কফির ভালো-মন্দ

ছবি: সংগৃহীত

কাজের ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে চাঙ্গা রাখতে অনেকেই কফির কাপে চুমুক দিতে ভালোবাসেন। অনেকে আবার রাত জেগে কাজ করার জন্য ঘুম ঠেকাতে কফিকে উত্তম বন্ধু হিসেবে বেছে নেন। এভাবে এক পর্যায়ে কফিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকে। নির্দিষ্ট সময় পর পর কফি না খেলে অনেকের অস্বস্তিবোধ হয়।

ইন্টারন্যাশনাল কফি অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালে সারা বিশ্বে ৬০ কেজি ওজনের কফির ব্যাগ বিক্রি হয়েছিল ৯ কোটি। ২০১৮ সালে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৬ কোটিতে।

কফির ইতিহাস

ধারণা করা হয় কফির জন্মস্থান ইথিওপিয়া।। ইথিওপিয়ায় জন্ম নেওয়া কফি গাছ থেকে যে কফি পাওয়া যাকে তাকে বলা হয় অ্যারাবিকা। এই ধরণের কফি মিহি, হালকা এবং সুবাসযুক্ত হওয়ার কারণে দামও অপেক্ষাকৃত বেশি হয়ে থাকে। বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ কফিই এই জাতের হয়ে থাকে।

ছবি: সংগৃহীত

ইনস্ট্যান্ট কফি হিসেবে যা আমরা অফিস বা বাসায় পান করে থাকি তার নাম 'রোবাস্টা'। এটি তিতকুটে স্বাদ এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন সমৃদ্ধ কফি। মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু এলাকায় এবং ব্রাজিলে সাধারণত এ ধরণের কফি জন্মে থাকে। ১৩০০ সালের দিকে রোস্টেড কফি প্রথম আরবরা তৈরি করেন। পৃথিবীর প্রথম কফির দোকান তুরস্ক, মিশর, সিরিয়া, পারস্যে দেখা যায়। ১৪৭৫ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কের কনস্টান্টিনোপলে স্থাপিত হয় পৃথিবীর প্রথম কফিশপ। ১৫৯৮ খ্রিস্টাব্দে ডাচ শব্দ থেকে কফি শব্দটি এসেছে। ইউরোপে কফির প্রচলন শুরু হয় ১৭০০ সালের পর থেকে।

কফির গুণাগুণ

কফিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে যা দেহের কোষগুলোকে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ ও রাসায়নিকের মিশ্রণ ঠেকাতে সাহায্য করে।

১৬ বছর ধরে ৫ লাখ মানুষের তথ্য নিয়ে চলমান এক গবেষণায় উঠে আসে, দিনে অন্তত ৩ কাপ কফি পান, হৃদরোগসহ অনেক জটিল রোগের সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে পারে।

কফির ক্যাফেইন উপাদানটি মানুষের সতেজতা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে খুবই কার্যকর। হার্ভাড স্কুল অফ পাবলিক হেলথ, তাদের পত্রিকা 'দ্য ওর্য়াল্ড জার্নাল অফ বায়োলজিক্যাল স্যাইকিয়াট্রি'র এক গবেষণা বলেছে, যেসব মানুষ প্রতিদিন কফি পান করেন তাদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা কম থাকে। কফি মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।

ছবি: সংগৃহীত

অতিরিক্ত ক্যাফেইন আসক্তি ক্ষতিকর

এক কাপ কফিতে প্রায় ৬০-৭০ মিলিলিটার ক্যাফেইন থাকে। এই ক্যাফেইন উপাদানটি যেমন স্বাস্থ্যের উপকারে আসে তেমনি ক্ষতিও করে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন পানে ব্যক্তি মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। যেমন কফির প্রতি আসক্তি থাকলে ব্যক্তির মাঝে দুশ্চিন্তা, বিরক্তিভাব, রাগ, নিদ্রাহীনতা, জড়তা, প্যানিক অ্যাটাকের মত মানসিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

এছাড়াও ক্যাফেইন মস্তিষ্কের অ্যাড্রিনালিন হরমোনের লেভেল বাড়িয়ে দেয়। যার কারণে কফির প্রতি ভালোবাসা ধীরে ধীরে আসক্তিতে পরিণত হয়। যত দিন যায় শরীরে কফির চাহিদা বাড়তে থাকে। অন্যান্য নেশাদ্রব্যের মতই কফি না পেলে শরীর নানাভাবে তার জানান দিতে থাকে। যেমন- প্রতিদিনের চাহিদা পূরণ না হলে শরীরে ঝিমঝিম ভাব, মাথাধরা, মাথা ব্যথা, চোখের চারপাশে ব্যথা, দুর্বলতা অনুভব হয়। তাছাড়া যাদের গ্যাস্টিক বা হজমজনিত সমস্যা আছে তাদের জন্য কফি খুবই ক্ষতিকর।

অনেকেই ঘুম কমাতে বা শরীর চাঙ্গা করতে নিয়মিত কফি পান করে থাকেন। ভুলে গেলে চলবে না, কফির এই কার্যক্ষমতা সাময়িক। কিন্তু শরীরের স্বাভাবিক গতি ঠেকানোর এই সাময়িক কৌশল, দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে। ক্যাফেইন উপাদানটি 'এডেনোসিন' নামক এক ধরনের মস্তিষ্কের উপাদানকে প্রভাবিত করে। হেনরি ফোর্ড হাসপাতালের স্লিপ ডিজঅর্ডার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের বিশেষজ্ঞ টিমোথি রোহার্স বলেন, 'স্বাভাবিক ঘুম না হলে মস্তিষ্কে এই এডেনোসিনের মাত্রা বেড়ে যায়।' যার ফলে অতিরিক্ত কফি পানের কারণে ব্যক্তি ইনসমনিয়াসহ অন্যান্য জটিলতায় পড়তে পারেন।

ক্যাফেইন আসক্তি দূর করবেন যেভাবে

কফির প্রতি আসক্তি কমাতে প্রথমেই পানি পান করার পরিমাণ বাড়াতে হবে। সারাদিনে অন্তত ৬-৮ গ্লাস পানি পান করা জরুরি।

কফির বিকল্প হিসেবে হারবাল-টি অথবা ব্ল্যাক-টি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

খাদ্য তালিকায় শাকসবজি ও শস্য জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। খাদ্য তালিকায় মাংস, চিনি, ময়দা ইত্যাদির পরিমাণ কমিয়ে দেন।

ভিটামিন ও খনিজ লবণের ঘাটতি হতে দেবেন না। মাথাব্যথা, ঝিমুনি কমাতে বিটামিন সি, বি-কমপ্লেক্স ইত্যাদি বেশি করে খান। এগুলো এনার্জি বজায় রাখতেও বেশ কার্যকর।

তথ্যসূত্র:

 বিবিসি, হার্ভার্ড স্কুল, ন্যাশনাল কফি এসোসিয়েশন (ইউএসএ)

 

Comments

The Daily Star  | English

Constitution should be updated

Dr Kamal Hossain, emeritus president of Gono Forum, yesterday recommended updating the constitution.

22m ago