‘ভাইয়েরা ম্যানার শেখাচ্ছিলেন’

অকথ্য ভাষায় বিষোদগার চলছে, ‘... তোর কী সমস্যা? এই সাদা শার্ট...তুই দাঁড়া। ওখানে ইট আছে, ইট দুটো হাতে লয়ে দাঁড়ায় থাক। এক পায়ে দাঁড়ায় থাকবি।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭-৮ জন সিনিয়র শিক্ষার্থী জুনিয়রদের বিষোদগার করছেন এমন একটি ভিডিও দ্য ডেইলি স্টারের কাছে পৌঁছেছে।

অকথ্য ভাষায় বিষোদগার চলছে, '... তোর কী সমস্যা? এই সাদা শার্ট...তুই দাঁড়া। ওখানে ইট আছে, ইটদুটো হাতে লয়ে দাঁড়ায় থাক। একপায়ে দাঁড়ায় থাকবি।' জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭-৮ জন সিনিয়র শিক্ষার্থী জুনিয়রদের বিষোদগার করছেন এমন একটি ভিডিও দ্য ডেইলি স্টারের কাছে পৌঁছেছে।

ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের গেস্টরুমে প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর এভাবে নির্যাতন করছেন সিনিয়র শিক্ষার্থীরা।

ভিডিওতে যা দেখা গেছে তার বাইরেও কান ধরে উঠবসসহ বিভন্ন ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানান নির্যাতনের শিকার হওয়া প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীরা।

গেস্টরুমে জুনিয়রদের বিষোদগার করছেন সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের। তারা বলেন, 'ভাইয়েরা আমাদের ম্যানার শেখাচ্ছিলেন।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, হলে থাকতে হলে এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। বাধ্য হয়ে কান ধরে ওঠবস করাসহ এমন বিষোদগার শুনতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন সেটা ধরেই নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, 'ভাইয়েরা আমাদের হলের সিনিয়র। হলে অনেক সিনিয়র থাকলেও তারা গেস্টরুমে ম্যানার শেখাতে আসেন না। আমি যতদূর জানি তাদের (যারা ম্যানার শিখিয়েছেন) প্রায় সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।'

এ ছাড়া ভিডিওটিতে যাদের গালি দিতে দেখা যাচ্ছিল তারা সবাই ছাত্রলীগকর্মী বলে নিশ্চিত করেছেন ওই হলের একাধিক শিক্ষার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

জুনিয়র শিক্ষার্থীদের বিষোদগার ও নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত কয়েকজনের মধ্যে একজন মার্কেটিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জায়েদ। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জুনিয়ররা গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে। সেজন্য আমাদের ওপর একটা চাপ আসে। তাই ওদের আমরা ডেকেছিলাম। তাছাড়া হলের খেলা আছে এজন্য ওদের কিছু বলার জন্য আমরা ডেকেছিলাম।'

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এসব যখন চলছিল, তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম। গেস্টরুম করাইছে ঠিকাছে কিন্তু সেখানে কি কোনো ধরনের অসঙ্গতি ছিল বলে জানা গেছে? যদি অসঙ্গতিপূর্ণ কিছু থাকে তাহলে আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি বিষয়টা।'

কানধরে উঠবস করানো শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না জানতে চাইলে ফোন কেটে দেন হাবিবুর রহমান।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদকে গতকাল রাতে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

গেস্টরুমে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আজ দুপুরে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাতে দুইটা কল আসছিল। বুঝছি যে কোনো কিছু ঝামেলা হয়েছে। পরে হলে কল দিয়েছিলাম, ওরা কিছু বলেনি। তোমার কাছ থেকে শুনলাম।'

তিনি আরও বলেন, 'এটা তো ছাত্রলীগের সেক্রেটারির হল। আমি বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে দেখব।'

গেস্টরুমে প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের ম্যানার শেখানো হয়, এ বিষয়ে কিছু জানেন কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, 'ম্যানার তো বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শেখার কিছু নেই। ম্যানার শেখানো শুরু হয়েছে? বাবা-মা কিছু শেখায় না ম্যানার!'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফিরোজ-উল-হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলব এবং অভিযোগের সত্যতা পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।'

গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাননি। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্টকে ফোন দিয়ে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান, উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম।
 

Comments

The Daily Star  | English
What constitutes hurting religious sentiments

Column by Mahfuz Anam: What constitutes hurting religious sentiments?

The issue of religious tolerance have become a matter of great concern as we see a global rise in narrow-mindedness, prejudice and hatred.

11h ago