টিসিবির পণ্য কালোবাজারি: বড়লেখায় ইউপি সদস্য ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য কিনতে ইউনিয়ন পরিষদে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় ছিলেন ক্রেতারা। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে ৪ শতাধিক ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রির পর ডিলার জানান পণ্য শেষ হয়ে গেছে।

এরমধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য এবং ওই ডিলার অপেক্ষমাণ ক্রেতাদের সামনেই ২০০ প্যাকেট পণ্য এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন। তাদের ২ জনের সহযোগিতায় গাড়ি ও রিকশায় করে এসব পণ্য সরিয়ে নিতে থাকেন ওই ব্যবসায়ী।

এতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা একটি রিকশা আটক করে বেশ কিছু পণ্য উদ্ধার করে। এ নিয়ে হাতাহাতিতে আহত হন গ্রাম পুলিশের এক সদস্য।

ঘটনাটি গত শুক্রবারের। ঘটনাস্থল মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইমরান আহমদ (৩৬) ও পণ্য ক্রয়কারী ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের (৩৫) বিরুদ্ধে বড়লেখা থানায় মামলা হয়েছে। তাদের ২ জনের বাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব হাতলিয়া গ্রামে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৩ জনকে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা বিনয় চন্দ্র দেব বাদী হয়ে এই মামলা করেন। তবে মামলায় ডিলার আতাউর রহমানের নাম নেই। তাকে কেবল কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ফরিদ উদ্দিন আজ সকালে মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নে টিসিবি পণ্যের নির্ধারিত উপকারভোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১২৭ জন। শুক্রবার ছুটির দিনে উপজেলা প্রশাসনকে না জানিয়েই টিসিবি পণ্য ইউনিয়ন পরিষদে বিতরণের জন্য নিয়ে যান ডিলার আতাউর রহমান। সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান, ২ জন ইউপি সদস্য ও ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে দুপুর থেকে পণ্য বিক্রির কাজ শুরু হয়।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লাইনে কার্ডধারী ক্রেতারা দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও ডিলার আতাউর রহমান পণ্য শেষ হয়ে গেছে জানিয়ে তাদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেন। এরমধ্যেই ইউপি সদস্য ইমরান আহমদের সহযোগিতায় মুদি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ২০০ প্যাকেট পণ্য পিকআপ ভ্যান ও রিকশায় তুলে নিয়ে গেলে অপেক্ষমাণ ক্রেতারা হট্টগোল শুরু করেন।

এ সময় অপেক্ষমাণ ক্রেতারা একটি রিকশা থেকে ১৭০ কেজি চিনি, ৩২ লিটার সয়াবিন তেল ও ৩৪ কেজি মসুর ডাল জব্দ করেন। এ নিয়ে চরম উত্তেজনা তৈরি হলে হাতাহাতিতে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে দায়িত্বরত শ্যামল বাগতি নামের গ্রাম পুলিশের এক সদস্য আহত হন। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এরমধ্যে ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ আজিজুল হক গ্রাম পুলিশের সহযোগিতায় ইউপি সদস্য ইমরান আহমদের কাছ থেকে ৫০ প্যাকেট পণ্য উদ্ধার করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ পুলিশ নিয়ে ব্যবসায়ী সাইফুলের বাড়িতে অভিযান চালান। কিন্তু সেখান থেকে অবশিষ্ট দেড়শ প্যাকেট পণ্য উদ্ধার করা যায়নি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ইমরান আহমদ বলেন, 'আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। পণ্য পাচার যদি হয়েও থাকে সেটা প্যানেল চেয়ারম্যান-১ আজিজুল হকের উপস্থিতিতে হয়েছে। ঘটনাটি আমাকে জানানোর পর আমি নিজে ৫০ প্যাকেট পণ্য উদ্ধার করে দিয়েছি।'

তবে ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান-১ আজিজুল হক বলেন, 'আমি সকাল সাড়ে ১১টায় ইউনিয়নে গিয়ে দেখি চেয়ারম্যান সাহেব বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আড়াইটা পর্যন্ত বিতরণ কাজে সহযোগিতা করি। এরমধ্যে চেয়ারম্যান চলে যান। যাওয়ার সময় চেয়ারম্যান আমাকে বলে যান, ''ইমরান মেম্বারের মাধ্যমে ২০০ প্যাকেট যাবে"। কার কাছে যাবে সেটা বলেননি।'

আজিজুল হকের ভাষ্য, 'এরপর চেয়ারম্যান ডিলারের সঙ্গে কথা বলে যান। এরমধ্যে অর্ধেকের মতো পণ্য বিতরণ হয়। তখন ব্যবসায়ী সাইফুল এসে আমাকে ১২৫ প্যাকেটের টাকা দিতে চান। আমি তখন তাকে ডিলারের সঙ্গে কথা বলতে বলি। পরে আমি ইউপি সদস্য ইমরানকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বাড়িতে খেতে যাই।'

এ বিষয়ে দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন বলেন, 'জরুরি কাজে বের হওয়ায় আজিজুল মেম্বারকে দায়িত্ব দিয়ে যাই আমি। কিন্তু পণ্য বিক্রির মূল দায়িত্ব ডিলারের। যার কার্ড আছে তাকে তিনি পণ্য দেবেন। ইমরান মেম্বার বললেই তো ডিলারের পণ্য দেওয়ার কথা না।'

ইমরান আহমদের মাধ্যমে ২০০ প্যাকেট পণ্য দিতে আজিজুল হককে দেওয়া নির্দেশনা প্রসঙ্গে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, 'এটা ঠিক নয়। মিথ্যা কথা।'

এ ব্যাপারে ইউএনও সুনজিত কুমার চন্দ মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডিলার আমাকে না জানিয়েই বন্ধের দিন পণ্য বিক্রি করেন। প্রাথমিকভাবে কালোবাজারে পণ্য বিক্রির প্রমাণ পাওয়ায় ইউপি সদস্য ও ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। ডিলারকে শোকজ করা হয়েছে। তদন্তে এর সঙ্গে জড়িত অন্যদের নামও উঠে আসবে।'

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago