প্রশাসনের আচরণে খুশি নন ভারতফেরত জেলেরা

প্রায় আড়াই মাস পর ভারত থেকে ফেরা পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার ৭ জেলে। ছবি: কে এম হাবিবুর রহমান/স্টার

প্রায় আড়াই মাস আগে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ভারতে আটকে পড়েন ৪০ জেলে। তাদের মধ্যে ৩৩ জনের বাড়ি বরগুনা সদর ও পাথরঘাটা উপজেলায় এবং অপর ৭ জনের বাড়ি পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলায়। 

গত মঙ্গলবার রাতে তারা বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। 

ইন্দুরকানীর ৭ জেলের সবাই 'এমভি ভাইবোন' ট্রলারের। বেনাপোল দিয়ে দেশে আসার পর তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

গত ১৮ আগস্ট হঠাৎ সাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায় ট্রলারটি। এতে ওই ট্রলারে থাকা ১৩ জেলের মধ্যে ৪ জনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এছাড়া ২ জনকে পাথরঘাটার একটি মাছ ধরার ট্রলার উদ্ধার করে। 

বাকি ৭ জনকে ৪৮ ঘণ্টা পর ভারতীয় জেলেরা উদ্ধার করে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কাকদ্বীপের বুদ্ধপুরে নিয়ে যায়। এর দুই মাস ১১ দিন পর তারা পুনরায় বাংলাদেশে ফিরে আসেন। 

ভারতের জেলেরা ও প্রশাসন তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করলেও, বেনাপোল বন্দর পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর স্থানীয় প্রশাসন তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ জেলেদের। 

পরে পিরোজপুরের এক মাছ ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। 

ইন্দুরকানী উপজেলার ৭ জেলে হলেন-ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম (৩৪), রফিকুল ইসলাম (৪৪), মন্টু হাওলাদার (৪৭), জামাল শেখ (৪৭), বেলায়েত হাওলাদার (৩৭), আবুজার (২৮) ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (১৭)।

এছাড়া ঝড়ের সময় একই ট্রলার থেকে বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ জেলেরা হলেন-ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের জেলে শাহজাহান হাওলাদার (৬০), জসিম মাতুব্বর (২০), হারুন হাওলাদার (৫০) ও বাহাদুর শেখ (৫০)।

ফিরে আসা জেলেদের ধারনা নিখোঁজ এ চার জেলে আর জীবিত নেই। 

ট্রলারটির মালিক পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত ১৮ আগস্ট বিকেলে হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের ট্রলার ডুবে যায়। এর ২ দিন আগে সাগরে পৌঁছান তারা। এরপর ঝড়ে ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার পর তারা ট্রলারের বয়া ও অন্যান্য ভাসমান জিনিস ধরে ২ দিন পানিতে ভেসেছিলেন। 

পরে ঝড় থামার পর ভারতীয় জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে যাওয়ার পর তাদের ভাসতে দেখে উদ্ধার করে তীরে নিয়ে যায়। এরপর সেখানে বুদ্ধপুরের একটি ফ্লাড সেন্টারে তাদের রাখা হয়। 

তারা যে ফ্লাড সেন্টারে ছিলেন, বর্তমানে সেখানে আরও ২২ জন বাংলাদেশি জেলে আছেন বলে জানান সাইফুল। 

সাইফুল জানান, ধার করে ৪৫ লাখ টাকা খরচ করে সাগরে ট্রলার নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার পর ঋণ পরিশোধের কথা ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। 

সাইফুল আরও জানান, তারা ভারতে থাকার সময় সেখানকার জেলে এবং স্থানীয় প্রশাসন খাদ্য ও পোশাক দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া তাদের হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়। এরপর ভারতের পুলিশ তাদের বেনাপোল বন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন পার করে দেয়।

তবে বাংলাদেশে প্রবেশের পর তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছ সহযোগিতা পাননি উল্লেখ করে সাইফুল বলেন, 'গত মঙ্গলবার রাতে আমরা বাংলাদেশে প্রবেশ করি। এরপর আমাদের বেনাপোল বন্দর থানায় নেওয়া হয়। পরে সেখানে স্থানীয় এনজিওর এক নারীকর্মী থানায় গিয়ে আমাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে বাইরে নিয়ে যান।'

'ওই নারী আমাদের রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে চলে যান। তিনি আমাদের নিজ দায়িত্বে বাড়ি যেতে বলেন। আমাদের কাছে কোনো টাকা না থাকায়, আমরা হতাশ হয়ে পড়ি,' বলেন সাইফুল। 

পরে দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাহানুর রহমান শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এই জেলেদের পিরোজপুর ও বরগুনায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। 

সাইফুলের ট্রলারের মাঝি রফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্য দেশে অপরিচিত স্থানে কোনো বিপদে না পড়লেও, নিজ দেশে আমরা মারাত্মক অবহেলার শিকার হয়েছি।'

তিনি বলেন, 'ভোর ৪টার দিকে আমরা কাকদ্বীপ থেকে রওনা হয়ে রাত ১১টায় বেনাপোল বন্দর অতিক্রম পর্যন্ত প্রায় না খেয়ে ছিলাম। এরপর দেশের মাটিতে পৌঁছেও কোনো সরকারি সহায়তা পাইনি।'

সরকারি সহযোগিতা পাওয়ার আশায় বৃহস্পতিবার দুপুরে ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম মতিউর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন ওই উপজেলার ৭ জেলে। 

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মতিউর রহমান ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের জানাবেন। তবে জেলেরা বাংলাদেশে প্রবেশের পর জেলেদের অসহযোগিতা করা হয়েছে শুনে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাহানুর রহমান শামীম ডেইলি স্টারকে জানান, ভারতফেরত পিরোজপুরের জেলেরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তিনি তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে একটি বাস ভাড়া করে তাদের পিরোজপুরে নিয়ে আসেন। এরপর তাদের পিরোজপুর থেকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। 

তিনি বলেন, 'ভারতের জেলেরা খুবই সুসংগঠিত। তাই ভারতীয় প্রশাসন বাংলাদেশি জেলেদের জেলে কিংবা আদালতে কোথাও নিতে দেয়নি। বরং তাদেরকে বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছে।' 

তবে বেনাপোল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন ভূঁইয়ার দাবি, ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পর জেলেদের সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, 'একটি এনজিও এবং শামীমের মাধ্যমে জেলেদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

2014, 2018, 2024 polls: BNP to sue former ECs, officials today

BNP is set to file a case against officials involved in the last three national elections with Sher-e-Bangla Nagar police today. The party will also lodge a formal complaint with the Election Commission in this regard, BNP leaders said yesterday.  

2h ago