শাউট

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনে অভিভাবকদের ভুল ধারণা

ডিজাইন: ফাতেমা জাহান এনা

মাতৃভূমি, আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে বিদেশ বিভুয়ে থাকা কোনো সহজ কাজ নয়। তবে, বৈশ্বিক অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের অভিভাবকরাও তাদের সন্তানকে বিদেশে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

কিন্তু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রবীণদের মধ্যে অনেক ধরনের ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। এর কারণ হচ্ছে সঠিক তথ্য ও সচেতনতার অভাব। এর ফলে, আপনি কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করতে গেলে তাদের সঙ্গে মতানৈক্য তৈরি হতেও পারে।

র‌্যাঙ্কিং যত ভালো, সেটি তত ভালো বিশ্ববিদ্যালয়

সন্তানকে বিদেশে পড়তে পাঠানো বেশ ব্যয়বহুল। স্বাভাবিকভাবেই সন্তানের ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করতে গিয়ে অভিভাবকরা চান সর্বোত্তম শিক্ষার ব্যবস্থা করতে।

অনেক সময় বিশ্বমানের শিক্ষা সম্পর্কে মা-বাবার ভুল ধারণা থাকে। তারা মনে করেন, শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পারলে তার সন্তানের জীবন ধ্বংস হয়ে গেল।

বিশ্বের কয়েকটি বড় ও নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আকাঙ্ক্ষা থাকা খুবই স্বাভাবিক। মনে হতেই পারে, র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই আসলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু আদতে তা নয়। কেবলমাত্র র‌্যাঙ্কিং কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান প্রতিফলিত করে না।

বিশ্বব্যাপী অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক ভালো সুবিধার ব্যবস্থা করে থাকে। আন্তর্জাতিক যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করতে কেবল র‌্যাঙ্কিংয়ে দৃষ্টি না রেখে নিজেদের সুবিধার বিষয়টিও বিবেচনা করা উচিত এবং সেই অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেছে নেওয়া উচিত।

পরীক্ষার ফলাফল কোনো ব্যাপার না

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে আবেদনকারীর এসএসসি বা এইচএসসির ফলাফল অনেক বড় বিষয়। এর ওপর নির্ভর করে আবেদন করা যাবে কি না। অনেক অভিভাবক মনে করেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়েও বিষয়টি এমনই। পরীক্ষায় কত ভালো ফলাফল করেছে তার ওপর নির্ভর করে তার সন্তান ভর্তি হতে পারবে কি না। কিন্তু বিষয়টি আসলে তেমন নয়।

বেশিরভাগ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় এমন শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে, যাদের সব বিষয়ে ভালো দখল রয়েছে। মার্কিন হাই স্কুলগুলো থেকে বছরে অন্তত ২ লাখ শিক্ষার্থী তাদের ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ফলাফল নিয়ে পাশ করে। কিন্তু আইভি লিগে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ফলাফল করেছে।

একাডেমিক ফলাফল নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কর্মকর্তারা এমন আবেদনকারীদের নিতে চান, যারা তাদের সমবয়সীদের থেকে আলাদা এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরের দুনিয়ার প্রতিও যাদের আগ্রহ আছে।

শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সব খরচ বহন করে

পড়াশুনার খরচের ক্ষেত্রে বৃত্তি এবং প্রয়োজনভিত্তিক সাহায্যের পার্থক্য বোঝা জরুরি। এটা অবশ্যই উল্লেখ্য যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়ন কারা পাবে, তার মানদণ্ড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভেদে ভিন্ন।

বৃত্তি সাধারণত ফলাফলের বিচারে দেওয়া হয়। তবে, সব বিশ্ববিদ্যালয় বৃত্তি দেয় না।

প্রয়োজনভিত্তিক সাহায্য শুধুমাত্র তারাই পায়, যাদের পরিবারের বার্ষিক আয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত মানদণ্ডের চেয়ে কম। যদি কেউ এই সাহায্যের যোগ্য হয়, তাহলে সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কতটা আর্থিক সুবিধা পাবে তা নির্ভর করবে তার পরিবারের মোট বার্ষিক আয়ের ওপর।

দুর্ভাগ্যবশত, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এই ধরনের আর্থিক সাহায্য দেয় না।

কিছু বিশ্ববিদ্যালয় 'সচেতনতা' নীতি অনুসরণ করার ফলে বিষয়গুলো অনেক সময় আরও জটিল হয়ে উঠে। এর মানে হচ্ছে, কোনো আবেদনকারীকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হলে সে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার খরচ বহন করতে পারবেন কি না, তা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজগুলো বিবেচনা করে।

এটা ঠিক যে আবেদনের প্রক্রিয়া সহজ না। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মা-বাবার কাছে সহযোগিতা পেলে তা সহজতর হয়ে উঠবে।

এ বছর বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনকারী সবার জন্য শুভকামনা।

তথ্যসূত্র:

১. ফোর্বস (১ নভেম্বর ২০২০)

২. নিউইয়র্ক টাইমস (১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬)

৩. লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২)

নাহিয়ান নাওয়ার; nahiannawardhk@gmail.com

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

2h ago