রাত যত বাড়ে, ভিড় তত নাজিরাবাজারে

রাত যত বাড়ে, ভিড় তত নাজিরাবাজারে
রাত ১টার পরেও মানুষের ভিড় বাড়ছে কাজী আলাউদ্দিন রোডের হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

রাত ১২টার পর থেকে ভোজনরসিকদের আনাগোনা শুরু হয় পুরান ঢাকার এই গলিতে। গলির স্বল্প জায়গাজুড়ে রয়েছে বিরিয়ানি, কাবাব, সি-ফুড, চাইনিজ থেকে শুরু করে স্পেশাল চা, পান আর জুসের দোকান।

রাত যত গভীর হয় ততই ভিড় বাড়তে থাকে কাজী আলাউদ্দিন রোডে। নাজিরাবাজারের এই গলিতে গাড়ি রাখার জায়গা নেই। তাই মেইন রোডে গাড়ি পার্ক করে হেঁটে হেঁটেই পরিবার নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন ভোজনরসিকরা। বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দিতে আসেন বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

আলাউদ্দিন রোডের বিখ্যাত হাজী বিরিয়ানি খেতে এসেছেন মিরপুর ১০ এর বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম ও স্ত্রী নাসরিন আক্তার বেবি। তারা বলেন, রাতের বেলায় রাস্তায় যানজট থাকে না। তাই এই সময়টায় বের হওয়া সুবিধাজনক।

রাত যত বাড়ে, ভিড় তত নাজিরাবাজারে
রাত ১টার পরেও মানুষের ভিড় বাড়ছে কাজী আলাউদ্দিন রোডের খাবারের দোকানগুলোতে। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

এখানকার মূল আকর্ষণ হাজী বিরিয়ানি। ঐতিহ্যবাহী এই দোকানটি ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রেস্তোরাঁটির ম্যানেজার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই গলিতে যত খাবারের দোকান দেখতে পাচ্ছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো হাজী বিরিয়ানি। সবার আগে এই দোকানটি খোলা হয়েছিল। পরে ধীরে ধীরে পানের দোকান, জুসের দোকান ও অন্যান্য বিরিয়ানির দোকান খোলা হয়।'

সরেজমিনে রাত ১টায় হাজী বিরিয়ানির সামনে প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়। অনেকেই ৩০-৪০ মিনিট ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কথা জানান। কেউ আবার বসতে না পেরে খাবার পার্সেল করে নিয়ে যাচ্ছেন। এখানকার বিরিয়ানির দাম পাতা ২০০ টাকা ও স্পেশাল ৩০০ টাকা।

এই গলির অন্যান্য খাবারের দোকানের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর দান বিরিয়ানি হাউস, নান্না বিরিয়ানি, হানিফ বিরিয়ানি, বোখারী রেঁস্তোরা, মামা কাচ্চি অ্যান্ড কাবাব ঘর, বিসমিল্লাহ কাবাব ঘর, বাদশাহী কাবাব, মদিনা বিরিয়ানী ও রেস্তোরাঁ, খুশবু বিরিয়ানি হাউস, মামুন বিরিয়ানি হাউস, মদিনা হোটেলসহ প্রায় ৩৫টি হোটেল ও রেস্তোরাঁ।

সি-ফুডের কয়েকটি রেস্টুরেন্টে কেজি দরে অর্ডার নিয়ে কোরাল মাছ পরিবেশন করা হচ্ছে।

রাত যত বাড়ে, ভিড় তত নাজিরাবাজারে
রাত ১টার পরেও মানুষের ভিড় বাড়ছে কাজী আলাউদ্দিন রোডের খাবারের দোকানগুলোতে। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

পাশাপাশি আছে বিউটি লাচ্ছি, সোহেল আলি চা, জান ভাইয়ের আগুন ফুচকা, দিল্লির শাহী মিঠা পান, আল করিম জুসসহ ৫-৬টি চা, পান ও পানীয়ের দোকান। গভীর রাত পর্যন্ত এসব দোকানে আড্ডায় মেতে থাকেন তরুণরা।

এখানকার দোকানগুলোতে বিরিয়ানির দাম সর্বনিম্ন ১১০ টাকা ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

পূর্ব শেওড়াপাড়া থেকে পরিবার নিয়ে বিরিয়ানি খেতে এসেছেন ইফরান হোসেন ও তার স্ত্রী ময়না আক্তার। তারা বলেন, আমরা গাড়ি নিয়ে এসেছি। কিন্তু এই গলির ভেতরে গাড়ি রাখতে পারিনি। মেইন রোডে গাড়ি পার্ক করে হেঁটে এসেছি। তবে এখানকার পরিবেশ বেশ খারাপ। একদিকে ময়লার গাড়ি ঢুকেছে তো একপাশে বিশাল ডাস্টবিন। তবু রাতের বেলায় ঘুরতে ভালো লাগে। তাই পরিবার নিয়ে আসা।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের রেস্তোরাঁগুলোতে এই উৎসবের আমেজ প্রতি রাতের সাধারণ দৃশ্য।

বোখারী রেস্তোরাঁর এক কর্মী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ভিড় বাড়তে থাকে। এই এক গলিতে অনেক কিছুই পাওয়া যায়। রাতে যারা ঘুরতে পছন্দ করেন তারা আসেন। প্রায়ই আমাদের খাবারে টান পড়ে।'

'ছুটির দিনের আগের রাতে ভিড় অনেক বেশি থাকে', বলেন তিনি।

ছবি: রাত ১টার পরেও মানুষের ভিড় বাড়ছে কাজী আলাউদ্দিন রোডের হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

 

Comments

The Daily Star  | English

Govt at it again, plans to promote retirees

"A list of around 400 retired officials is currently under review though it remains unclear how many of them will eventually be promoted"

10h ago