বাজার থেকে চিনি ‘উধাও’

চিনি। ছবি: স্টার

রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার বাজারে দেখা দিয়েছে চিনির সংকট। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২ দিন থেকেই এ সংকট চলছে।

কারওয়ান বাজারের কোনো খুচরা দোকানদার চিনি বিক্রি করছেন না। এমনকি পাইকারি দোকানেও চিনি পাওয়া যাচ্ছে না।

আজ শুক্রবার সরেজমিনে কারওয়ান বাজারের অন্তত ২০টি দোকানে দেখা যায়, কোনো বিক্রেতা চিনি বিক্রি করছেন না। ক্রেতারা দোকানে দোকানে ঘুরেও চিনি পাচ্ছেন না।

কয়েকজন দোকানদারকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, তাদের কাছে চিনি নেই।

তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক দোকানদার বলেন, 'সরকার খুচরা চিনির দাম প্রতি কেজি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমাদের কেনা দাম এর থেকেও বেশি। আর বেশি দামে বিক্রি করলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে জরিমানা করা হচ্ছে। এ কারণে কেউ চিনি বিক্রি করছে না।'

আরেক দোকানদার বলেন, 'আমার কেনা পড়ে প্রতি কেজি ১০০ টাকারও বেশি। আমি তো আর ৯০ টাকায় বিক্রি করতে পারব না। তাই চিনি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি।'

'আমরা পাইকারি বাজার থেকেও চিনি পাচ্ছি না। তারা বলছে বাজারে চিনির সরবরাহ কম। ভোক্তা অধিকারের জরিমানার ভয়ে অনেকই চিনি বিক্রি করছে না', বলেন তিনি।

পুরো কারওয়ান বাজার ঘুরে মাত্র ১টি দোকানে চিনি চোখে পড়ে এই প্রতিবেদকের।

সেই দোকানের বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একমাত্র নিয়মিত কিছু ক্রেতা ছাড়া চিনি বিক্রি করছি না। তবে কেউ যদি অন্যান্য জিনিসপত্র কেনেন, তাহলে তাদেরকে ১-২ কেজি চিনি দেই। আমার কেনা পড়েছে ১০০ টাকার বেশি। আমি তো আর ক্ষতি করে চিনি বিক্রি করতে পারি না।'

কারওয়ান বাজারে চিনির পাইকারি বিক্রেতা মেসার্স বেঙ্গল অয়েলের স্বত্বাধিকারী মো. মহিউদ্দিন বলেন, 'আমরা কল থেকে চিনি পাই না। আগে যেখানে ১ হাজার বস্তা পেতাম, এখন পাই ১০০ বস্তা। মিল থেকে বলা হচ্ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে তারা উৎপাদন করতে পারছে না। এর জন্য সরবরাহ কম। সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় মিল মোকামসহ সব জায়গায় দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। আমাদের পাইকারি কেনা পড়ছে প্রতি কেজি প্রায় ১০১ টাকা। অন্যান্য খরচসহ প্রতি কেজিতে খরচ আসে ১০২ টাকার মতো। কিন্তু সরকারতো নির্ধারণ করে দিয়েছে ৯০ টাকা কেজি। কেউ তো আর ক্ষতি করে চিনি বিক্রি করবে না।'

তিনি আরও বলেন, 'কেউ বেশি দামে চিনি বিক্রি করলে ভোক্তা অধিদপ্তর তাদের জরিমানা করছে। কিন্তু আমাদের যে বেশি দামে কেনা পড়ছে, সেই বিষয়টি তারা বুঝছে না। ভোক্তা অধিদপ্তরের জরিমানা বন্ধ হলে বাজারে চিনি পাওয়া যেতে পারে।'

মেসার্স লাকসাম স্টোর থেকে পাওয়া এক রশিদে দেখা যায়, মোকাম থেকে তাদের প্রতি কেজি চিনি কিনতে হয়েছে ১০০ টাকা ৪০ পয়সায়।

লাকসাম স্টোরের সত্ত্বাধিকারী আবুল হোসেন বলেন, 'ভোক্তা অধিদপ্তর মোকামে বা মিলে না গিয়ে আমাদের কাছে আসে। বেশি দামে বিক্রি করলে জরিমানা করে। একারণে অনেকেই চিনি বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছে।'

আজ কারওয়ান বাজার পরিদর্শনে আসেন ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাগফুর রহমান। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বাজারে চিনির সরবরাহ কম দেখছি। তবে কী কারণে সরবরাহ কম, তা বলতে পারব না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানাব।'

আপনারা কারওয়ান বাজারে এসে বেশি দামে বিক্রি করায় জরিমানা করছেন। কিন্তু মোকাম বা মিলে গিয়ে বেশি দামে বিক্রি বন্ধ করছেন না কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বিভিন্ন কলেও আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। আসা করছি দ্রুত চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।'

রাজধানীর ফার্মগেট, মিরপুর, নাখালপাড়া, মোহাম্মদপুর ও জুরাইনসহ কয়েকটি এলাকায় চিনির সংকট দেখা গেছে। কিছু কিছু দোকানে চিনি থাকলেও কেউ কেউ ১০০-১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

রাজধানীর মৌলভীবাজারের পাইকারি চিনি বিক্রেতা আবুল হাসেম ডেইলি স্টারকে জানান, 'গ্যাস সংকটের কারণে মিলে উৎপাদন কমে গেছে। যার প্রভাব সারাদেশে পড়েছে। ফলে বাজারে চিনির সংকট তৈরি হয়েছে। যাদের কাছে চিনি আছে, তারা একটু বেশি দামে বিক্রি করছে। তবে ১০০ টাকার নিচে কেউ বিক্রি করতে পারবে না। কারণ কেনাই বেশি পড়ছে।'

'এই পরিস্থিতিতে যদি ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান চালায় এবং ৯০ টাকার বেশি দরে কেউ চিনি বিক্রি করলে তাদের জরিমানা করে, তাহলে বাজারে চিনি বিক্রি একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে', তিনি যোগ করেন।

রাজধানীর জুরাইনের সাফকাত হাসান জানান, জুরাইনে অনেক দোকানেই চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। ২-১টি দোকানে পাওয়া গেলেও দাম চাচ্ছে ১০৫-১১০ টাকা কেজি। দোকানদাররা বলছেন বাজারে নাকি চিনি পাওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান অপু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের চিনির যে মোট চাহিদা, স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে তা মেটানো সম্ভব নয়। এর জন্য চিনি আমদানি করতে হয়। এখন ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে কিছু সমস্যা হচ্ছে। ফলে চিনি আমদানি কমেছে বলে শুনেছি। চিনি আমদানির বিষয়টি আগে আমরা দেখতাম। কিন্তু, এখন তা বেসরকারি খাতে চলে যাওয়ায় তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আমাদের কাছেও এখন চিনির মজুত কম আছে।'

আগামী মার্চ-এপ্রিলে রমজান শুরু হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এর আগেই এ সমস্যা দূর করতে না পারলে সংকট আরও বাড়বে।'

Comments

The Daily Star  | English

Jatrabari turns into battlefield as students clash

Students of three colleges clashed at Dhaka's Jatrabari today, turning the area into a battlefield

1h ago