দুধকুমার নদীর ভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে ৩ গ্রাম

শুধু স্মৃতি হয়ে আছে ইসলামপুর জামে মসজিদের একাংশ। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ৩টি গ্রাম মধ্যপাড়া, উত্তরপাড়া ও ইসলামপুর। গ্রামগুলোর নাম এখন শুধু কাগজে-কলমে। এসব গ্রামের আর কোনো অস্তিত্ব নেই। দুধকুমার নদীর ভাঙনে গ্রামগুলো হারিয়ে গেছে মানচিত্র থেকে।

গ্রাম ৩টিতে প্রায় ৩৫০টি পরিবার বসবাস করতো। নদীভাঙনে ভিটেমাটি, আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব তারা। আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্থানে। গ্রাম ৩টির মধ্যে এখন শুধু স্মৃতি হয়ে যে স্থাপনাটি আছে, সেটি ইসলামপুর জামে মসজিদের একাংশ।

স্থানীয়রা জানান, গেল ২ বছরে চোখের সামনেই গ্রাম ৩টি দুধকুমার নদীর উদরে বিলীন হয়েছে। এখানে ২টি মসজিদ ছিল। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। স্থাপনা, আবাদি জমি, বসতভিটা সবকিছুই এখন দুধকুমার নদীর উদরে।

সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব ৩ গ্রামের ৩৫০টি পরিবার। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

ইসলামপুর গ্রামের খোদেজা বেওয়া (৬৯) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গেল ৬ মাস আগে তিনি নদীভাঙনে বসতভিটা হারিয়েছেন। একটিমাত্র ঘর অন্যের জমিতে ফেলে রেখেছেন। এখনো ঘর তোলার জন্য জমি যোগাড় করতে পারেননি। তার ৪ বিঘা আবাদি জমি ছিল। সেগুলো এখন দুধকুমার নদীর উদরে।

তিনি বলেন, 'নদীভাঙনে সবকিছু হারিয়ে এখন খুব কষ্টে আছি। দুমুঠো অন্ন ঠিকমতো যোগাড় করতে পারছি না।'

মধ্যপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলী (৫৫) ডেইলি স্টারকে জানান, চোখের সামনেই তার বসতভিটা ও ২ বিঘা আবাদি জমি দুধকুমার নদীর উদরে বিলীন হয়েছে। স্ত্রী, ৩ সন্তান ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে আত্মীয়ের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন।

'আর কোনো দিনই সামর্থ্য আসবে না নিজের টাকায় বসতভিটার জন্য জমি কেনার,' তিনি বলেন।

উত্তরপাড়া গ্রামের শাহ আলম (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীভাঙনে সবকিছু হারিয়ে এখন পরিবার নিয়ে দুমুঠো অন্নের জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে। সরকারি রাস্তার উপর ঘর তুলে বসবাস করছি। বসতভিটা ও ৭ বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার দৃশ্য এখনও ভুলতে পারি না।'

ইসলামপুর জামে মসজিদের ইমাম তাজুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীভাঙনে মসজিদটি দুধকুমার নদীতে বিলীন হয়েছে। নতুনভাবে এখনো মসজিদ নির্মাণ করা হয়নি। স্থানীয় এক ব্যক্তির ঘরে নামাজ আদায় করা হচ্ছে। নদীভাঙন আমাদেরকে সর্বস্বান্ত করেছে। আমরা এখন অসহায় হয়ে দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করছি।'

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কামাল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীভাঙনে বসতভিটা ও আবাদি জমি হারিয়ে লোকজন নিঃস্ব। বিভিন্নজন বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। ভাঙনকবলিত মানুষগুলো এখন দিনমজুরি করেও জীবিকা নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন।'

চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মানিক উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রাম ৩টি মানচিত্র থেকে বিলীন হওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনঠেকানোর কাজ শুরু করেছে। ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে চাল ও নগদ ১০ হাজার টাকা সহায়তা করা হয়েছে।'

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ইসলামপুর এলাকায় দুধকুমার নদীর ভাঙনঠেকানোর কাজ চলমান রয়েছে। তারা অনেক আগেই বরাদ্দের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু দেড়িতে বরাদ্দ আসায় কাজও দেরিতে শুরু হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

3h ago