ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’র প্রভাবে খুলনায় ভারী বর্ষণ

খুলনা বৃষ্টি
ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’র প্রভাবে খুলনায় ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। মহানগরীর খালিশপুর মুজগুন্নি এলাকা থেকে ছবিটি তোলা। ২৪ অক্টোবর ২০২২। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাং'র প্রভাবে খুলনা ও এর আশেপাশে জেলাতে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। বাতাসের তীব্রতাও ধীরে ধীরে বাড়ছে।

ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবাসী। ষাটের দশকের বেড়িবাঁধগুলো দুর্বল ও সংস্কারহীন থাকায় ঘূর্ণিঝড়ের জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা থেকে যায়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি এড়াতে জেলায় ৪০৯ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দাকোপে ১১৮, বটিয়াঘাটায় ২৭, কয়রায় ১১৭, ডুমুরিয়ায় ২৫, পাইকগাছায় ৩২, তেরখাদায় ২২, রূপসায় ৩৯, ফুলতলায় ১৩ ও দিঘলিয়ায় ১৬টি।

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রণজিৎ কুমার সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, '৪০৯ আশ্রয়কেন্দ্রে আগতদের জন্য শুকনো খাবার, চাল ও টাকা বরাদ্দ আছে। আমরা সব প্রস্তুতি নিয়েছি। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ সোমবার দুপুর ২টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভা করা হবে।'

খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যৈষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইতোমধ্যে খুলনাসহ উপকূলীয় এলাকায় সিত্রাংয়ের প্রভাব শুরু হয়েছে। কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে এর তীব্রতা বাড়বে।'

খুলনায় বৃষ্টি
ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’র প্রভাবে খুলনায় বাতাসের তীব্রতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২৪ অক্টোবর ২০২২। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

পানি উন্নয়ন বোর্ড (দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল) অ্যাডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম তাহমিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর পানির উচ্চতা স্বাভাবিক চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বৃদ্ধি পেতে পারে। আশঙ্কা করছি, সকাল ১০টার দিকে নদীতে জোয়ার আসবে। তখন যদি বাতাসের তীব্রতা থাকে তাহলে কোথাও কোথাও বাঁধ উপচে পানি ঢোকার সম্ভাবনা আছে।'

তবে এখনো পর্যন্ত বাঁধ ভাঙার সংবাদ পাওয়া যায়নি, বলে তিনি জানান।

খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের কয়েকটি এলাকা এর আওতায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২ বিভাগের আওতায় প্রায় ৭৮০ কিলোমিটার, খুলনা জেলায় ৫২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে যা ১৯৬০ এর দশকে তৈরি। এরপর এখানকার এই বেড়িবাঁধগুলো আর সংস্কার করা হয়নি। এসব বাঁধ এখন ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কা আর সামাল দিতে পারছে না। জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তার রিং বাঁধ দিয়ে কোনো রকমে টিকিয়ে রাখা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো।

খুলনার দাকোপ উপজেলার কালাবগী গ্রামের বাসিন্দা আসলাম শেখ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিটি ঝড়ের সময়ই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। আমাদের গ্রামের ২ পাশেই নদী। বিশেষ করে, শিবসা নদীর বড় ঢেউ আমাদেরকে আতঙ্কিত করে তোলে।'

'এই গ্রামের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ শিবসা নদীর কারণে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র নেই।'

'নদীতে এখনো জোয়ার আসেনি। সকাল ১০টা বা সাড়ে ১০টার দিকে জোয়ার আসবে। তখন শিবসা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে,' যোগ করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, খুলনার দাকোপ উপজেলার ৩২ নম্বর পোল্ডারের ৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার ও ২ কিলোমিটার নদীশাসনের কাজ গত জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। সেই কাজ শেষ হওয়ার আগেই আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এখন একই বাঁধ সংস্কারে প্রায় ১৫২ কোটি টাকার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে।

খুলনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পটি ২০১৩ সালের দিকে সার্ভে হয়েছে। তখন ২ কিলোমিটার নদীশাসনের কথা বলা হয়েছে, যা এরই মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু, এই সময়ের মধ্যে নদীর গতি-প্রকৃতির পরিবর্তন হয়েছে। ফলে আরও ৬ কিলোমিটার জায়গা নদীশাসনে আনা প্রয়োজন।'

'এ বিষয়ে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এতে প্রায় ১৫২ কোটি টাকা ব্যয় হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Next step after reply from Delhi

Dhaka will send a reminder letter to New Delhi if the Indian government does not respond to the diplomatic note sent on Monday regarding the extradition of deposed Prime Minister Sheikh Hasina.

56m ago