সমাবেশ শেষে যেভাবে উধাও হয়ে গেল পরিবহন ধর্মঘটের দাবি

দুই দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে খুলনায় চালু হয়েছে গণপরিবহন। যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলা উপজেলার গাড়ি। খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা কেডিএ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে শনিবার রাতে তোলা ছবি। ছবি: হাবিবুর রহমান/ স্টার

মহাসড়কে অবৈধ তিন-চাকার যানবাহনের চলাচল বন্ধে খুলনাবাসীকে দুই দিন ধরে জিম্মি করে ধর্মঘট পালন করেছেন পরিবহন নেতারা। কিন্তু বিএনপির বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শেষ হতেই তাদের দাবিও উধাও হয়ে গেছে।

মজুরি বাড়ানোসহ ১০ দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে গিয়েছিল খুলনার লঞ্চ শ্রমিকদের সংগঠন। পিছিয়ে ছিল না ইঞ্জিনচালিত নৌকার মালিকরাও। হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয় রূপসার খেয়াঘাট। তাদের দাবি ছিল, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় খেয়া পারাপারে যাত্রীপ্রতি এক টাকা ভাড়া বাড়াতে হবে।

নিজেদের মধ্যে সম্পর্কবিহীন এই তিন সংগঠন খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে ধর্মঘট শুরু করে।

কিন্তু কোনো দাবি পূরণ না হলেও সমাবেশ শেষ হওয়া মাত্রই রাস্তায় বাস চলতে শুরু করে। লঞ্চ ও নৌকায় যাত্রী পরিবহন শুরু করা হয়। দাবি পূরণ তো দূরের কথা, সংগঠনগুলো সরকারের কারও সঙ্গে আলোচনাও করতে যায়নি। সরকারও তাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার কোনো আশ্বাস দেয়নি।

আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, বিএনপির সমাবেশ পৌনে ৬টায় শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই আন্দোলন থেকে সরে আসে সংগঠনগুলো। এর পর এক ঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।

ধর্মঘটের কারণে সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হলেও সমাবেশ শেষে তারা নির্বিঘ্নে ফিরে যেতে পেরেছেন। অন্তত এই কারণে হলেও পরিবহন সংগঠনগুলো বিএনপির ধন্যবাদ পেতেই পারে।

যাত্রীদের জিম্মি করে পরিবহন ধর্মঘট এবারই প্রথম ছিল না। ধর্মঘট শুরু হলে সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাও অতীতে ঘটেছে। পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের সঙ্গে সরকারের মন্ত্রী আমলাদের দফায় দফায় বৈঠক চলে।

কিন্তু এবার সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ ধর্মঘটকারীদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়নি। তারা কি আগে থেকেই জানত ধর্মঘট দীর্ঘায়িত হবে না?

আরেকটি আশ্চর্য ব্যাপার হলো, ইঞ্জিন চালিত নৌকার মালিকরা উপলব্ধি করলেন পুরোনো ভাড়ায় খেয়াপার করা সম্ভব না তখন তারা শুধু খুলনামুখী যাত্রীদের পারাপার বন্ধ করলেন। বিশ্ব বাজারে তেলের উচ্চ দাম খুলনা থেকে বাইরের দিকে যাওয়া যাত্রীদের পরিবহনে কোনো প্রভাব ফেলল না। তারা পুরোনো ভাড়ায় কোনো আপত্তি না করে প্রসন্নচিত্তে খুলনা থেকে বাইরে যাওয়া যাত্রীদের পরিবহন করলেন।

সমাবেশের আগে দুই দিন ধরে বিএনপি অভিযোগ করেছে, তাদের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বার বার বলেছেন এরকম কিছু তারা জানেন না।

বিএনপির অভিযোগের ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ধর্মঘট ডেকেছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠন। সরকার তাদের ধর্মঘট করতে বলেনি।

বিএনপিকে সমাবেশ করার জন্য সরকার প্রশাসনিকভাবে সহযোগিতা করছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

একই দিনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে খুলনায় গণপরিবহন বন্ধ আছে।

ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলনে, 'তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদেরকে কোনো দাবির কথা জানায়নি। বিআরটিএ ধর্মঘটের ব্যাপারে জানত না।'

এর আগে গত ১৫ আগস্ট ময়মনসিংহে বিএনপির সমাবেশের আগেও একই ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাস মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনগুলো হঠাৎ ধর্মঘট শুরু করেন। কিন্তু বাস্তবে সেরকম কিছু না ঘটায় খুলনার পরিবহন মালিকরা নতুন কারণ দেখিয়েছে। তারা ব্যাটারিচালিত তিন-চাকার যানবাহন বন্ধের দাবি তোলেন।

আগামী ২৯ অক্টোবর রংপুরের সমাবেশের আগে সেখানকার পরিবহন মালিকরা যদি একই রকম কিছু করেন সেটা কি কাকতালীয় হবে?

 

Comments

The Daily Star  | English

Panic grips NBR officials

The relief that followed the end of a disruptive strike by tax officials at the National Board of Revenue has quickly given way to anxiety and regret, as the government started a clampdown on those involved.

12h ago