রংপুরে পৌঁছানো বিএনপি নেতা-কর্মীদের গুদামঘরে রাতযাপন

মধ্যরাতে রংপুর পৌঁছানো ঠাকুরগাঁওয়ের বিএনপি নেতা-কর্মীরা নগরীর উত্তম বানিয়াপাড়া এলাকায় অবস্থান নিয়ে একাধিক গুদামঘরে রাতযাপন করেন। তাদের কাউকে কাউকে খোলা আকাশ কিংবা গাছের নিচেও রাত কাটাতে দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত

রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের ১ দিন আগে শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়েছে পরিবহন ধর্মঘট। তার আগেই বৃহস্পতিবার রাত থেকে রংপুরে আসতে শুরু করেছেন আশপাশের জেলা-উপজেলার দলীয় নেতা-কর্মীরা।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঠাকুরগাঁও থেকে অন্তত ৮ হাজার নেতা-কর্মী রংপুর পৌঁছান। নগরীর উত্তম বানিয়াপাড়া এলাকায় অবস্থান নিয়ে একাধিক গুদামঘরে রাতযাপন করেন তারা। এছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন।

আজ শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে রংপুর শহরের উত্তম বানিয়াপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার কয়েকটি ধান ও ভুট্টা রাখার গুদামের ভেতর বিছানার চাদর ও পাটের বস্তা বিছিয়ে গাদাগাদি করে শুয়ে আছেন নেতা-কর্মীরা। কেউ কেউ গুদামের সামনে গাছের নিচে বস্তা বিছিয়েও শুয়েছেন। সম্মুখে খোলা মাঠে চুলা জ্বালিয়ে সবজি খিচুড়ি রান্না হচ্ছে তাদের জন্য।

ঠাকুরগাঁও থেকে আসা বিএনপি নেতা-কর্মীদের জন্য খোলা মাঠে সবজি খিচুড়ি রান্না হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

ঠাকুরগাঁও থেকে আসা নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, বাস বন্ধের ঘোষণা যে আসবে, সেটা তারা আগেই জানতেন। তাই জেলার নেতারা সমাবেশের ২ দিন আগেই রংপুর পৌঁছানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। তারা সবাই বিছানার চাদর ও কম্বলসহ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় নিয়ে এসেছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '(বৃহস্পতিবার) রাতেই আমরা প্রায় ৮ হাজার নেতা-কর্মী ঠাকুরগাঁও থেকে এসেছি। আরও ৫ থেকে ৭ হাজার লোক দুপুরের মধ্যে চলে আসবে। আমরা এসেছি বাস, ট্রাক, পিকআপ ও মোটরাইকেলে চড়ে। রাত ১২টার দিকে ঠাকুরগাঁও থেকে রওনা দিয়ে আড়াইটা-৩টার দিকে রংপুরে এসে পৌঁছেছি।'

এ ছাড়া আসার পথে কোথাও কোথাও বাধা পাওয়ার অভিযোগও করেন এই বিএনপি নেতা।

এখানে অবস্থান নেওয়া একাধিক নেতা-কর্মী জানান, রাতে আসার পথে খানিকটা ভয়-আতঙ্ক কাজ করলেও রংপুরে পৌঁছানোর পর তাদের সে ভয় কেটে গেছে।

উত্তম বানিয়াপাড়া এলাকাতেই অবস্থান নেওয়া কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে আসা বিএনপি কর্মী আব্দুল আজিজের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথমে তার গ্রাম প্রায় ৫ কিলোমিটার হেঁটে উলিপুর পর্যন্ত আসেন তিনি। পরে অটোতে চড়ে রংপুরে পৌঁছান সমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্য।

গতকাল বৃহস্পতিবার মহাসড়কে নসিমন, করিমন ও থ্রি হুইলারসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধ এবং রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কে 'প্রশাসনিক হয়রানি' বন্ধের দাবিতে আজ শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ধর্মঘটের ডাক দেয় রংপুর জেলা মটর মালিক সমিতি।

এই ধর্মঘটের আওতায় রংপুর জেলার সব রুটে বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ আছে।

এর আগে গত ২২ অক্টোবর খুলনার বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগেও সেখানকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা একই দাবিতে বাস ধর্মঘটের ডাক দেন। এতে ২ দিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় গণসমাবেশমুখী নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

পরিবহন মালিক সমিতির ডাকে বাস ধর্মঘটের ঘটনা ঘটেছিল ১৫ অক্টোবর বিএনপির ময়মনসিংহের বিভাগীয় গণসমাবেশের আগেও। 

এ দফায় রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশটি সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সমাবেশে আসতে নেতা-কর্মীদের বাধা দিতে সরকারই এই ধর্মঘট ডেকেছে। আমরা আগেই জানতাম যে এই ধরনের একটি চক্রান্ত করা হবে।'

তবে দলের কেন্দ্রীয় এই নেতা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, 'আশপাশের জেলার নেতা-কর্মীদের অনেকেই এরমধ্যে রংপুরে চলে এসেছেন। আগামীকাল (শনিবার) সকাল ১১টার মধ্যেই সমাবেশস্থল পূর্ণ হয়ে যাবে।'

এর পাশাপাশি এ জেড এম জাহিদ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, 'রংপুরের দিকে আসতে থাকা বিএনপি নেতা-কর্মীদের কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ক ও দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে বাধা দেওয়া হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Nahid warns against media intimidation, vows stern action

The government will take stern action against those trying to incite violence or exert undue pressure on the media or newspapers, said Information Adviser Nahid Islam today

57m ago