিছু নির্ভর করছে ভেনিসের সিদ্ধান্তের ওপর। 

মিলানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এমজেএইচ জাবেদ বিবিসিকে জানিয়েছে, মূলত তার মাধ্যমে ডাবলু চৌধুরী ভেনিসে কারখানা খোলার অনুমতি চেয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে।

কনসাল জেনারেল বলেছেন, বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে ডাবলু চৌধুরী বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে আমাদের কাছে  আসেন, যেখানে উপযুক্ত জমির খোঁজ এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতির জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের সাহায্য চেয়েছিলেন।

এরপর ভেনিস কমিউনের অ্যাসেসরি কমার্সিও মানে বাণিজ্য দপ্তরের প্রধান ডেপুটি মেয়র সিবাস্টিয়ান কস্টালোঙ্গার কাছে ডাবলু চৌধুরীর চিঠি পৌঁছে দিয়েছেন বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল।

'আমি নিজে যখন ভেনিসে গেছি সেসময় আমি নিজ হাতেই তার আবেদনপত্রটি কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি,' এমজেএইচ জাবেদ যোগ করেন।

কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা চিঠিতে, বিনিয়োগের পরিমাণ ৯২০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কনসাল জেনারেল।

মেয়র কার্যালয় তার প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে এবং খুব শিগগির ভেনিসের মেয়র লুইজি ব্রুনারোর সঙ্গে ডাবলু চৌধুরীর বৈঠক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে আগামী বছরেই এ কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হবে। এতে প্রায় ১ হাজার কর্মীর চাকরির ব্যবস্থা হবে বলে তাদের প্রত্যাশা। পাশাপাশি মূল পরিকল্পনায় লিথিনিয়াম ব্যাটারি তৈরির কারখানা খোলারও পরিকল্পনা আছে।

বাংলাদেশির বড় বিনিয়োগের বিষয়ে প্রবাসীদের মধ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দনের ঝড়ের সঙ্গে নেতিবাচক মন্তব্যও অনেকে বাংলাদেশির। বিশেষ করে অর্থ যোগানের উৎস নিয়েও প্রশ্ন তাদের।

বিনিয়োগ আসবে কোথা থেকে- বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে ডাবলু চৌধুরী বলেছেন, পরিকল্পিত কারখানার জন্য বিনিয়োগ আসবে যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্যের একদল ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টের কাছ থেকে।

২০৩৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো রাজ্যে, ইংল্যান্ডে এবং অন্যান্য বড় শহরগুলোতে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির প্রাধান্য থাকবে- এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'এজন্য চীনসহ বিভিন্ন দেশের সরকার এখন যারা ইলেকট্রিক গাড়ি বানাচ্ছে এবং বিক্রি করছে তাদের ইনসেনটিভ (প্রণোদনা) দিচ্ছে।'

 'এখন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা টাকা বিনিয়োগ করবে, আর আমাদের হচ্ছে প্রযুক্তি এবং কারিগরি দিক, এই ২ মিলে আমরা এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি,' ডাবলু চৌধুরী যোগ করেন।

বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কতটুকু হবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডাবলু চৌধুরী বলেন, 'বিশেষায়িত শিল্প ইউনিট হিসেবে দক্ষ, উচ্চশিক্ষিত ও যোগ্য জনশক্তিনির্ভর হবে এ কারখানা। যোগ্যতার ভিত্তিতে  বাংলাদেশিদের সুযোগ থাকবে।'

ডাবলু চৌধুরীর এপসিলন মোটরসের লক্ষ্য, বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থানীয় গাড়ি প্রস্তুতকারক হয়ে ওঠা। যার মাধ্যমে গ্রাহকদের সেরা মূল্য ও সেবা দিয়ে জিরো কার্বন নির্গমন যানবাহন তৈরি করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উন্নত বিশ্ব গড়তে অবদান রাখা।

প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে এমন বার্তা দিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৌরভ মোহাম্মদ বলেছেন, 'আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন একটি সবুজ, টেকসই, উদ্ভাবনী এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ পায়। যা অতীতে ছিল।'

প্রতিষ্ঠানের স্লোগান 'আমাদের সঙ্গে ভবিষ্যতের দিকে চলুন।'

Comments

The Daily Star  | English

Power, Energy Sector: Arrears, subsidies weighing down govt

The interim government is struggling to pay the power bill arrears that were caused largely by “unfair” contracts signed between the previous administration and power producers, and rising international fuel prices.

8h ago